Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন হয়রানি: নারীকে সচেতন হতে হবে

যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সবাই এখন অনলাইন ভিত্তিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই প্ল্যাটফর্মগুলো নারীর জীবনকে আরও জটিল করে তুলেছে। বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানি ও যৌনসহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তবে পুলিশের স্মরণাপন্ন হলেও অধিকাংশই এর প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে দিন দিন এমন সহিংসতা বেড়েই চলেছে।

অনলাইন হয়রানিতে ভুক্তভোগী তো বটেই, এমনকি তার পুরো পরিবারের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন বিভীষিকাময় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অনলাইন হয়রানিতে নারীর এ ধরনের সহিংসতা রোধে তাহলে আমাদের করণীয় কী? কোন পথে হাঁটলে এর সমাধান মিলবে? অহরহ নারীর বিভিন্ন ভুলের মাধ্যমেও এসব জটিলতা বাড়ছে। তাই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

অ্যাকশনএইডের ‘বাংলাদেশে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছর বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবহারকারী নারীর প্রায় ৬৩.৫১ শতাংশ সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ যা আগের
তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি৷ এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ এই হার ৪৭ শতাংশ, ম্যাসেঞ্জারে ৩৫ শতাংশ৷ এছাড়া ইনস্টাগ্রাম, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবসহ অন্যান্য মাধ্যমেও সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন নারীরা৷

গবেষণায় উঠে এসেছে, অনলাইনে নারীরা ১২ ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন৷ সবচেয়ে বেশি ৮০ শতাংশ নারী অশ্লীল, ক্ষতিকর, যৌনতামূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পেয়ে থাকেন৷ ৫৩ শতাংশ নারীকে ইনবক্সে অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে যৌনসম্পর্ক করার কথা বলে হয়রানি করা হয়৷ বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন ১৯ শতাংশ নারী৷ সামাজিক মাধ্যমে নারীদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খোলার মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হয়েছেন প্রায় ১৮ শতাংশ নারী৷ ১৬ শতাংশ নারী বলেছেন, সাইবার জগতে তাদের কর্মকান্ড সব সময় অনুসরণ করা হচ্ছে৷

২০২১ ও ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে অ্যাকশনএইড বলছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানোর হার খুবই কম, মাত্র ১৫ শতাংশ৷ যারা অভিযাগ করেছেন তাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রতিকার পাননি৷ আর যারা হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন তাদের মধ্যে কিশোরীও রয়েছেন৷ গবেষণার এই চিত্র নারীদের জন্য সত্যি দিন দিন আরও ভয়াবহ উঠছে। নারীরা এসব সমস্যায় কখনো মুখ খুলছেন আবার বেশিরভাগই এসব বিষয় নিয়ে সচেতন নন; এমনকি হয়রানির শিকার হলে চেপে যাচ্ছেন। ফলে সমস্যাগুলো আরও জটিল হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে অনলাইনকেন্দ্রিক বোকামিগুলোও বাড়ছে। বিচক্ষণতার সঙ্গে যদি বিষয়গুলো সমাধান না করা যায়, তবে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। আর এর ফলে দাম্পত্য সংকট, বিবাহ বিচ্ছেদ, আত্মহত্যার মতো অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। ফলে অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীদের সচেতন হওয়া অতীব জরুরি।

নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই ভালো না লাগলেও ফোনে লক সিস্টেম চালু করতে হবে। এতে করে যদি ভুল করে কোনোসময় ফোন কোথাও ফেলেও আসা হয় তবে অন্তত তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকবে। বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ স্মার্টফোন। ফোনে ফেসবুক, জিমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথা একজন ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ফোনে সংরক্ষিত থাকে। আর বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এগুলো কপি করা কোনো বিষয়ই নয়। ফলে ব্যক্তিগত ছবি, তথ্য, পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের জন্য ফোন লক ব্যবহার করতে হবে।

মোবাইল, ইমেইল, টুইটার, ফেসবুক, ব্যাংক মনে রাখার সুবিধার্থে সবক্ষেত্রে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সময়টা ইন্টারনেট ভিত্তিক। ফলে যেকোনো একটি পাসওয়ার্ড হ্যাকড হলেই সবক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে শুধু মনে রাখার সুবিধার জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না। সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখার জন্য ফেসবুকে পাসওয়ার্ড শেয়ার না করে রাখাই ভালো। এক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতনতা বাড়াতে হবে।

যেহেতু মানুষ প্রচণ্ড পরিমাণে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে তাই যেখানে সেখানে ফ্রি ওয়াইফাই পেলেই কানেক্টেড করার চেষ্টা করে থাকেন অধিকাংশই। এমন অবস্থায় ঘটে যেতে পারে নানারকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তাই এই ব্যাপারে অবশ্যই নারীদের সচেতন হতে হবে।

চ্যাটরুম সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো মাধ্যম হলেও নারীদের সচেতন হতে হবে। চ্যাটরুম থেকে পরিচয় এবং আবেগী হয়ে ভিডিওচ্যাট করে এখন অহরহ নারীরা বিপদে পড়ছেন। তাই চ্যাট করলেও তথ্য শেয়ার থেকে নারীদের বিরত থাকতে হবে।

অনেকেই নতুন ক্রেডিটকার্ড পেয়ে খুশিতে সেলফি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করে থাকেন। এ ধরনের ভুল অনলাইনের ঢ়ুগে নারীর জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। যতটা সম্ভব ছবি, ভিডিও শেয়ারে সচেতন থাকতে হবে। অপরিচিত ব্যক্তি, ফেক আইডি বন্ধুর লিস্টে না রাখা উত্তম। এক্ষেত্রে নারীদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানব জাতির স্বভাবই হচ্ছে সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরুনো। এই একটি প্রবাদ বিশেষভাবে মাথায় স্থান দিতে হবে। মিষ্টি কথা, আলাপে ভুলে ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, তথ্য শেয়ার করা যাবে না কোনভাবেই। নারীদের জীবনকে সুরক্ষিত রাখতে অবশ্যই নারীকে সচেতন হতে হবে।

অনলাইনে নারীরা এ ধরনের হয়রানির শিকার হলে পুলিশের স্মরণাপন্ন হতে হবে। লজ্জা, সংকোচ কাটিয়ে সাহায্য নিতে হবে। সরকার সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং অভিযোগের জন্য হটলাইন চালু করেছেন। পারিবারিক, সামজিক সম্মানের ভয়ে বিপদ বাড়িয়ে না তুলে আইনী সহয়তা গ্রহণ করতে হবে। তবে এ বিষয়ে নারীদের সচেতনতা সর্বাংশে জরুরি। সমস্যা হলে সংকট মোকাবিলায় সাহসী হতে হবে। ভয় পেয়ে, লজ্জা, সংকোচে নিজেকে গুটিয়ে নিলে বা আত্মহত্যার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে অপরাধীরা পার পাবে। তারা দ্বিতীয়বার অন্যের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে। ফলে নারীদের সচেতন হতে হবে। ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখতে হবে। তারপরও সমস্যার সম্মুখীন হলে আইনি সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ