শীতের সুস্থতায় যা খাবেন
শীতকাল মানেই সবার মনে রঙিনের হাতছানি। এই হাতছানি যেমন থাকে বেড়ানো আর পোশাকে, ঠিক তেমনি সারা বছরের তুলনায় শীতকালীন রঙিন শাকসবজি আর ফলমূলগুলোও যেন রংবেরং এর ডালা নিয়ে পশরা সাজিয়ে হাতছানি দিয়ে থাকে। যদিও বাংলাদেশে আজকাল প্রায় সারা বছরই সবজি আর ফলমূল পাওয়া যায়, কিন্তু শীতকালীন শাকসবজি আর ফলগুলোতে শুধু বাহারি রঙের জন্যই না বরং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ থাকে অনেক বেশি। তাই এই সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে ও সুন্দর ত্বকের অধিকারী হতে আপনিও জেনে নিতে পারেন কোন সবজিতে ও ফলে কোন কোন পুষ্টিগুণ আছে।
শীতকালীন ফলমূল ও সবজিগুলো সাধারণত ভিটামিন এ,বি, সি আর আয়রন সমৃদ্ধ হয়। ফলে খুব সহজেই আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ সুরাইয়া মান্নান আমাদের শীতকালীন কিছু সবজির গুনাগুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন।
পালং শাক
পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম আরও আছে ভিটামিন এ, বি, সি, ই। আরও আছে জিংক যা রক্তশূন্যতা রোধ করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গাজর
গাজরে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ,বি, বি২, বি৩ ও সি। আরও আছে পর্যাপ্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।ফাইবার, যা দৃস্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, ক্যারটিনয়েড যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্রকলি
ব্রকলিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আছে ফলেট, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। ভিটামিন কে, আয়রন, পটাসিয়াম যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং এতে কোনো রকম ফ্যাট নেই। বর্তমানে রিসার্চাররা জানতে পেরেছেন, ব্রকলিতে থাকা উপাদান রক্তজমাট বাধতে সাহায্য করে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য খুবই ভাল একটি সবজি এটি।
মূলা
শীতকালে এই সবজিটি অনেক পাওয়া যায়। প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় শরীরকে ডিহাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। সোডিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম আছে।
ফুলকপি
ভিটামিন এ, বি, সি ও সালফার আছে। এতে আছে সালফারন যা ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
মটরশুঁটি
মটরশুঁটিও শীতকালীন একটি অতি পরিচিত সবজি। শীতকালে মটরশুটির সবজি অথবা মটরশুঁটির কচুরির জুড়ি মেলা ভার। আর এই অতি পরিচিত সবজিটিতে আছে গুড ক্যালরী যা বাচাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
শিম
শীতকালে আরও একটি পরিচিত সবজির নাম শিম। শীতের-দিনে শিম ফুলকপি দিয়ে মাছের ঝোল পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া ভার। শিমে আছে ফাইবার ও আমিষ যা কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তে কোলস্টেরল কমায় ও খাবার পরিপাকে সহায়তা করে।
বাঁধাকপি
বাঁধাকপি এখন প্রায় সারাবছর পাওয়া যায়। এতে আছে ভিটামিন সি, ই এবং কার্বহাইড্রেট আছে। আরও আছে মিনারেল ও ফাইবার। ক্যালরি অনেক কম। তাই বয়সকালীন হাড়জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আলসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
কমলালেবু
কমলালেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, এন্টি অক্সিডেন্ট ও বিটা ক্যারটিন। হজমশক্তি বাড়ায়, ফ্লু, সর্দি কাশি কমায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
বরই
বরই এ ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আশ ও ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ক্যানসার ও বাতের ব্যথা রোধে উপকারী।
জলপাই
জলপাইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট। জলপাই সর্দি কাশি ও নানান রোগ প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন এ ও সি যা চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আমলকি
আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। কফ, বমি, নিদ্রাহীনতা দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।পেশী মজবুদ করে। আমলকির মোরোব্বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াভাল রাখতে সাহায্য করে।
আাপেল
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। হার্ট, দাঁত, ডায়বেটিকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া আর কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে আপেল অনেক উপকারী।
মাল্টা
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ত্বক ও ফুসফুসজনিত হার্টের সমস্যা সারাতে সাহায্য করে।
শীতের দিনের শাকসবজির উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দেশে সারা বছরের তুলনায় এই সময় সব কিছুরই প্রাচুর্য দেখা যায়। সকালে শিশির-ভেজা ঘাসে যেমন হাঁটলে মন ভাল হয়ে যায় ঠিক তেমনি রংবেরঙের শীতকালীন ফলমূল, রঙিন ফুলের সমারোহ আর শাকসবজির সমাহার সুস্বাস্থ্যের জন্যও অনেক প্রয়োজনীয়।