উপকূলীয় নারীর দুভার্গ্য ঘুচবে কবে!
বর্তমানে ব্যাপকভাবে উপকূলীয় কিশোরী ও নারীদের সমস্যা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির অতিরিক্ত লবণাক্ততা তাদের দেহের নানাবিধ ক্ষতিসাধন করছে। ঋতুচক্র, জরায়ুর অসুখ, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলা, ত্বক খসখসা হয়ে যাওয়ার মতো অনেক জটিলতা বেড়েছে! এলক্ষে কিশোরীরা রং ফর্সাকারী ক্রিমের দিকে ঝুঁকছে! শুধু তাই নয় কন্যা সন্তানকে নিয়ে অভিভাবকরা এতটাই উদ্বিগ্ন যে এখানে বাল্যবিবাহের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। যত দ্রুত মেয়েকে বিয়ে দিয়ে পার করছে ততই তারা চিন্তামুক্ত হচ্ছে। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে যে, শারীরিকভাবে দুর্বলতা, ত্বকের মলিনতা নানা কারণে পুরুষ একাধিক বিয়ের দিকে ঝুঁকছে। ডিভোর্স বাড়ছে। যৌতুকের পরিমাণ বাড়ছে! সবমিলিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটছে উপকূলের নারীদের। তাদের এই দুর্দিন কাটাতে এখনই উপর্যুপরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, উপকূলীয় এলাকায় পানির লবণাক্ততার কারণে নারীর যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। লবণপানি ব্যবহারের কারণে নারীদের সাদা স্রাব ও ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। যোনিপথে চুলকানি হয়। যৌন মিলনে সমস্যা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীরা স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান। অনেক স্বামী বহুবিবাহ করেন। এই পরিস্থিতিতে নারী সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থার শিকার হন।
নারীর যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যে লবণাক্ততার প্রভাব মারাত্মক। জলবায়ু পরিবর্তন ফলে উপকূলীয় নারীরা খুবই দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছেন। উপকূলের কিশোরীদের দ্রুত বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ তখনও তাদের ত্বক কিছুটা সুস্থ থাকে। পানির অতিরিক্ত লবণাক্ত ভাবের কারণে ত্বক দিনকে দিনকে বেশি মলিন ও কালো হয়ে যায়। ফলে উপকূলের জলবায়ু নারীদের জীবনে বর্ণবাদেরও বেশ প্রভাব পড়ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক একজনের পাঁচ-ছয়টা বিয়ে এসেও ভেঙে যাচ্ছে। কারণ মেয়ের গায়ের রঙ কালো। পানির প্রভাবে তাদের শরীরের ব্যাপক প্রভাব এ অঞ্চলের নারীদের চুল ঝরিয়ে দিচ্ছে, মাসিকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে নারীরা বাধ্য হয়ে কম দামী প্রসাধনী ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। যা ভবিষ্যতে তাদের নানারকম শারীরিক জটিলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কম দামী বা রঙ ফর্সাকারী ক্রিমে যে উপাদান ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন গবেষণায় যেসব ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে তাতে এসব নারীরা নিজেদের জীবনকে শঙ্কামুক্ত করতে গিয়ে আরেক বড় বিপদে জড়িয়ে পড়ছেন।
উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যাও আমাদের ধাক্কা দিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর দিকে নজর বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের সময় লক্ষ রাখতে হবে সব ধরনের অংশীদারেরা যেন অন্তর্ভুক্ত থাকে। উপকূলীয় নারীদের সুরক্ষা অতিসত্বর উদ্যোগ নিতে হবে। লবণাক্ত পানি কিভাবে পিউরিফাই করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। গণহারে নারীদের শরীরে রোগ বাসা বাঁধছে আর সেটা নিয়ে বসে থাকা সভ্য সমাজের উচিত নয়। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে এই হতভাগ্য, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত নারীদের আগে সুস্থ জীবন দিতে হবে। তারপর উপর্যুক্ত শিক্ষা নতুবা জাতির সামনে দুর্দিন।
উপকূলের নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পানির লবণাক্ততা কমিয়ে কিভাবে নারীদের সুস্থ জীবন প্রদান করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। আগামী প্রজন্ম যাতে আরও হুমকির মুখে না পড়ে সেজন্য এখন থেকে তৎপর হতে হবে।