শীতের আমেজে ঘরের নতুন সাজে
শীত আসার শুরুতেই প্রকৃতি যেন আলাদা এক চাদরে ঢাকা পড়তে থাকে। আর এসময় বাইরের হিম আঘাত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ঘরে আপনজনের সাথে কিছু সময় কাটাতে খুববেশি সুখকর মনে হয়। কিন্তু এই মুহুর্তগুলো আরও বেশি উপভোগ্য হয় যখন পুরনো ঘর-বাড়িকে বদলে নিয়ে শীতের জন্য নতুনভাবে নতুনসাজে সাজানো যায়। কারন এই সাজানো ঘরই শীতের আমেজকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।
এছাড়া দীর্ঘদিন একই সাজের ঘর, একই রঙের ফার্নিচার, পর্দা দেখতে দেখতে চোখে ও মনে একধরনের একঘেয়েমি চলে আসতেই পারে, আর তাই ঘরের সাজে একটু পরিবর্তন হলে মন্দ লাগেনা। এতে শীতকালীন আলসেমির মধ্যেও যেমন নতুন একটা পরিবেশ পাওয়া যায় তেমনি নুতন উদ্যমে কাজ করার স্পৃহাও জাগে।
ঘরের আসবাবপত্রগুলোকে ঠিকঠাক নিয়মে না সাজাতে পারলে রুচিবোধের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। শীত আবহে অনেক দিন পর ঘরকে নতুন ভাবে সাজাতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইপন শামসুল কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী-
ঘরকে নতুন ভাবে সাজাতে হলে প্রথমেই যে বিষয়কে মাথায় রাখা জরুরী সেটি হচ্ছে রঙ। শীতে যদিও আমাদের দেশে তুষার পড়েনা তবে এসময় সূর্যের আলোর প্রভাব কম থাকে। আর জন্যেই সাদা ও অন্যান্য উজ্জ্বল গোত্রের রঙকে বেছে নেওয়া যেতে পারে যেমন ধুসর, হালকা বাদামী, হালকা গোলাপী ধরনের রঙ।
রঙ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেডরুমের দেয়াল হালকা নীলে রাঙানো যায়। ডাইনিং স্পেসটা ছোট হলে দেয়ালের একটা পার্ট লাল বা অন্য কোন ডার্ক রঙ ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে শিশুদের ঘরেও মাঝে মধ্যে পরিবর্তন দরকার। ছেলেশিশু হলে তার ঘরটি নীল, সবুজ রঙে আর মেয়েশিশু হলে গোলাপী রঙে সাজালে মন্দ হয়না।
রঙ বাছাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে রুম এর অবস্থানকে সঠিক ভাবে নির্ধারন করা জরুরী। এক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে যেন রুম গুলোর অবস্থান বারান্দা বা ব্যালকনির পাশে। যার ফলে সকাল বেলার মৃদু শীতল বাতাস দিনের শুরুতেই এক দারুন সজীবতার অনুভূতি জোগাবে।
বেডরুমের সজ্জায় যেদি বেডের পিছনের দেয়ালকে হালকা টেক্সচার পেইন্ট করলে একটা প্রশান্তি অনুভব হবে যে কারো। এছাড়া বেডশিট, বালিশ, কুশন, কম্বল গুলোর রঙও যদি কাছাকাছি একই ধরনের হয় তাহলে দৃষ্টিনন্দন লাগবে। বেডের সাথেই একটা কাঠের ছোট কফি টেবিল রাখতে পারেন। তাছাড়া বারান্দায় একটা ইজি চেয়ারে বসে শীতল বাতাস দারুন উপভোগ্য হতে পারে।
শীত মৌসুমে ঘরের মেঝে সাজানোর অন্যতম প্রধান উপাদান হলো কার্পেট এবং ম্যাট। এর রঙ, সাইজ ভেদে সঠিক ব্যবহার নিঃসন্দেহে ঘরটিকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে সাহায্য করবে। কার্পেট শুধু মেঝেতে নয়, দেয়ালেও যদি ব্যাবহার করা হয় তাহেলে দেয়ালকে দিতে পারে একটি চোখ ধাঁধানো রূপ। তবে অনেক সময় খারাপ তন্তুর তৈরি কার্পেট বা ম্যাট ঘরে থাকলে শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে কাশমিরি ম্যাটকে প্রধান্য দেয়াই ভালো।
এছাড়া চেয়ার অথবা সোফায় আর্টিফিসিয়াল পশম দিয়ে তৈরি ছোটবড় কুশন ব্যবহার করা যেতে। এটি যথেষ্ট উষ্ণতর ও আরামদায়ক। তাছাড়া ফ্ল্যানেল ও ভেলভেটের তৈরি হালকা ওজনের ছোট কম্বলও ব্যবহার করা যেতে পারে যেকোন জায়গায়।
শীতের রাতে ঘরের বিভিন্ন যায়গায় নানারকমের মোমবাতির ব্যবহার ঘরকে হালকা আলোকময় উষ্ণ রাখবে। এছাড়া আমাদের যেহেতু এখনো ফায়ারপ্লেসের ব্যবহার তেমন ভাবে শুরু হয়নি তাই শীতের শুরুতে ঘরের একটি জায়গায় রুম হিটার রাখার ব্যবস্থা করাই উত্তম।
তবে ঘরকে নতুনভাবে সাজাতে গেলে প্রত্যেকের সাধ ও সাধ্য দুইদিকই বিবেচনায় রাখতে হবে। সবাই চাইলেই চট করে পুরনো সব কিছুকে পাল্টে নতুন করে ক্রয় করা সম্ভব নাই হতে পারে। সেদিক বিচারে শুধুমাত্র ঘরের পর্দা বা বিছানার চাদরে ব্লক করে নতুনত্ব আনা যেতে পারে। এতে সাধ্যমত ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়বে তেমনি খরচও কম হবে।
অনন্যা/ ডিডি