ফায়ার ফাইটার পদে নারীর যোগদান: সম্ভাবনার দুয়ার খুলুক
বর্তমানে নানা সমস্যাকে অতিক্রম করে নারীরা তাদের লক্ষে পৌঁছে যাচ্ছে। যদিও এ সমাজ কোনোদিন তার যোগ্য মর্যাদা দেয় না। ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশ পদার্পণ করলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত নানামুখী সমস্যায় পড়ছে। তবু নারীরা তাদের অদম্য মনোবলকে সঙ্গী করে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান করে নিচ্ছেন।
সময়ের সঙ্গে নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রের প্রাগসরতা নিয়েও ভাবছেন। পূর্বে যেখানে নারীরা শুধু স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও কিছু নির্দিষ্ট পেশায় নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুললেও বর্তমানে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষণীয়। যার ফলে নারীরা তাদের ইচ্ছে মতো পেশা নির্বাচনে সাহস দেখাচ্ছে!
বাংলাদেশের প্রশাসনিক সেক্টর, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায়, গবেষণা ক্ষেত্রে প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীদের যোগদান হাতে গোনা। এমনকি ফায়ার সার্ভিসেও নারীদের অংশগ্রহণ ছিল না। পরিবার-পরিজন সামলে সর্বত্র নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। বা সমাজের ভয়ে, পরিবারের চাপে তা কোনোভাবেই কয়েন না। তবে এবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘ফায়ার ফাইটার নারী’ পদে ১৫ জন যোগ পেয়েছেন। যা জাতির জন্য নতুন দিক উন্মোচন করবে৷ গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, নিয়োগপত্রের শর্ত অনুযায়ী তারা রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স মাল্টিপারপাস ট্রেনিং কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। যোগদানের পর তাদের মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়।
যোগ দেওয়া ১৫ নারী ফায়ার ফাইটার হলেন মোছা. মাজেদা খাতুন, পাপিয়া খাতুন, পিংকি রায়, মোছা. মাইমুনা আক্তার, রিমা খাতুন, মিস মেহেরুন্নেছা মিম, মোছা. আরজুমান আক্তার রিতা, মিশু আক্তার, ঝর্না রানী পাল, মোছা. কাকুলী খাতুন, ইসরাত জাহান ইতি, মোছাম্মৎ নাজমুন নাহার, মোসা. ইয়াসমীন খাতুন, মোছা. রুজিনা আকতার ও প্রিয়াংকা হালদার।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, চলতি বছরের ২০ জুন ফায়ার ফাইটার নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফায়ার ফাইটার (নারী) পদে ২ হাজার ৭০৭ জন আবেদনকারীর মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই, শারীরিক যোগ্যতা ও মেডিকেল টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ ১৫ জনকে চূড়ান্তভাবে ফায়ার ফাইটার (মহিলা) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রোববার (১৯ নভেম্বর) সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান শিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ইতিহাসে নারীদের জন্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে দিয়ে সমাজের আমূল পরিবর্তন আসবে আশাকরি। কারণ নারীর কর্মক্ষেত্রের গণ্ডির দেওয়াল ভাঙছে। নারীরা আর সমাজের বাজে মন্তব্য বা কটুকথা গায়ে না মেখে নিজেদের মনকে, শক্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ঘোরটোপ থেকে বেরিয়ে নারীরা তাদের স্বাধীন সত্তাকে বিশ্বাস করুক৷ নারীরা পারে না এমন কোন কাজ যে সত্যি এ সমাজে নেই তা আবারও প্রমাণ করে আপমর নারীকে তাদের পথ অনুসরণ করার প্রেরণা যোগাক। নারী তার মেধা, মনোবল, বুদ্ধি, শক্তি দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাক। পথের বাধা দূর হোক নারীর পদতলে। মুক্ত হোক নারী। খুলুক মনের দুয়ার পৃথিবীর বৈচিত্র্যের ডাকে।