Skip to content

১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদ্ভিদও মাংস খায়!

প্রকৃতির এক অদ্ভূত সৃষ্টি এই উদ্ভিদগুলো। শিকার ধরার জন্য একেক ধরনের মাংসখেকো উদ্ভিদের রয়েছে একেক রকম ফাঁদ।

এখানে যেদিকে তাকাবেন, কেবল মাংসখেকো উদ্ভিদের ছড়াছড়ি। ৩৬ বছর আগে, বার্ন্ড ভাইলব্রেনার জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফ্রাইনশাইমে মাংসাশী উদ্ভিদের একটি নার্সারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি এখন জার্মানির বৃহত্তম নার্সারি। রহস্যময় এসব উদ্ভিদ কীভাবে শিকার করে তার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। এই মাংসাশীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। উদাহরণস্বরূপ সারসেনিয়া তৈরি করে এক ফাঁদ।

বার্ন্ড ভাইলব্রেনার বলেন, “উদ্ভিদটি পাতার এক প্রান্তে এবং এখানে মুখের কাছে মধু নিঃসরণ করে। এই মধু পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। তারা এখানে বসে মধু খেতে শুরু করে। ক্রমে তারা আরো উৎসাহী হয়ে হয়ে উঠে আরো ভেতরের দিকে যেতে থাকে। একসময় গাছটি একটি গ্যাস নির্গত করে। এর ফলে পোকামাকড় কিছুটা ঝিমোতে শুরু করে। কিন্তু তখনও তারা মধু চাটতে থাকে। কিন্তু নীচের টিউবে সামান্য রোঁয়া আছে, যেগুলো নিচের দিকে নুয়ে থাকে। এর মানে নীচে যাওয়া সহজ, কিন্তু ওপরে ওঠা কঠিন। মাছিদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এক পর্যায়ে তারা নীচে পড়ে যায়। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে উদ্ভিদটি এত চতুরভাবে বিবর্তিত হয়েছে।”

নেপেনথেস গ্রীষ্মমন্ডলীয় কলসি উদ্ভিদ নামেও পরিচিত। এটিও একই ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে। এর মসৃণ কিনারায় মিষ্টি রস পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। পরে তারা পাচক এনজাইমযুক্ত তরলে পড়ে ডুবে যায় এবং উদ্ভিদটি তাদের হজম করে ফেলে। কিছু উদ্ভিদ পিঁপড়াদের প্রলুব্ধ করার জন্য মইয়ের মতো আকৃতি তৈরি করেছে যাতে তারা সহজেই মারাত্মক ফাঁদে পা দিতে পারে।

অন্য কিছু উদ্ভিদ আঠার ফাঁদ তৈরি করে।

বার্ন্ড ভাইলব্রেনার ব্যাখ্যা করেন, “এখানে রয়েছে সানডিউ উদ্ভিদ। এটি পোকামাকড়কে তাদের শিশিরের দিকে আকৃষ্ট করে। সানডিউ বলতে এই আঠালো ফোঁটাগুলোকে বোঝায় যা সূর্যের আলোতে ঝলমল করে। কীটপতঙ্গ উড়ে যাওয়ার সময় এর আকর্ষণীয় গন্ধ পায়। কিন্তু একবার এর ওপর বসলে আঠালো ফোঁটাগুলোতে আটকা পড়ে। এই শুঁড়ের মতো জিনিসগুলো তখন পোকাটিকে পাতার মাঝখানে ঠেলে দেয়। কখনও কখনও পাতাটি পোকার চারপাশে কুঁকড়ে যায় এবং এনজাইমগুলি আটকে থাকা শিকারকে হজম করতে শুরু করে।”

বাটারওয়ার্টও পাতায় আঠালো তরল দিয়ে ছোট পোকা শিকার করে। যত বেশি শিকার করে, এটি ততই বড় হতে থাকে এবং ফুল ফোটায়।

সবচেয়ে পরিচিত মাংসাশী উদ্ভিদ হলো ভিনাস ফ্লাইট্র্যাপ। এটি শিকারকে চারপাশে আটকে পাতার পাঁপড়ি বন্ধ করে দেয়। মার্কিন পূর্ব উপকূল থেকে উদ্ভূত এই উদ্ভিদের প্রাণঘাতি ফাঁদ দেখে এমনকি চার্লস ডারউইনও চমৎকৃত হয়েছিলেন।

বার্ন্ড ভাইলব্রেনার বলেন, “এই উদ্ভিদ তার ফাঁদে মধু নিঃসৃত করে। এর ভিতরে ছোট লোম রয়েছে। মাছি যখন রস চাটে, এই লোমগুলো সক্রিয় হয়। প্রথমবার উদ্ভিদটি সময় নেয়। দ্বিতীয়বার উদ্ভিদ বুঝতে পারে যে পাতায় কিছু একটা আছে, মধু চুরি করছে। তখন দ্রুতই পাতা বন্ধ হয়ে যায়। পিঁপড়ার মতো ছোট প্রাণী বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু মোটা আকারের মাছি তা পারে না। এরপর উদ্ভিদ একটি বিশ্লেষণ চালায়। আটকা পড়া বস্তুটি কি প্রোটিন সমৃদ্ধ নাকি না? না হলে, দ্রতই পাতা খুলে দিয়ে শিকারকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়। এর যদি শিকার প্রোটিন সমৃদ্ধ হয়, তবে উদ্ভিদটি সেটি হজম করতে শুরু করে।”

প্রকৃতির সবচেয়ে অসাধারণ কৌশলগুলোর একটি আশ্চর্যজনক উদাহরণ হচ্ছে এইসব মাংসাশী উদ্ভিদ।

অনন্যা /এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ