Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদরাসা-ছাত্রী ধর্ষণ: হোক সামাজিক প্রতিরোধ

সম্প্রতি ধর্ষণ অতিমাত্রায় বেড়েছে। কন্যা শিশু থেকে নারী কেউই ঘরে-বাইরে নিরাপদ নয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ধর্ষকের সুবিধা এই যে, তারা মনে করে শিশুকে ধর্ষণ করে পার পাওয়া যাবে। অর্থাৎ শিশুদের তো বুদ্ধি বা ভালো-মন্দ জ্ঞান যথেষ্ট থাকে না। বোঝার ক্ষমতাও তৈরি হয় না। কী ঘটছে তার সঙ্গে! তাই তারা এর ফারাকও করতে পারে না। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ধর্ষকশ্রেণি বিকৃত রুচির প্রকাশ ঘটায়। শিশুকে ধর্ষণ করে! বর্তমানে কোনো শিশুই নিরাপদ না। আর এর প্রধান কারণ শিশুদের গুচ টাচ, ব্যাচ টাচ বা যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকা!

একশ্রেণির মানুষ মনে করেন কন্যা শিশু বা নারীদের যতটা অবরুদ্ধ করে রাখা হবে তারা ততটা নিরাপদ। কিন্তু ভেবে দেখা বাঞ্ছনীয় যে, ঘরেও শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে! নারীরা যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ ঘরে-বাইরে কোথাও তারা নিরাপদ নয়। এলক্ষে যতদিন বিকৃত রুচির পরিবর্তন না হবে ততদিন শিশু বা নারী কেউই রক্ষা পাবে না!

এখন ভয়াবহ বেড়েছে ছেলে বাচ্চাকেও ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন! তাদেরও ছাড় নেই রুচিহীন ব্যক্তিদের হাত থেকে! আমরা একটা কঠিন সময় পার করেছি। যে সময়ে এসে কন্যা শিশু বা নারীরা কেউ নিরাপদ নয়। তারা কোনো না কোন ভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে!

৩-৪ বছরের বাচ্চা থেকে বড় কাউকে বিকৃতের মস্তিষ্কের মানুষদের থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না! কঠোর শাস্তি নিশ্চিত না করলে এই ভয়াবহ ও ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। প্রতিদিনই নানারকম ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে! যেখানে দেখা যাচ্ছে শিশু বা নারী কেউ ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না! তাদের বিকৃত রুচি, মানসিক দীনতার কাছে শিশু-নারী শিকারে পরিণত হচ্ছে!

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে স্থানীয় মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে ধর্ষক সোলাইমান হোসেনকে আটক করেছে। এখন কথা হলো অধিকাংশ ব্যক্তিই নারীর দিকে আঙুল তোলেন যে, যে নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ ঠিক থাকে না বা প্রচলিত বোরখা, হিজাব পরিধান করে অবরুদ্ধ না থাকে তারা ধর্ষণের শিকার হন। এমন একটা সাধারণ কথা বলে থাকেন অনেকেই। কিন্তু এই ছোট্ট শিশুটির কী দোষ? সে তো আবার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীও! তাকে কী দায়ে দায়ী করবে এ সমাজ?

মূলত এ সমাজের যারা নারীর দিকে আঙুল তোলে বা নারীর দোষ খুঁজতে উদ্যত থাকে তারা জানেনই না যে, পোশাক একটা আবরণ। কিন্তু শুধু পোশাকের জন্য সমাজে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে না! আবার কেউ কেউ যুক্তি মেলায় সমাজে এমন কিছু চলাচল থেকে ধর্ষক উত্তেজিত হয়েই তার লালসা নিবৃত্ত করে! সেক্ষেত্রেও যুক্তি দাঁড় করায়! কিন্তু অধিকাংশই বিশ্বাস করলেও স্বীকার করতে দ্বিধা করেন যে, শিশু বা নারীদের সমস্যা না। সমস্যা ধর্ষকের মানসিকতার। তার দৈন্য ও হীনচেতা মনের। যে কিনা একটি ছোট্ট শিশুকেও জব্দ করে পাশবিকতার সাহায্য! বিকৃত ও কামুক লালসা চরিতার্থ করতে চেষ্টা করে! এই শ্রেণির জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ কঠিন শাস্তির আওতায় না আনা গেলে আমাদের সমাজ ক্রমাগত তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। শিশু ও নারী প্রত্যেকেই এভাবেই নির্যাতনের শিকার হতে থাকবে!

তাই সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিশু ও নারীদের রক্ষার স্বার্থে মানবিক হতে হবে। মনের কলুষতা দূর করতে হবে। শিশু ও নারীরাও মানুষ সেই বোধ তৈরি করতে হবে। মানবিক সমাজ যতদিন না গড়ে তোলা যাচ্ছে ততদিন নারী ও শিশুদের রক্ষা করা কঠিন! স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালগুলোতে মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ হিসেবে শিশু ও নারীকে মূল্যায়ন করার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। তবেই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এসব ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে!

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ