প্রিয় হাওয়াই মিঠাই
ফুরিয়ে যাচ্ছি হাওয়াই মিঠাই-এর কাঠিতে,
তবুও বেঁচে থাকব মিষ্টি স্বাদে, জিভে।
হাওয়াই মিঠাই নাম শুনলে আসলে কী মনে হয় !
হাওয়াই মিঠাই নাম শুনলেই মনে হয় হাওয়ায় হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে এমন কিছু। আসলেই তাই এটি মুখে দেওয়া মাত্রই মুখের ভেতর গলে যায় একনিমিষে। এটা মোটেও পেট ভরার মত কোন খাবার নয়। নরম তুলতুলে কাঠিতে মুড়ানো বলের মতো দেখতে মিষ্টি স্বাদযুক্ত খাবার। হাওয়াই মিঠাই এর জনপ্রিয়তা যুগ যুগ ধরে। এ খাবার খাইনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রাস্তাঘাটে অলিতে গলিতে পার্কে মেলাতে হাওয়াই মিঠাইয়ের দোকান থাকবেই থাকবে। রঙ-বেরঙের হাওয়ায় মিঠাই, যা দেখতেও চোখের শান্তি মেলে। হাওয়াই মিঠাই খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। তবে এটি বাচ্চাদের কাছেই বেশি জনপ্রিয়। তবে এখন হাওয়াই মিঠাই বেশি সহজলভ্য হলেও এর জনপ্রিয়তা আগেই বেশি ছিল। আগের দিনে কোনো জায়গায় হাওয়াই মিঠাইওয়ালার হাঁকডাক পেলেই বাড়ির ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে বড়রাও এ খাবার কিনত। হাতে টাকা না থাকলে বাড়ির পিতলের পুরোনো জিনিসপাতি, কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে কেনা হতো হাওয়াই মিঠাই।
তবে এর স্বাদ আগের মতোই অতুলনীয় আছে। সময়ের সাথে সাথে এই হাওয়াই মিঠাই এর কিছু পরিবর্তন এসেছে যেমন আগে শুধু গোলাপই বা সাদা রঙেরই বেশি দেখা যেত কিন্তু এখন সেটা নীল ,বেগুনি, হলুদ অনেক রঙের দেখা যায়, যা বাচ্চাদেরকে আরো বেশি আকর্ষণ করে। আর অনেকগুলো রঙের কিছু থাকলে সেখানে আপনার চোখ আটকাবেই। আবার তার মধ্যে যদি হয় হাওয়াই মিঠাইয়ের মত এক হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া একটি খাবার তাহলে তো কথাই নেই।
হাওয়াই মিঠাইয়ের ইতিহাস
হাওয়াই মিঠাইয়ের আগমন ইতালিতে। তখন চিনির ঘন রসকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সুতার মতো করে এটি বানানো হতো। তখনও পর্যন্ত হাওয়াই মিঠাই খুব বেশি পরিচিতি খাবার ছিল না । আঠারো শতক পর্যন্ত ঘরোয়াভাবে তৈরি করা হতো খাবারটি।
১৮৯৭ সালে মার্কিন উইলিয়াম মরিসন ও জন সি. ওয়ারটন প্রথমবার হাওয়াই মিঠাই তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। আধুনিক পদ্ধতিতে এ খাবার তৈরি শুরু হওয়ার পরও খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে যখনই এ খাবার ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইস বিশ্ব মেলায় গেল, তখনই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে হুড়মুড় করে ।বিশ্ব মেলার পরই মূলত খাবারটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পায় খাবারটি। দামি চকলেট, আইসক্রিম কিংবা ক্যান্ডির মতো বাজারে হাওয়াই মিঠাইয়ের কদর বাড়তে থাকে। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে এ খাবার।
ইংরেজিতে রয়েছে এর কিছু মজাদার নাম; যেমন কটন ক্যান্ডি, ক্যান্ডি ফ্লস / স্পুন সুগার। দেখতে অনেকটা তুলার মতো বলে ১৯২০ সালে মার্কিনরা এই মিঠায়ের নাম দিয়েছে ‘কটন ক্যান্ডি।’ তারা এই হাওয়াই মিঠায়ের উপর এতই উন্মাদ যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭ ডিসেম্বর দিনটি ‘জাতীয় কটন ক্যান্ডি ডে’ হিসাবে পালন করা হয়।
হাওয়াই মিঠাই তৈরি ও দাম
হাওয়াই মিঠাই তৈরির যন্ত্রের নিচের অংশে একটি মোটরচালিত চুলো থাকে। এখানেই সাদা চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে ঘন ক্যারামেলে পরিণত করা হয়। এরপর তার সঙ্গে মেশানো হয় ফুড কালার। গন্ধ ও স্বাদের জন্য নানা সুগন্ধিও ব্যবহার হয়(ক্ষেত্র বিশেষে)। যন্ত্রের ওপরের অংশে মোটরের সাহায্যে একটি চাকা তীব্র বেগে ঘুরতে থাকে। চাকাটিকে আবৃত করে থাকে একটি অতি সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত পাতলা স্টিলের পাত । গরম ঘন ক্যারামেল ছিদ্রযুক্ত সেই লোহার পাত দিয়ে বের হওয়ার সময় সেগুলো তীব্র গতিতে অনেক সূক্ষ্ম সুতার মতো বের হয়। বাইরের বাতাসের স্পর্শে এসেই ঠান্ডা হয়ে যায়। এরপর একটা সরু কাঠি দিয়ে সুন্দর করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সংগ্রহ করা হয় হাওয়াই মিঠাই। হাওয়াই মিঠাইয়ের সাধারণত এক কাঠিতে মাত্র ৩০ গ্রামের মতো চিনি থাকে। আর বাদবাকি মানে ৭০ ভাগই থাকে হাওয়া কিংবা বাতাস। সে জন্যই তো নাম হাওয়াই মিঠাই।
দাম
আমাদের দেশে হাওয়াই মিঠাই খুবই সস্তা দামে পাওয়া যায়। ১০-৩০ টাকার মধ্যে এই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি হয়। কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে এর অনেক দাম। তবে সেখানে আবার হাওয়াই মিঠাইয়ের অনেক ভিন্নতা দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশগুলোয় পাওয়া যায় স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ম্যাপল, আপেল, আম, গোলাপ ফুল, লেভেন্ডারসহ নানা গন্ধ আর স্বাদের হাওয়াই মিঠাই। বাংলাদেশে তো এইটা অনেকে জানেও না। বাংলাদেশে একধরনের বেসিক হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায়। সেখানে ফ্লেভারের ওপর ভিত্তি করে হাওয়াই মিঠাই এর দাম রাখা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দামি হাওয়াই মিঠাই হলো সেফরন ফ্লেভারড কটন ক্যান্ডি। যার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার টাকা।