Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশঙ্কা দৃশ্যমান করে তুলছে শহরের ডিজিটাল যমজ

সুইডেনের গথেনবর্গ শহরে ভবিষ্যতের এক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, যে মাত্র পাঁচ মিনিটে বর্গ মিটার প্রতি ১৫ লিটারের বেশি বৃষ্টিপাত ঘটছে৷ নিকাশি ব্যবস্থা যথেষ্ট দ্রুত কাজ করতে পারছে না৷ সুইডেনের এই শহরে প্রবল বৃষ্টিপাত কি কোনো একদিন সত্যি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে?

সৌভাগ্যবশত এটা শুধু একটা সিমুলেশন৷ শহরের মানুষের কাছে বিপর্যয়ের এমন সম্ভাবনা কল্পনার বাইরে৷ তবে পৌর কর্তৃপক্ষ এমন জরুরি অবস্থার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ গথেনবুর্গের কেন্দ্রস্থলে বন্যা বিরল ঘটনা নয়৷ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে৷ শহরের ডেপুটি মেয়র কারিন প্লেইয়েল মনে করেন, ‘‘আমাদের এমন এক সরকারের প্রয়োজন, যা এই সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়৷ কারণ আমরা নিজেরা এটা করতে পারি না৷ কোনো একক পৌরসভার পক্ষে এত বড় ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়৷ তাছাড়া ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইয়োটে নদীর তীরে অন্যান্য পৌরসভার উপরেও আমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই৷”

এমন সম্ভাব্য পরিস্থিতি বাস্তবসম্মতভাবে দৃশ্যমান করে তুললে সঠিক ব্যক্তিরা মনোযোগ দেবেন ও পদক্ষেপ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷

সে কারণে খাঁটি তথ্যের ভিত্তিতে গথেনবর্গের এক ডিজিটাল সংস্করণ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ১৯৮০-র দশকে মাটির অবস্থা, পানি, নিকাশি ব্যবস্থা, রাজপথ ও রেল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়৷

প্রত্যেকটি গাছের বয়স ও উচ্চতা এক কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে রাখা হয়েছে৷ ডিজিটাল টুইন গথেনবর্গের এরিক জান্সসোন বলেন, ‘‘আমরা শহরের মধ্যে সব তথ্যের নাগাল পাই৷ তার কিছু অংশ ‘ওপেন ডেটা’ হিসেবে উন্মুক্ত রয়েছে৷”

সেই তথ্যের ভিত্তিতে এরিক জান্সসোনের টিম সব খুঁটিনাটী বিষয়সহ শহরের ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করেছেন৷ এমনকি ছাদের আকারও নিখুঁত রাখা হয়েছে৷ অলিগলিও সঠিক জায়গায় রয়েছে৷ এরিক জান্সসোন জানান, ‘‘এই প্যারামেট্রিক মডেলিং-এর সঙ্গে কাজ করে আমরা শহরের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন ভাবে দৃশ্যমান করে তুলতে পারি৷ ডিজিটাল টুইনের মধ্যে সেটা সত্যি খুব শক্তিশালী এক পদ্ধতি৷ শুধু প্যারামেট্রিক ভিসুয়ালাইজেশনের ভিত্তিতে এটা সম্ভব হচ্ছে৷”

সমুদ্রের স্তর আরো বাড়লে কী হবে, ইউনিভারজিয়াম সায়েন্স সেন্টার সেটা দৃশ্যমান করে তুলছে৷ সেইসঙ্গে গথেনবর্গের কেন্দ্রস্থলের সুরক্ষার জন্য কোন কোন পদক্ষেপ কাজে লাগতে পারে, তাও দেখা যাচ্ছে৷ মানচিত্রে হলুদ রেখাগুলিতে নীচু প্রাচীর থাকলে পানি আটকে রাখা সম্ভব৷ বাস্তবে এমন কিছু প্রাচীর সত্যি নির্মাণ করা হচ্ছে৷ সেই প্রাচীরের উচ্চতা আগেভাগেই নিখুঁতভাবে হিসেব করা হয়েছিল৷ বেড়ে চলা সমুদ্রস্তর থেকে শহরকে রক্ষা করার এটা একটা উপায়৷ ক্লাইমেট স্ট্র্যাটিজিস্ট লিসা একস্ট্র্যোম মনে করেন, ‘‘ডিজিটাল টুইন শহরের জন্য ভালো হতে পারে৷ কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন এবং আবশ্যক, তা দেখিয়ে দিতে পারে৷ আমার মতে, রাজনীতিক ও শহরবাসীদের কাছে এই অবস্থা দৃশ্যমান করে তুলতে এটা একটা ভালো টুল৷ ভবিষ্যতে গথেনবর্গে কী হতে পারে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে৷”

সমস্যাগুলি অজানা নয়৷ এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার পালা৷ প্রবল বৃষ্টিপাত হলে বিশেষভাবে তৈরি খোলা জায়গা দ্রুত পানি ধরে রেখে ধীরে ধীরে বার করে দিতে পারবে৷ শহরের ডেপুটি মেয়র কারিন প্লেইয়েল বলেন, ‘‘এই এলাকা ৫০০ ঘন মিটার পানি ধরে রাখতে পারে৷ প্রবল বৃষ্টিপাতের সময়ে সেখানে পানি জমা করে আশাপাশের ঘরবাড়ি ও অন্যান্য জায়গার সুরক্ষা সম্ভব৷”

ডিজিটাল টুইন ধারাবাহিকভাবে আরো উন্নত করা হচ্ছে৷ ভার্চুয়াল গথেনবর্গ ল্যাবে গবেষকরা আরো সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ যেমন ভার্চুয়াল সিটি ট্যুরের মাধ্যমে ইউজাররা গথেনবর্গ ঘুরে দেখতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে কার্বন ফুটপ্রিন্টও নামমাত্র হবে৷

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ