ফুলপরীর প্রতি ন্যায়বিচার: মুক্তিপাক নারী
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। বিভিন্ন স্থান থেকে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর একশ্রেণির শিক্ষার্থীরা জোর-জুলুম করে। র্যাগিংয়ের নামে কখনো কখনো এই নির্যাতনের চিত্র এতটাই ভয়াবহ হয় যে, অন্যের জীবন নাশও করে তা। তবু দিনকে দিন নির্যাতনের চিত্র বাড়ছে। যদিও পূর্বে এ চিত্র বিশেষভাবে ছেলেদের মধ্যে দেখা যেতো কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে র্যাগিংয়ের শিকার নারী শিক্ষার্থীরাও হচ্ছে। এই নির্যাতন এতটাই কদর্য যে, একজন নারী হয়ে অপর নারীর সম্ভ্রম ও সম্মানের কথা বিবেচনা না করেই তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে বিকৃত বাসনা পূর্ণ করছে!
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে মানুষ বিশ্বের বিদ্যা গ্রহণের জন্য। অর্থাৎ স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে মুক্তাঙ্গনে মুক্তভাবে পাখির মতো জ্ঞানের স্ফূরণ ঘটে। কিন্তু জ্ঞানভাণ্ডারের সন্ধানে আসা শিক্ষার্থীরাও বিভৎসতার শিকার। তারা নানাভাবে হলে, ডিপার্টমেন্ট নির্যাতনের শিকার হন। তবে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত হলে এমন আচরণ করার আগে নির্যাতনকারী দশবার ভাববে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী নির্যাতনের ঘটনা সবারই কমবেশি জানা। কতো কদর্য মানসিকতা হলে এমনভাবে রাতভর আরেক নারীকে নির্যাতন করা যায়! এবং এমন কাজের সাগরেদও রয়েছে! সত্যি আজকাল মানবিকতা-মনুষ্যত্বের শিক্ষা এতোটাই ক্ষীণ যে, মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি কতটুকু শ্রদ্ধা-মূল্যবোধ রাখা উচিত সেটাও আমরা ভুলতে বসেছি! তবে দিনশেষে ফুলপরীর প্রতি ন্যায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই আশাবাদী।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে’র ছাত্রী ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ২৬০তম জরুরি সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ফুলপরীর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, অভিযুক্তদের এমন শাস্তিতে ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ফুলপরী। অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফুলপরী বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাঁচজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে। উনারা অপরাধ করেছেন, সেজন্য শাস্তি পেয়েছেন। এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যদি এরকম বিচারব্যবস্থা থাকে তাহলে এরকম কাজ আর কখনো হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদভাবে পড়াশোনা করতে পারবে।
অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আবেদনও জানান।
ফুলপরীর ওপর নির্যাতন এক ধরনের পাশবিক অত্যাচার। রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি অভিযুক্ত নারীরা নিজে নারী হয়ে অন্য নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি! নারী হিসেবে যা চরম লজ্জার! বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি সিদ্ধান্ত সত্যি প্রসংশনীয়। দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এটি একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। দিনকে দিন যেভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে এসে লাগামছাড়া আচরণ করছে তাতে করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সত্যি দৃষ্টান্ত। অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা অন্তত নির্ভীকচিত্তে ক্যাম্পাসে বিচরণ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রশাসন তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ফুলপরীর মতো অসংখ্য শিক্ষার্থী মনোবল পাবে। তাদের ওপর অন্যায় হলে যে, বিশ্ববিদ্যালয় হাতগুটিয়ে বসে থাকবে না এটাই তার প্রমাণ। এভাবেই পাশে থাকুন শিক্ষাঙ্গনগুলো। সন্তানদের বুকে লালন করুক। তাদের প্রতি অন্যায় হলে দ্বিতীয় অভিভাবকের গুরু দায়িত্ব পালন করতে দ্বিধা না করুক। যাতে ফুলপরীরা নিশ্চিন্তে লেখাপড়া করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ খ্যাত “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়”-এর আবরার ফারহাদের ঘটনা আজও জনমনে দগদগে ঘা হয়ে আছে! তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ, র্যাগিংয়ের নামে বিবস্ত্রকরণ, ভিডিও ধারণ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো খুব কদর্য এবং বিভৎস। ছাত্র-ছাত্রী কেউ-ই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পায়নি এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। তবে ফুলপরীর এই যুগান্তকারী ঘটনা এবং এর শাস্তি নিশ্চিতকরণে আশাকরা যায় কিছুটা হলেও টনক নড়বে উচ্ছৃঙ্খল-বিকৃত ছাত্র-ছাত্রী নামধারী পশুদের! এভাবেই প্রতিহত হোক সব বাধা-বিপত্তির। আর এভাবেই জাতির সূর্যসন্তানেরা তাদের কলঙ্কগুলো ঝেড়ে-মুছে মানুষের দীক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাক। মুক্তি পাক নারী। মুক্ত হোক দেশ-জাতি।