Skip to content

২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্পী কালিদাস কর্মকার স্মরণে চার ভাইয়ের যৌথ প্রদর্শনী

দেহ-মন; মানুষের চিন্তা সক্ষমতার মতোই প্রাচীন এ দ্বন্দ্ব। এমন দ্বৈততা শেষ হওয়ার নয় আত্মার বাগানে। দ্বন্দ্ব-মুখর মনই আত্মা খোঁজে, যেখানে মানুষ পরম ঐক্য অনুভব করে, দ্বন্দ্বটুকু নেই হয়ে যায়। বাংলাদেশের নতুন ধারার পাললিক শিল্প আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার।

ইউরোপীয় আধুনিক ঘরানার শিল্পী হয়েও ভোলেননি নিজ মাটি ও শিকড়। ছাপচিত্র, স্থাপনা ও মিশ্র মাধ্যমে তার নিরীক্ষাপ্রবণ কাজগুলো তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আগামীতে। সবসময় এঁকেছেন যন্ত্রণার ছবি। এই যন্ত্রণার সঙ্গে সুন্দরও ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তুলির প্রয়াসে। পারিবারিক পরিমণ্ডলও পেয়েছিলেন শিল্পের। আপন তিন ভাইও বিচরণ করেছেন চিত্রকলার বিচিত্র জগতে। জীবদ্দশায় তিনি চাইতেন তিন চিত্রশিল্পী ভাইকে সঙ্গী করে চারজনের যৌথ শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করতে। জীবদ্দশায় অপূরণীয় এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে অবশেষে।

১৮ অক্টোবর মহান এই শিল্পীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডির সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে চার ভাইয়ের যৌথ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। সেই শিল্পায়োজনে কালিদাস কর্মকারের সঙ্গী হয়েছেন বাকি তিন ভাই দিলীপ কে কর্মকার, প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ ও দেবদাস কর্মকার। চার শিল্পীর ভাইয়ের সৃজিত ৬৩টি শিল্পকর্মের সম্মিলনে সজ্জিত হয়েছে এই প্রদর্শনী।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হক। তিনি বলেন, ‘৫০টির বেশি দেশে শিল্পী কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্মের সত্তুরেরও বেশি প্রদর্শনী হয়েছে। যান্ত্রিকতার যুগে মানুষের কোমল হৃদয়ের কথা বলা এই শিল্পী যন্ত্রণাকে রূপ দিতেন রংতুলিতে অদ্ভুত সুন্দরভাবে।’ আরো উপস্থিত ছিলেন বংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের জনসংযোগ কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি। তিনি তার বক্তব্যে শিল্পকলার ইতিবাচক দিক ও কালিদাস কর্মকারের প্রদর্শনী নিয়ে কথা বলেন।

প্রদর্শনীতে পলিমাটির ব্যবহারে আঁকা শিল্পী কালিদাস কর্মকারের কিছু ছবি রয়েছে। এসব ছবিতে রয়েছে এচিংয়ের সঙ্গে নানা মাধ্যমের মিশ্রণের কুশলী ব্যবহার। শিল্পী দেবদাস কর্মকার এঁকেছেন গৌতম বুদ্ধের নানা অভিব্যক্তিময় প্রতিকৃতি। বুদ্ধের কোনো কোনো ছবিতে রয়েছে দুইয়ের অধিক চোখ যার বেশিরভাগই তপস্বার ভঙ্গিতে বসা। প্রশান্ত কর্মকারের চিত্রকর্মগুলো অন্যদিকে প্রতিকৃতিনির্ভর। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে আঁকা এসব ছবিতে রয়েছে বয়স্ক নারী-পুরুষের মুখচ্ছবি। দিলীপ কে কর্মকার উডকাটে এঁকেছেন বাউল সাধক লালনের জগত। পেইন্টিং, এচিং, ড্রইং, উডব্লক প্রিন্ট ও মিশ্র মাধ্যমের ব্যবহার করেছেন চার শিল্পী।

এই আয়োজন সম্পর্কে প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ বলেন, আমার বড় দাদা ও শিক্ষক কালিদাস কর্মকার চার বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি চাইতেন তার অন্য তিন ভাইকে নিয়েও একটি যৌথ শিল্পপ্রদর্শনীর আয়োজন করতে। অবশেষে তাকে স্মরণ করে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরেছি। সেজন্য আজ আমাদের মধ্যে আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ রয়েছে।

আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ