Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেমিকাকে নির্যাতনকারী ব্রাজিল ফুটবলারকে শাস্তি: আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে

নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে তবে নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় তেমন কিছু চোখে পড়ে না। বা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনাই সামনে আসে না যা নারী নির্যাতনের ফলে শাস্তির অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারে। আর সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে তা ভাবা একেবারেই অকল্পনীয়। কারণ তাদের বিচ্ছেদ, দাম্পত্য সংকট বা প্রেমিকা-স্ত্রীর প্রতি নির্যাতন নিয়েও নেট মাধ্যম সরগরম থাকলেও নির্যাতনকারীর শাস্তির দৃষ্টান্তমূলক রূপ আমরা দেখতে পাই না। তবে এবার প্রেমিকাকে নির্যাতনের অপরাধে ব্রাজিল দল থেকে বাদ পড়লেন আন্তনি। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, প্রেমিকা নির্যাতনের অভিযোগ আনার পর ব্রাজিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল থেকে বাদ পড়েছেন ফুটবলার উইঙ্গার আন্তনি। ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) বলেছে, যেসব অভিযোগ সামনে এসেছে, সেগুলোর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সে কারণেই জাতীয় দল থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আন্তনির পরিবর্তে বলিভিয়া এবং পেরুর বিপক্ষে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের জন্য দলে ডাকা হয়েছে আর্সেনাল স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে।

আগে সোমবার ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ইউওএল আন্তনির সাবেক প্রেমিকার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানেই মূলত আন্তনির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এর পর অভিযোগ আমলে নিয়ে সাও পাওলো এবং গ্রেটার ম্যানচেস্টারের পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্তনি।

অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ২৩ বছর বয়সী উইঙ্গার। তিনি বলেছেন, ‘আমি শান্তভাবে বলতে চাই, অভিযোগগুলো মিথ্যা। প্রমাণগুলো এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আরও কিছু প্রমাণ তৈরি করা হচ্ছে, যা দেখাবে যে আমি নির্দোষ। আমার বিশ্বাস, চলমান পুলিশি তদন্ত আমার নির্দোষ হওয়ার সত্যতাকে সামনে আনবে।

আন্তনির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার সাবেক বান্ধবী গ্যাব্রিয়েলা কাভালিনকে ১৫ জানুয়ারি ম্যানচেস্টারের একটি হোটেল রুমে নির্যাতন করেছেন। সে সময় গ্যাব্রিয়েলাকে মাথা দিয়ে আঘাত করেন আন্তনি। এ কারণে তার মাথা কেটে যায় এবং পরে চিকিৎসাও নিতে হয়। তবে শুধু এটুকুই নয়; গ্যাব্রিয়েলার অভিযোগ, আন্তনি তার বুকে আঘাত করেছেন, এতে তার কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা স্তনের ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে পরবর্তী সময়ে তাকে আবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

অন্যদিকে আন্তনি তার বিবৃতিতে সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক অশান্ত হয়ে ওঠার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন করেননি বলেও জানিয়েছেন। এর আগে গত জুনে আন্তনি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, সাবেক প্রেমিকা তার বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য সহিংসতার মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।

নারীর প্রতি এমন সহিংস আচরণের কারণে ব্রাজিল দল থেকে বাদ পড়েছেন আন্তনি। এটা একটি যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, নারী নির্যাতন হলে তাদের আইন-কানুন কোনটাই নীরব দর্শক থাকবে না। তিনি যদি তারকাও হন তবু তাকে বাদ দেওয়া হবে বা যথার্থ প্রমাণসহ অপরাধ চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

নারী নির্যাতন কখনোই সাধুবাদ পাওয়ার কাজ নয়। নারী নির্যাতন একটা কঠিনতম অপরাধ। একে হালকাভাবে দেখার কারণ নেই। সে দেশে হোক বা বহির্বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে। নারী এ সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ফলে নারীকে সম্মান-শ্রদ্ধা ও মর্যাদা দিতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে রাস্তায়-কর্মক্ষেত্রে কোথাও যেন নারীরা অসম্মানিত না হয় সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে। আন্তনিকে ব্রাজিল দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেকেই অনেকভাবে দেখাতে পারেন কিন্তু অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই এই শাস্তি নিঃসন্দেহে মাইলফলক সৃষ্টি করবে। কারণ তারকাশ্রেণি বা উচ্চবিত্তশ্রেণি সবসময় তাদের পাওয়ার ও পজিশনের সাহায্যে নারীকে অবমূল্যায়ন করে। নারীর যোগ্য সম্মানও অনেকে দিতে পারেন না। ফলে এই সিদ্ধান্ত আমাদের দেশের জন্যও শিক্ষা হয়ে রইলো।

নারীর অমর্যাদা, অসম্মান হলে দেশ-ধর্ম-মত-পথের উর্ধ্বে উঠে নারীর প্রতি ন্যায় বিচার করতে হবে। নারী যাতে নির্যাতনের শিকার না হয় সে ব্যবস্থা এ সমাজের সুশীল ব্যক্তিবর্গ ও হর্তাকর্তাদের দায়ভার নিতে হবে। আমাদের দেশেও নারীর প্রতি নির্যাতন হলে জিরো টলারেন্স নীতি গড়ে উঠুক। নারীরা নিরাপদ মানে দেশ ও এর শিশুরা নিরাপদ। আর তবেই তো পৃথিবীর কল্যাণ হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ