আশঙ্কা দৃশ্যমান করে তুলছে শহরের ডিজিটাল যমজ
সুইডেনের গথেনবর্গ শহরে ভবিষ্যতের এক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, যে মাত্র পাঁচ মিনিটে বর্গ মিটার প্রতি ১৫ লিটারের বেশি বৃষ্টিপাত ঘটছে৷ নিকাশি ব্যবস্থা যথেষ্ট দ্রুত কাজ করতে পারছে না৷ সুইডেনের এই শহরে প্রবল বৃষ্টিপাত কি কোনো একদিন সত্যি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে?
সৌভাগ্যবশত এটা শুধু একটা সিমুলেশন৷ শহরের মানুষের কাছে বিপর্যয়ের এমন সম্ভাবনা কল্পনার বাইরে৷ তবে পৌর কর্তৃপক্ষ এমন জরুরি অবস্থার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ গথেনবুর্গের কেন্দ্রস্থলে বন্যা বিরল ঘটনা নয়৷ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে৷ শহরের ডেপুটি মেয়র কারিন প্লেইয়েল মনে করেন, ‘‘আমাদের এমন এক সরকারের প্রয়োজন, যা এই সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়৷ কারণ আমরা নিজেরা এটা করতে পারি না৷ কোনো একক পৌরসভার পক্ষে এত বড় ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়৷ তাছাড়া ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইয়োটে নদীর তীরে অন্যান্য পৌরসভার উপরেও আমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই৷”
এমন সম্ভাব্য পরিস্থিতি বাস্তবসম্মতভাবে দৃশ্যমান করে তুললে সঠিক ব্যক্তিরা মনোযোগ দেবেন ও পদক্ষেপ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
সে কারণে খাঁটি তথ্যের ভিত্তিতে গথেনবর্গের এক ডিজিটাল সংস্করণ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ১৯৮০-র দশকে মাটির অবস্থা, পানি, নিকাশি ব্যবস্থা, রাজপথ ও রেল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়৷
প্রত্যেকটি গাছের বয়স ও উচ্চতা এক কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে রাখা হয়েছে৷ ডিজিটাল টুইন গথেনবর্গের এরিক জান্সসোন বলেন, ‘‘আমরা শহরের মধ্যে সব তথ্যের নাগাল পাই৷ তার কিছু অংশ ‘ওপেন ডেটা’ হিসেবে উন্মুক্ত রয়েছে৷”
সেই তথ্যের ভিত্তিতে এরিক জান্সসোনের টিম সব খুঁটিনাটী বিষয়সহ শহরের ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করেছেন৷ এমনকি ছাদের আকারও নিখুঁত রাখা হয়েছে৷ অলিগলিও সঠিক জায়গায় রয়েছে৷ এরিক জান্সসোন জানান, ‘‘এই প্যারামেট্রিক মডেলিং-এর সঙ্গে কাজ করে আমরা শহরের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন ভাবে দৃশ্যমান করে তুলতে পারি৷ ডিজিটাল টুইনের মধ্যে সেটা সত্যি খুব শক্তিশালী এক পদ্ধতি৷ শুধু প্যারামেট্রিক ভিসুয়ালাইজেশনের ভিত্তিতে এটা সম্ভব হচ্ছে৷”
সমুদ্রের স্তর আরো বাড়লে কী হবে, ইউনিভারজিয়াম সায়েন্স সেন্টার সেটা দৃশ্যমান করে তুলছে৷ সেইসঙ্গে গথেনবর্গের কেন্দ্রস্থলের সুরক্ষার জন্য কোন কোন পদক্ষেপ কাজে লাগতে পারে, তাও দেখা যাচ্ছে৷ মানচিত্রে হলুদ রেখাগুলিতে নীচু প্রাচীর থাকলে পানি আটকে রাখা সম্ভব৷ বাস্তবে এমন কিছু প্রাচীর সত্যি নির্মাণ করা হচ্ছে৷ সেই প্রাচীরের উচ্চতা আগেভাগেই নিখুঁতভাবে হিসেব করা হয়েছিল৷ বেড়ে চলা সমুদ্রস্তর থেকে শহরকে রক্ষা করার এটা একটা উপায়৷ ক্লাইমেট স্ট্র্যাটিজিস্ট লিসা একস্ট্র্যোম মনে করেন, ‘‘ডিজিটাল টুইন শহরের জন্য ভালো হতে পারে৷ কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন এবং আবশ্যক, তা দেখিয়ে দিতে পারে৷ আমার মতে, রাজনীতিক ও শহরবাসীদের কাছে এই অবস্থা দৃশ্যমান করে তুলতে এটা একটা ভালো টুল৷ ভবিষ্যতে গথেনবর্গে কী হতে পারে, সবাই তা দেখতে পাচ্ছে৷”
সমস্যাগুলি অজানা নয়৷ এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার পালা৷ প্রবল বৃষ্টিপাত হলে বিশেষভাবে তৈরি খোলা জায়গা দ্রুত পানি ধরে রেখে ধীরে ধীরে বার করে দিতে পারবে৷ শহরের ডেপুটি মেয়র কারিন প্লেইয়েল বলেন, ‘‘এই এলাকা ৫০০ ঘন মিটার পানি ধরে রাখতে পারে৷ প্রবল বৃষ্টিপাতের সময়ে সেখানে পানি জমা করে আশাপাশের ঘরবাড়ি ও অন্যান্য জায়গার সুরক্ষা সম্ভব৷”
ডিজিটাল টুইন ধারাবাহিকভাবে আরো উন্নত করা হচ্ছে৷ ভার্চুয়াল গথেনবর্গ ল্যাবে গবেষকরা আরো সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ যেমন ভার্চুয়াল সিটি ট্যুরের মাধ্যমে ইউজাররা গথেনবর্গ ঘুরে দেখতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে কার্বন ফুটপ্রিন্টও নামমাত্র হবে৷
অনন্যা/এআই