রোদ থেকে সুরক্ষা পেতে যা করবেন
রোদের তাপমাত্রা বাড়ছে দিন দিন। ক্ষণে ক্ষণে মেঘ জমে ঈশান কোণে। মেঘ কেটে আবার গনগনে রোদ। ভর দুপুরের গরম হাওয়া শরীর অস্থির করে তুলে। এই রোদে বাইরে বের হলে এবং অনেকটা সময় রোদে থাকলে মানবদেহে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা বাহ্যিক কিংবা অভ্যন্তরীণ হতে পারে। তাই রোদের প্রভাব থেকে বাঁচতে আপনাকে নিতে হবে সামান্য প্রস্তুতি।
উত্তরোত্তর মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে। সকাল বা দুপুরে—যেকোনো সময় কাজের তাগিদে বাইরে বের হতেই হয়। কারণ রোদের নাগাল থেকে বাঁচতে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। তবে রোদের সাথে আপস নয়। কড়া রোদে শরীর ও ত্বকের সুরক্ষায় রোদচশমা, পানির বোতল, স্কার্ফ, টুপি আর সঙ্গে রাখুন একটা ছাতা। এখানেই শেষ নয়। রোদে ভালো থাকতে হলে আপনাকে বাইরে বের হওয়ার আগে আরও কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। সানস্ক্রিন ব্যবহার, ওয়েট টিস্যু সঙ্গে নেওয়া, হালকা সুতি পোশাক পরা এবং গোসলের সময় কিছুটা সচেতনতা।
লোকে বলে মেয়েরা নাকি ত্বকের ব্যাপারে সচেতন। হ্যাঁ, দীর্ঘ দিন সৌন্দর্য ধরে রাখতে মেয়েরা রোদের ব্যাপারে বেশ সচেতন। তবে ছেলেরাও এখন পিছিয়ে নেই সৌন্দর্যের প্রশ্নে। আসলে রোদ থেকে বাঁচতে অবহেলার সুযোগ নেই। কেননা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকে মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে ত্বকের রং কালো করে দেয়। প্রচণ্ড গরমে ঘাম হয়। ঘামাচি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণও হতে পারে এ সময়। ত্বকে লালচে ভাব দেখা দেয়। মুখের ব্রণ বেড়ে যায়। হাতে পায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়তে শুরু করে। বাহ্যিক এসব সমস্যার সাথে সাথে শরীরের অভ্যন্তরে রোদের খারাপ প্রভাব পড়ে। কড়া রোদে ডিহাইড্রেশন হয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘামে মাথাব্যথাসহ সর্দি-কাশি বেশি হয়। সাধারণত সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা থাকে বেশি।
এই রোদে বাইরে বের হওয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। রোদ থাক বা না থাক, বাইরে বের হওয়ার ১৫ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাজারে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর যুক্ত লোশন, ক্রিম, পাউডার, স্প্রে পাওয়া যায়। আপনার প্রয়োজন মতো ইউভিএ ও ইউভিভি প্রতিরোধক সানস্ক্রিন কিনে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ম্যাট ধরনের সানস্ক্রিন এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার-সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আর মিশ্র ত্বকের জন্য অল স্কিন টাইপ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। শুধু মুখে নয়, হাতে পায়ে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তার আগে পানিতে কয়েক ফোঁটা বেনজয়েল অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে গোসল করলে ঘামের দুর্গন্ধ হবে না এবং রোদে ত্বক কালচে হবে না। ওষুধের দোকানে পেয়ে যাবেন এই তেল। রোদে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়।
বাতাসের সাথে প্রচুর ধুলাবালি ঘুরে বেড়ায়। এসব ময়লা ত্বকে আটকে ব্রণ কিংবা রেশ হতে পারে। তাই সব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখুন। প্রতিদিন কয়েকবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ওয়েট টিস্যু দিয়েও মুখ পরিষ্কার করা যায়। গরমে বেশি করে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন আট থেকে দশ গ্লাস পানি একটু পর পর পান করা উচিত। এতে ডিহাইড্রেশন রোধ হবে এবং ত্বক ভালো থাকবে। গরমে শরীর সুস্থ রাখতে প্রচুর রসালো ফল আর সবজি খাওয়া উচিত। হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনার রোদচশমা যেন অবশ্যই শতভাগ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি রোধ করতে পারে, কেনার সময় সেদিকে নজর রাখুন।
বাইরে বের হলে ব্যাগে রাখা ছাতাটি ব্যবহার করতে আলসেমি করবেন না। ছেলেরা হ্যাটজাতীয় টুপি আর মেয়েরা স্কার্ফ পরতে পারেন। যাদের ত্বক পাতলা, বাইরে দীর্ঘ সময় থাকলে তাদের দুই ঘণ্টা পর পর নতুন করে ত্বকে সানব্লক লাগাতে হবে। কিছু ফেস পাউডার সানব্লকের কাজ করে। তবে দিনের রোদে তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করাই ভালো। এই রোদে ব্যবহূত প্রসাধনী মানসম্মত কিনা সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। রোদ থেকে ঘরে ফিরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। চাইলে টাটকা অথবা ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা টমেটো দশ মিনিট ত্বকে লাগাতে পারেন। ত্বক ভালো থাকবে। তবে রেশ রয়েছে যাদের ত্বকে, তারা শুধু ঠাণ্ডা পানি বা ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। ত্বক লালচে হয়ে জ্বালা করলে বরফ ঘষতে হবে। ত্বক ভালো রাখার জন্য সপ্তাহে এক থেকে দুই বার প্রাকৃতিক ফেশিয়াল প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।