মানসিক সুস্থতায় মেডিটেশন
মেডিটেশন বা ধ্যান মানসিক বা শারীরিক সুস্থতার অনবদ্যভাবে কাজ করে। মেডিটেশন বা ধ্যান সুস্থতার পাশাপাশি মানুষের মনের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়। মেডিটেশন মানুষকে হতাশা, বিষণ্ণতা, হিংসা, অস্থিরতা থেকে দূরে সরিয়ে আনে। মানুষ তার মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধ্যানে বসে বা মেডিটেশন করে। শুধু মস্তিষ্ক নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সাথেও মেডিটেশনের সম্পর্ক রয়েছে।
মেডিটেশন বা ধ্যানের বেশ কিছু ইতিহাস, ব্যাখ্যা ও ধরন রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে কবে ধ্যানের উৎপত্তি হয়েছিল তা অজানা থাকলেও প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষকগণ একমত যে তা প্রায় ৫০০০ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করেছিল। ৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জাপানে প্রথম ধ্যান হল খোলা হয়। অষ্টাদশ শতকে ধ্যানের প্রাচীন শিক্ষার অনুবাদ পাশ্চাত্যে পৌঁছায়। বিংশ শতকে ধ্যানের বিভিন্ন মেথড উদ্ভাবিত হয়। (সংক্ষিপ্ত ও সংগৃহীত)
অভিধানসমূহ ল্যাটিন অর্থ ‘গভীরভাবে চিন্তা করা’ পাশাপাশি জনপ্রিয় ব্যবহারিক অর্থসমূহ যেমন সময় ধরে মনকে কেন্দ্রীভূত করা। মেডিটেশন বা ধ্যান মানুষকে স্থির থাকতে সাহায্য করে। মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে মেডিটেশন বা ধ্যান।
মেডিটেশন বা ধ্যান করার নানা ধরণ রয়েছে। রয়েছে অনেক ধরনের নিয়ম সাথে রয়েছে কিছু ভাবনা। আমরা সাধারণত জানি যে, সোজা হয়ে বসে কোলে বা হাঁটুতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে মেডিটেশন করতে হয়। তবে ধ্যানের মাধ্যমেই মেডিটেশন করতে হবে এমনটা নয়। কিছু অপ্রচলিত মেডিটেশনের মধ্যে আছে হাঁটা, হাইকিং, মাছ ধরা, সাঁতার কাটা, সার্ফিং, পেইন্টিং, বাইকিং, বই পড়া বা বাগান করা। এসব কাজ যদি মনকে শান্ত করে তাহলে আপনি ঠিক পথেই আছেন। মনকে স্থির রাখে, ধৈর্য্য শক্তি বাড়ে, চিন্তা চেতনার উন্নতি ঘটে সেই সব কাজও মেডিটেশন বা ধ্যানের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
মেডিটেশন বা ধ্যানের স্থায়িত্বকাল নিয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকই বলেন যে, ধ্যানে মনোযোগ দিতেই পারি না এক বা দুই মিনিট বসাই কঠিন হয়ে যায়। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। শুরুর দিকে দুই মিনিট বসতে পারা মানে ধ্যান হচ্ছে না এমন নয়। দুই মিনিট থেকেই ধীরে ধীরে পাঁচ মিনিট তারপর দশ মিনিট এরপর ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুযায়ী সময় বাড়াতে হবে। শুধু ধৈর্য ধরে নিয়মিত ধ্যানে বসার অনুশীলন করতে হবে। নিয়মিত মেডিটেশন অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ নিজের লক্ষ্য স্থির করতে পারেন এবং সেখানে পৌঁছাতে পারেন। ধ্যান অনুশীলন মানুষকে যেমন সাফল্য এনে দেয় তেমনি নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দূর করে ও হতাশা কাটাতে সাহায্য করে। ধ্যান মানুষকে বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।
মেডিটেশনের প্রস্তুতির জন্য সময়,পরিবেশ, পোশাক,খাবার এই বিষয় গুলো মাথায় রাখা জরুরি।
• ধ্যান করার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকালে সূর্য ওঠার আগে এবং বিকেলে। সময়টা সকাল অথবা বিকেল। এই সময়গুলোতে সূর্য এবং পৃথিবী ষাট ডিগ্রী কোণে অবস্থান করে। দিনের অন্যান্য সময়ও ধ্যান করা যায়। তবে যেই সময়ে ধ্যান করা হোক না কেন সেটা যাতে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
• কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি ঘর বা খোলা জায়গা হলো ধ্যানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। ঘর বা জায়গাটা হতে হবে এমন যেখানে বাতাস চলাচল করে। গুমোট কোন জায়গা ধ্যানের জন্য উপযুক্ত নয়। হালকা আলোর বাতি জ্বালিয়ে মেডিটেশন বা ধ্যান করলে মনঃসংযোগ করা সহজ হয়।
• মেডিটেশন বা ধ্যানের জন্য পোশাক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতির পোশাকে শরীরের তাপমাত্রার রেগুলেশন ভালো হয়। ধ্যান করা অবস্থায় মহাবিশ্বের শক্তির সঙ্গে ব্যক্তির শরীরের শক্তির আদান-প্রদান হয়। ।
• একবারে খালি পেটে বা খুব ভরা পেটে মেডিটেশন করতে হয় না। মেডিটেশন শুরু করার আগে পানি বা ফলের জুস খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
মেডিটেশন বা ধ্যান মানুষের মস্তিষ্কের সুস্থতার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা এবং শারীরিক ভারসাম্যকে ঠিক রাখে। বিষণ্ণতা ও হতাশা মুক্ত জীবনযাপনে সহায়তা করে। সুস্থ শুদ্ধ ও সুন্দর চিন্তাভাবনা করতে সাহায্য করে। মানুষকে ধৈর্যশীল তৈরি করে।