গুড টাচ-ব্যাড টাচ: আমাদের বিদ্যালয়েও এমন শিক্ষা জরুরি
ভারতের বিহারের এক স্কুল শিক্ষিকার গুডটাচ, ব্যাড টাচ সম্পর্কে সচেতন করতে শিক্ষাপ্রদান ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে একজন স্কুল শিক্ষয়িত্রী তার শিক্ষার্থীদের গুড টাচ, ব্যাড টাচ সম্পর্কে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা দান করছেন। তিনি বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রথমে মুখে বলে বাচ্চাদের বেঝানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা স্পর্শগুলো সম্পর্কে সচেতনভাবে বুঝতে অক্ষম ছিল। তারপর তিনি তাদের ডিটেইলস বলার পাশাপাশি, টাচ করেও বোঝাতে চেষ্টা করেন। এতে করে ছোট্ট বাচ্চারা গুড টাচ, ব্যাড টাচ সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। যার মাধ্যমে তারা অসাধু লোকদের থেকে সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারে।
আমরা জানি বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে শিশুরাও বিশেষভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাতেও ছেলে বা মেয়ে কোনো বাচ্চাই নিরাপদ নয়। বর্তমান একশ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ শিশুদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের দ্বারা বিকৃত লালসা পূর্ণ করছে। যার প্রভাব দিনকে দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এর ফলে বিহারের শিক্ষিকার এ ধরনের উদ্যেগ সত্যিই প্রশংসনীয়। পাশাপাশি এই উদ্যোগ থেকে আমাদেরও শিক্ষা লাভ করা জরুরি। কারণ আমাদের দেশেও শিশুরা বিভিন্নভাবে অনিরাপদ হয়ে উঠছে। তাই তাদের মধ্যেও এ ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়েজন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবসময়ই আলোর পথে চলতে শিক্ষা দেয়। তবে সেই আলো শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় যেনো সীমাবদ্ধ না থাকে। কোমলমতি শিশুরা যাতে তাদের চলার পথেও কাজে লাগাতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের শিশুদের নৈতিক শিক্ষা, ভালো-মন্দের জ্ঞান যেমন দেওয়া জরুরি ঠিক তেমনই নিরাপত্তার খাতিরে গুড টাচ, ব্যাড টাচ সম্পর্কেও সমানভাবে শিক্ষা দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সামনে ছোট ছোট সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, ভিডিওচিত্র দেখাতে হবে। লজ্জা বা কোনপ্রকার সংকোচের দিনশেষ। সন্তানদের নিরাপদে বেড়ে তুলতে এখন সময়ের প্রয়োজনীয়তাকে মানতে হবে। গোঁড়ামি করে সন্তানকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।
শিশুদের ছোট থেকেই ‘গুড টাড-ব্যাড টাড’ বোঝা জরুরি। ভারতীয় শিক্ষিকা খুদে পড়ুয়াদের সাবলীলভাবে শিখিয়েছেন ভাল এবং খারাপ স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য কী? ওই শিক্ষিকার বৌদলতে হলেও আমাদেরও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আর চুপ থাকার সময় নেই। দিন দিন বাচ্চারা এতটা অনিরাপদ হচ্ছে সে থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারে এ ধরনের উদ্যোগ।
আজকাল ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছে। তাই যৌন শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করেছে প্রশাসনও। সেই প্রেক্ষিতে ঠিক স্পর্শ বোঝা এবং ভুল স্পর্শ বুঝতে পারলে যে জোর গলায় প্রতিবাদ করতে হয় তাও বুঝিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। ভাইরাল ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, শিক্ষিকা যখন এক খুদে ছাত্রীর বুকে ও থাইয়ে হাত দেন তৎক্ষণাৎ সেই পড়ুয়া হাত নাড়িয়ে বোঝায় যে এটি ব্যাড টাচ। এমনকী শিক্ষিকা যখন শিশুকে বলে, ‘আমি তো ভালোবাসছি’, তখনও ছাত্রী জোর গলায় বলে, ‘না এটা ব্যাড টাচ’। এরপর আদর করে কাছে টেনে শিক্ষিকা বুঝিয়ে বলেন, ‘বাড়ির কোনও গুরুজনও এমন ব্যাড টাচ করলে সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ করতে হবে।’ আমাদের স্কুল-মাদ্রাসাগুলোতেও কোমলমতি শিশুদের এমন শিক্ষা প্রদানে অগ্রসর হতে হবে।
স্পর্শ কখনও কখনও নিছক ছোঁয়া নয়। তার মধ্যে থাকে বিকৃতি কিংবা দুরভিসন্ধি। তাই তো শিশুদের ছোট থেকেই ‘গুড টাড-ব্যাড টাড’ বোঝা জরুরি। তবে শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই নয়, সহজভাবে মেশার মাধ্যমে খুদেদের বোঝানো উচিত স্পর্শের আসল উদ্দেশ্য। ঠিক যেমনটা করেছেন ওই ভারতীয় শিক্ষিকা। যিনি খুদে পড়ুয়াদের সাবলীলভাবে শিখিয়েছেন ভাল এবং খারাপ স্পর্শের মধ্যের পার্থক্য কী!
বর্তমানে যুগে ছোট থেকেই সমাজের খারাপ বিষয়গুলোর সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করানো জরুরি। শুধু ওয়াকিবহাল থাকাই নয়, প্রয়োজন যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সঠিক শিক্ষাও। আর শিশুদের বাবা-মা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চেয়ে কেই বা ভালো শিক্ষা দিতে পারে! তাই বাড়িতে অভিভাবকরা সন্তানদের ব্যাপারে যেমন উদ্যোগী হবেন ঠিক পাঠ্যের বাইরে এসব শিক্ষা বিদ্যালয়েও দিতে হবে। নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিহারের ওই শিক্ষিকার থেকে অন্তত এটুকু বোধ আমাদেরও জন্মানো উচিত যে, আর চুপ থাকার সময় নেই। সংকোচকে হটিয়ে সচেতন করতে হবে। যৌন হয়রানির মতো বিকৃত মস্তিষ্ককে রুখতে হলে আওয়াজ তুলতে হবে। নিরাপদ পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক আমাদের প্রত্যেকটি সন্তান। তারাই আমাদের আগমী। তাই তাদের সঙ্গে কোনোপ্রকার ছলচাতুরী নয়। শিক্ষা হোক খোলামেলা যার দ্বারা জীবনবোধের সুশিক্ষা পেয়ে দেশ-দশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হোক।