ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি শক্তি স্থায়ী করার উপায়
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সারারাত পড়ালেখা করলেন কিন্তু সকালে পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলেন কিছুই মনে পরছে না, কিংবা কারো নাম কি বা নিত্যদিনের খুঁটিনাটি মনে রাখাও বেশ মুশকিল হয়ে পড়ছে। যাকে সহজ ভাষা অনেকে ” ভুলে যাওয়ার ” রোগ বলে থাকে। মস্তিষ্কের অবদানে আমরা স্মৃতিতে সকল কিছু ধরে রাখতে পারি। তাই স্মৃতিশক্তি ভালো করতে মস্তিষ্ককে সক্রিয় করা অনেক বেশি জরুরী। জেনে নেয়া যাক কিভাবে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা যায়:
ব্যায়াম করুন
আমরা সবাই জানি ব্যায়াম করলে আমাদের পেশী মজবুত হয়। কিন্তু ব্যায়ামের প্রভাব পরে আমাদের মস্তিষ্ককেও পরে থাকে। ব্যায়ামের পর মস্তিষ্ক অনেক বেশি অক্সিজেন পায় ফলে ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। কিংবা হাঁটাও যেতে পারে, হাঁটাহাঁটি ফলে ব্রেইনে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়৷
মেডিটেশন
মেডিটেশন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেক ভালো কাজ করে। বেশিরভাগ মানুষ মেডিটেশন কয়েক দিন করে এরপর ফলাফল না দেখে ধৈর্য হারিয়ে মেডিটেশন করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এর ফলাফল পেতে কিছুটা সময় প্রয়োজন তাই ধৈর্য সহকারে রোজ কিছু সময় মেডিটেশন করতে হবে
গান শোনা ও বই পড়া
গানের সুর আমাদের ব্রেনকে খুব জলদি সক্রিয় করে তোলে। তাই রোজ কিছুটা সময় গান শোনা উচিত। যেকোনো বই পড়ার সময় অনেক বেশি ধৈর্য সহকারে পড়তে হয় ও প্রতিটি লাইন বুঝে বুঝে পড়তে হয়। প্রতিদিন বই পড়ার ফলে ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়তে থাকে। তাদের একদম বই পড়ার অভ্যাস নেই তারা হয়তো শুরুতে বেশিক্ষণ ধৈর্য ধরে রাখতে পারবে না। কিন্তু প্রতিদিন বই পড়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বই পড়ার অভ্যাস আয়ত্তে আনা সম্ভব।
পর্যাপ্ত ঘুম
দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিদিন না ঘুমালে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় কারণ না ঘুমালে আমাদের ব্রেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। সারাদিন কাজের ফলে আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও ক্লান্ত হয়ে পরে। তাই মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়ার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে৷ তাই পরীক্ষা কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের আগের দিন রাতে ভালো ঘুম হওয়া প্রয়োজন।
খাদ্যাভ্যাস
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে রয়েছে খাদ্যের ভূমিকা। প্রতিদিন ডায়েটে একমুঠো বাদাম খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া দুধ মাখন মাছের তেল ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে এমন খাবার বেশি করে খেতে হবে যেমন : ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল। চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে৷
নতুন কিছু করা
দিনের পর দিন একই জীবন ব্যবস্থার জন্য ব্রেন অনেক সময় সঠিকভাবে কাজ করে না। তাই জীবনযাত্রায় মাঝেমধ্যে কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। ছুটির দিনে পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। ভ্রমণ বা নতুন স্থানে ঘুরে বেড়ালে স্মৃতিশক্তি ভালো হয়। এছাড়া নতুন করে ছবি আঁকা শেখা কিংবা কোন ভাষা শিক্ষা, রান্না করা, বাগান করা ইত্যাদি যেকোনো কাজ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কারণ নতুন কোন কাজ করবার চেষ্টা করার সময় আমাদের ব্রেনের অনেক বেশি সচেতন ও সক্রিয় হয়ে উঠতে হয়। যার ফলে ব্রেন স্মৃতিতে যে কোন কিছুই খুব সহজে ধরে রাখতে পারে।
মনে রাখার উপায়
পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো কিছু মনে রাখার সঠিক সময় হচ্ছে খুব ভোরবেলা। সারারাত ঘুমের ফলে ব্রেন অনেক বেশি সচল থাকে তাই সকাল বেলা যেকোনো কাজ ব্রেন খুব সহজে স্মৃতিতে রেখে দেয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ নোট করে রাখা যেতে পারে। ডায়েরি লেখার অভ্যাস করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কোন কিছু যদি আমরা লিখি তাহলে সেটি ব্রেন খুব সহজে আয়ত্ত করে রাখে।