Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মা-মেয়ের বন্ধুতে নারীত্বের বন্ধন

একজন নারী যখন থেকে তার নিজের ভেতর সন্তানের অস্তিত্ব টের পান তখন থেকেই তিনি তার সন্তানের সবথেকে কাছের বন্ধু হিসেবেই প্রতিটা মুহুর্ত অনুভব করতে থাকেন। মা এবং সন্তানের বন্ধুত্ব পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মজবুত, আস্থাশীল এবং স্থায়ী। আর এই বন্ধুত্বকে অস্বীকার করার শক্তি, সাহস কিংবা ক্ষমতাও কারো নেই।

প্রসবের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মায়ের ভেতরে বেড়ে উঠতে থাকা শিশুর সঙ্গে মা সবটা জুড়ে থাকেন। এসময় একজন মা কখনোই নিজেকে একা ভাবেন না। মায়ের যত মনের কথা আছে তা আর কাউকে না বলতে পারলেও তিনি কিন্তু ঠিক তার ভেতরে লালন করতে থাকা শিশুর সঙ্গে বলেন নিশ্চিন্তে। তার সঙ্গেই সুখ, দুঃখের মুহুর্তগুলি ভাগ করেন। কারন তিনি অনুভব করেন তার সন্তানই তার সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়ে উঠছে। এই কঠিন পৃথিবীতে তিনি যেমন তার সন্তানকে বুঝবেন সন্তানও তাকে তার মত করেই বুঝবে।
আর জন্মের পর লিঙ্গ ভেদে তো ছেলে সন্তান, মেয়ে সন্তানের বিষয়টি চলে আসেই। সেক্ষেত্রে মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধুত্বের জায়গা একই থাকলেও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী একজন মা -ছেলের এবং মা-মেয়ের বন্ধুত্বের বন্ধনে ভিন্নতা থাকে।
সত্যিকার অর্থে প্রকৃতিগত ভাবে এবং সামাজিক ভাবে মা -মেয়ের বন্ধুত্বের যত্ন কিংবা নার্সিং যাই বলা হোক সেটা থাকতেই হবে। আসলে মা – মেয়ে র বন্ধন যত বেশি দৃঢ় থাকবে সমাজে নারীর অবস্থান ততটাই মজবুত হবে।

মা সেই মানুষ যিনি নিঃস্বার্থ ভাবে সন্তানকে শিশু কাল থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ভালো মন্দ পদক্ষেপ চিনিয়ে দিতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে মেয়ে সন্তানের পাশে তো মা তারই প্রতিবিম্ব। জীবন চলার পথে অনুকূল -প্রতিকূলে মা তার মেয়ের বন্ধু না হয়ে যদি কেবল একজন অভিভাবক হন তাহলে মেয়েটি বড় দুর্ভাগা।

সমাজ বাস্তবতায় একজন মেয়েকে শিশু থেকে একজন নারী হয়ে উঠতে গেলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে যে দেয়াল পার হতে হয় সেক্ষেত্রে মাকে বন্ধু হিসেবে পাওয়াটা জরুরী। আর তেমনি এটাও ভুলে গেলে চলবে না মেয়ে যেমন মাকে সবক্ষেত্রে একজন আস্থাশীল বন্ধু ভাবতে চায় তেমনি মেয়েকেও মা তার নিশ্চিত জীবনের বন্ধু হিসেবে পাশে চায়।

দেখা যায়, বয়সের যে পর্যায়েই থাকুক না কেন মা -মেয়ের বন্ধুত্বের মধ্যে কিন্তু পর্যায় ভেদে একটা বৃত্তাকার চলতেই থাকে। কখনো মেয়ের বন্ধু মা আবার কখনো মায়ের বন্ধু মেয়ে।

একজন মা তার মেয়ের শিশু বয়স থেকে বয়ঃসন্ধিকালের আগ পর্যন্ত যে ভাবে যত্নের সঙ্গে পাশে থাকেন তার থেকেও বেশি যত্ন এবং বন্ধু মন নিয়ে বয়ঃসন্ধিকালের সময় ও তার পরের সময় গুলোতে পাশে থাকা জরুরী। হয়তো অনেকেই থাকেন আবার তা অনেকে বুঝতেই পারেননা কিংবা খেয়ালই করেননা।

মেয়েটি বড় হতে হতে যে পর্যায় গুলোর মুখোমুখি হয় সে গুলো সম্পর্কে যদি তার মা সহজ ভাবে ভালো মন্দের বিভেদটা বুঝিয়ে দিতে পারে তাহলে মেয়েটি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে সহজেই। কারন যা কিছু হোক সে জানে তার মা তার বন্ধু। আর এই সুন্দর ভাবনাটাই তাকে অপ্রতিরোধ্য করে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। আর যদি এই প্রতিবন্ধকতার সমাজে তার আস্থাশীল জায়গায় মাকেও না পায় তাহলে আসলে সুন্দর ভাবে বিকশিত হওয়াটা তার জন্য খুব সহজ হবেনা। এটাই স্বাভাবিক।

একজন মেয়ে শিশুর যখন শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয় সেটি কিন্তু সবার আগে তার মায়েরই চোখে ধরা পড়ে। আর এসময় শিশুটি নিজের পরিবর্তনে অস্বাভাবিক ভাবনায় পরতে থাকে যখন সে খেয়াল করে তার প্রতি ভিন্ন দৃষ্টি দিচ্ছে তারই পরিচিত গন্ডি। আর তখন সে খুঁজতে থাকে আস্থাশীল বন্ধুত্ব। আর মা যদি তার সেই দৃষ্টিতে ভরসা হয়ে না উঠতে পারেন তাহলে মা -মেয়েই নয় শুধু মা এবং সন্তানের বন্ধনেও ভঙ্গুরের বীজ বপন শুরু হতে থাকে।

ঘর থেকে বারান্দা, স্কুল থেকে খেলার মাঠ যে কোন স্থানের কথা মেয়েটি নির্ভয়ে বলতে চায় তার সবচেয়ে আপনজনকেই। আর সেই নির্ভয়ের মানুষটি অবশ্যই মা হবে এটিই থাকে কামনা। যদি মা তার সেই বন্ধুটি হয়ে উঠতে না পারেন তাহলে সে আজীবন গুমরে কাঁদে।

অনেক মা হয়তো বুঝতেও চাননা তার মেয়ের ভেতরে কোনো গল্প আছে কিনা, খুব স্বাভাবিক নিয়মে খাওয়া, পড়া, পোশাক, শাসন, আদর দিয়ে হয়তো বড় করছেন আর দশজনের মতই কিন্তু মেয়ের চোখে নিজেকে আস্থাশীল বন্ধুটি হয়ে উঠার কথা খেয়ালই করেননি অগোচরে।

এতে যে কতটা সর্বনাশ ডাকছেন ওই মেয়ে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তা হয়তো বুঝতে বুঝতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

অনেক সময় স্কুল কলেজে পড়ুয়া মেয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার মত অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এই ঘটনার পেছনে বাহ্যিক কারন যাই থাকুক তাদের সবচেয়ে আপনজন মা যদি বন্ধুত্বের জায়গায় থাকতেন তাহলে হয়তো সন্তানটি তার আত্মহত্যা করার আগে মায়ের সঙ্গে একবার কষ্ট কিংবা সমস্যার কথা গুলো বলতে পারতো।

মায়ের প্রতি অভিমান করে, মা কে ভুল বোঝে কোনো মেয়ে যখন আত্মহত্যা করে তখন মায়ের দোষ না হলেও কিন্তু দোষ র চলেই আসে। কারন বোঝাই যায় সেখানে বন্ধুত্বের কোন বন্ধন তৈরি হয়নি কেবল মা সন্তানের সম্পর্ক ছাড়া।

মেয়ের বড় হওয়ার পর জীবনে স্বামী, সন্তান, সংসার, শশুর বাড়ি, কর্মজীবন যাই আসুক না কেন তার মনের গভীরে মায়ের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতার ও ভাবনার মিলটা ভাগ করে নিতে চায়। আর তখনও যদি মা কে বন্ধু হিসেবে পাশে না পায় তাহলে সে হতাশই হয়। তেমনি মাও কিন্তু মেয়ের সঙ্গে তার ভাবনার মিলন দেখতে চাইলে মেয়েকেও মায়ের প্রতি বন্ধুর হাত বাড়ানো উচিত।

আমাদের সমাজেই যেহেতু মেয়েদের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা, প্রস্তুতি, লড়াই, নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই মেয়ে থেকে নারী হয়ে উঠতে হয় তাই নারীর জন্য নারীর বন্ধুত্বই সবচেয়ে বড় শক্তি। আর সেটির ভিত্তি হতে পারে মা এবং মেয়ে র বন্ধুত্বের মাধ্যমেই।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ