Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীকে দোষারোপ বন্ধ হোক

আমাদের সমাজে নারী আজও অনিরাপদ। সব দায় নারীর ওপর দিয়ে পুরুষতন্ত্র পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে। পুরুষতন্ত্র ও নারীর দায় প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে মূলত সামাজিক এবং পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় সমগ্র বিষয়টার দিকেই ফোকাস করতে হয়। এক্ষেত্রে কোন একটার দায় পুরুষ নিজে নেয় না। বরং নারীর ওপরই যেন এগুলো দৈববাণীর মতো ফলে আসছে। বিষয়গুলোর দিকে একটু নজর দিলেই বোঝা যাবে আশাকরি।

১. ধর্ষণ
২. যৌন হয়রানি
৩. বেশি বয়সে বিয়ে
৪. বেশি বয়সে গর্ভধারণ
৫. ডিভোর্স

পুরুষতন্ত্রের জেরে নারীকেই যে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ জরুরি। যারা পুরুষতন্ত্রের মানসিকতায় আবদ্ধ, তারা যেভাবেই হোক সবকিছুর জন্য নারীকে দোষারোপ করেই ক্ষান্ত থাকেন না, তার কী করা উচিত ছিল বা কী করতে পারতো, সে বিষয়েও পথ বাতলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আলোচনায় যাওয়ার আগে আরও একটি বিষয় না বললেই নয়। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, কোনো পুরুষকে স্বজাতির বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে মোটেও শোনা যায় না। কথায় আছে, ‘একে তো নাচুনি বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি’। এমনিতেই পুরুষ সবসময় নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েই রাখে। তার ওপর কিছু নারী স্বজাতির সঙ্গে সদাচরণ করতে জানেনই না। এই কথার প্রমাণ সামাজে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।

প্রথমে যেটার দায় নারীর সেই কথায় আসা যাক। সমাজে এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে ধর্ষণ। কিন্তু ভেবে দেখুন তো পুরুষতন্ত্রের কথা। তারা এক বাক্যে স্বীকার করে সব দায় নারীর। কেন নারী ছোট, অশালীন পোশাক পরবে?

তবে একটু সমাজের চিত্র মিলিয়ে দেখা যাক। আমাদের সমাজে অহরহ যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে, তার কয়জন ছোট পোশাক পরিধান করেছিলেন? ছোট পোশাক বা যে অশালীন নামধারী পোশাকের কথা আমাদের অতি মাত্রায় পুরুষতন্ত্র মজ্জাগত, তারা কয়টার পরিসংখ্যান দেখাতে পারবেন? আপনি যদি বিবেকসম্পন্ন এবং সৎ সাহস নিয়ে সত্যি বুকে হাত রেখে বলতে চান তবে বলুন তো ৬-৮ মাসের শিশু কি ধর্ষণের শিকার হয়নি?

তবে দায় কি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার, না কি নারীর পোশাকের? দায় কি বিকৃত মানসিকতার, না কি নারীর শরীরের? কেন নারীর শরীরের মধ্যে বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা খোঁজার চেষ্টা? নারী তো মায়ের জাত। তাকে সম্মান-শ্রদ্ধা-ভক্তি কেন আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আসে না?

ধর্ষণের পাটে যেমন সব দোষ নারীর তেমনই দেখুন গণপরিবহনে যৌন হয়রানি। সেখানেও দোষ কার? নারীর। কারণ নারী কেন গণপরিবহনে যাবে? তার তো ঘরে বন্দি থাকার কথা। তাকে তো আজীবন পুরুষের পদসেবা করে আর সন্তান পালন করে কাটানোর কথা। সে কেন বাইরের আলোর মুখ দেখবে? স্বামী নিপীড়ন-অত্যাচারে অতিষ্ঠ করবে।

নারী সেবাদাসী হয়ে জি হুজুর, জি হুজুর, সেলাম ঠুকবে। ফলে নারী বাইরে বের হয়েছে এ তো নারীর সমস্যা। এটা তো গণপরিবহন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষক, টিউশন মাস্টারের সমস্যা নয়। সমস্যা নারীর। ঘর থেকে বের না হলেই তো এসবের মাঝে পড়তে হয় না। পুরুষতন্ত্রের এই দায় নারীর কাঁধে। যখন ঘর থেকে নারী পথে বের হয় মা, ভাই, বাবা বলে দেন, তোমার ওপর পরিবারের সম্মান। তাই পথা চলবে হিসাব করে। কিছু ঘটলে সব দায় তোমার। সম্মান নিজেরও যাবে, পরিবারেরও। তবে নারীর পায়ে কেন এত বেড়ি ? কে তার শিকল মুক্ত করবে?

অনেক বাধা জঞ্জাল পার করে নারীর উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে বেশি বয়সে বিয়ে। সেখানেও পরিবারের চাপে নারীদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া দায়। পরিবার, পরিজন, পাড়া- প্রতিবেশীর কারোরই যেন ঘুম আসে না পাশের বাড়ির অবিবাহতা মেয়েকে দেখলে। শুধু বিয়ের ক্ষেত্রে নয় বরং বিয়েটা হয়ে গেলে গর্ভধারণে কেন দেরি, সে বিষয়েও সব দায় নারীর।

মজার বিষয় হলো নারীদের জীবনের এত এত সমস্যা যেন তাকে থামিয়ে দিতে। কিন্তু আজকের নারীরা বেশ মানসিক বলে দৃঢ়ই বলতে হয়। নতুবা সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়তো না। এই বিষয়ের পরে আসছে সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ বিষয়। ডিভোর্স। শুনতেই কেমন গা-ছমছমে হয়ে আসছে।

বিষটার জন্য কে দায়ী? অবশ্যই নারী। এরজন্য এত কেন ভাবতে হবে। এটাও আমাদের পুরুষতন্ত্রের চাপিয়ে দেওয়া দায়। জীবন পরিচালনার জন্য দুজনের সম্মিলিত শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-সম্মান-মানিয়ে নেওয়া সবই জরুরি। এক্ষেত্রে একজন যদি পিছুটান দেন তবে অবশ্যই গতি স্থবির হবেই। সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষের উভয়েরই দায় থাকতে পারে। কোনো একপক্ষের শত চেষ্টায় সংসার নামক প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধি কখনোই সম্ভব নয়।

একটা সময় অবধি একজনের অদম্য ইচ্ছে কিছুটা পথ এগিয়ে নিলেও একটা সময় অবশ্যই তার ইতি ঘটবে। কিন্তু কী আশ্চর্য বিষয়, সব দায় একা নারীর। পুরুষতন্ত্র তাদের মনগড়া বিচারেই নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, পুরুষতন্ত্র হোক বা কোন একক ব্যক্তিই হন অন্যের বিষয়ে নাক গলানো বা অতি ঔৎসুক্য কতটা তাকে মানসিক শান্তি দেয়? বিষয় ব্যক্তিকে দিলেও অন্যপক্ষকে মানসিকভাবে জীবনানাশের হুমকি স্বরূপ হয়ে ওঠে। তাই পুরুষতন্ত্রের মানসিকতায় বলীয়ান হয়ে সব দায় নারীর একার না হোক। নারীর একার দায় নয়। সমাজের এই বিশ্রী মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারীর জন্য সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

আর একটা কথা। সমাজ অহরহই ঘটছে ইভটিজিং। আর সেও তো নারীর দোষ! পোশাক কেন ঠিকঠাক না। বেশি রাত করে কেন নারীরা বের হবে? নানারকম মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া হয় নারীর প্রতি। কবে এই মানসিকতার পরিবর্তন হবে?

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ