Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসএসসিতে সাফল্য: বাধার দেয়াল পার হয়ে যাক নারী

মাধ্যমিক স্তরের সর্বোচ্চ পরীক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শুক্রবার (২৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশিত হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে ফলের অনুলিপি এবং পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এ বছর এসএসসি ও সমমানে গড় পাস করেছেন ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার এই পাসের হার ছিলো ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এসএসসি পরীক্ষায় এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ জন। এদিকে এবছর মোট জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন এবং ছাত্রী ৯৮ হাজার ৬১৪ জন। গত কয়েকবছর ধরে ছাত্রীদের ভালো ফল করার রেকর্ড রয়েছে। এদিক থেকে ছেলে শিক্ষার্থীরা বেশ পিছিয়ে পড়েছে! কিন্তু তাদের এই পিছিয়ে পড়ার সঠিক কারণ জানা যায়নি!

যদিও আমাদের সমাজে মেয়েদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে জীবনযাপন করা লাগে। পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে মেয়ে সন্তানকে তাদের প্রতিও নজর দেওয়া লাগে! ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে অনেকটাই কম। তবে এমনভাবে একতরফা দেখারও কারণ নেই। জীবন চলার পথে সবাই এক ঘোর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে চলছে। তবে সময়টাকে কে কতোটা সঠিকভাবে যাপন করতে পারছে সেটা বড় বিষয়। এখনকার তরুণ ও যুবকদের মধ্যে নানা ধরনের গেইমসের আসক্তি বেড়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রুপে ভালো-মন্দ না বুঝেই অনলাইনে অধিক সময় ব্যয়ও করছে। ফলে সেদিকটাও একটি কারণ ছাত্রদের পিছিয়ে পড়ার।

পূর্বে মেয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়তে দেখা গেছে বেশি। করোনাকালেও প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে ঝরে গেছে। কিন্তু একটা বিষয় স্বীকার্য যে, মেয়ে শিক্ষার্থী পড়াশোনায় সময় ব্যয় করে বেশি। আর তাদের অধ্যবসায় ও সাধনার ফলে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে। অভাব-অনটন-নদীভাঙন কোনোকিছুই মেয়েদের টলাতে পারে না। বর্তমানে মেয়েরা জানে, লেখাপড়া তাদের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে, নিজের অধিকার বুঝতে হলে, পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। ফলে দেখা যাচ্ছে শেষপর্যন্ত মেয়েরা ভালো ফল করতেও সক্ষম হচ্ছে।

মাদারীপুর শিবচরের বন্দরখোলা ইউনিয়নের ভ্যানচালক আব্দুল কুদ্দুস। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালানো তার জন্য কষ্টকর। তবে অদম্য মনোবল থাকলে সব জয় করা সম্ভব, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে শারমিন। ২৮ জুলাই প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলে জানা যায়, স্থানীয় নুর উদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে শারমিন। শিবচর উপজেলার নদীভাঙন, চরাঞ্চল ও বন্যাকবলিত এলাকা বন্দরখোলা চরের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার। নদীভাঙন আর অভাব তাকে ঠেকাতে পারেনি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের পড়াশোনা ঠিক রেখেছে সে। তার এই অদম্য মনোবল তাকে সামনের পথচলাকে মসৃণ করেছে। শারমিনের এমন ঐতিহাসিক জয় প্রত্যেকের জন্য অনুপ্রেরণার। মনোবল থাকলে শত বাধাও ডিঙানো যায়, শারমিন তা প্রমাণ করেছে।

শুধু শারমিন নয় আরও প্রেরণা যুগিয়েছে নিপা। যে কিনা এক আঙুলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে এবারের এস.এস.সি.। নিপার পরিবার জানায়, ২০০৭ সালে নিপার জন্ম হয়। জন্মের সময় নিপার বাঁ হাত কবজি পর্যন্ত হয়। আর ডান হাতে একটি আঙুল হয়। ছোটবেলা থেকেই সে একটি আঙুল দিয়ে নিজের কাজকর্ম করে। তাকে ৭ নম্বর চরচটাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলে সে এক আঙুল দিয়ে লেখার পদ্ধতি রপ্ত করে। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর তাকে আংগারীয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে।

আংগারীয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। জিপিএ-৩.৭২ পেয়ে সে পাস করেছে। আমাদের সমাজে নারীদের যত প্রতিবন্ধকতাই থাক তাদের মনোবলের কাছে সব ধ্বসে পড়ে। এই তরুণীরা প্রমাণ করেছে জীবনে চলার পথ কঠিন হলেও যদি মনের জোর থাকে তব সব বাধা অতিক্রম করা যায়। তাদের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রেরিত হোক সবাই। যারা জীবনের প্রতিটি পথে কিঞ্চিৎ ঠোকর খেলেই জীবন বিস্বাদ ঠেকে! তাদের কাছে নারীদের এগিয়ে যাওয়া গর্বের হোক। অনুপ্রেরণার হোক।

যেখানে একজন ছেলে সন্তানের জন্য অভিভাবকরা ভালো শিক্ষক – ভালো স্কুলের ব্যবস্থা করেন সেখানে এই নারীরা বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে এসে দেখিয়েছে তারা তাদের মনোবল, আত্মশক্তির জোরে সব অতিক্রম করতে সক্ষম। এবারের এস.এস.সি. ফলাফল, নারীদের এগিয়ে থাকা, এই অদম্য নারীদের দুর্নিবার যাত্রা সবই নারীদের পথকে সুপ্রসারিত করবে। জীবনের পথে যারা থমকে যেতে চায়, হতাশায় জীবনবিমুখ হয়ে পড়ে তাদের জন্য বড় উদাহরণ এই নারীরা। এভাবেই এগিয়ে যাক নারীরা। সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আহরণ করুক অদম্য মনোবলের সঙ্গে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ