Skip to content

৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবিনাদের বেতনবৈষম্য দূর হোক

বিশ্বের সব দেশেই নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য প্রকট। পুরুষ যেখানে কাজের জন্য গড়ে দশ টাকা পায়, সেখানে নারীর কপালে দুই টাকাও জোটে না। অর্থাৎ নারীর জন্য বেতনের জায়গাটা সংকুচিত। এই সমাজে শুধু বেতন বৈষম্যই নারীকে ঘিরে রেখেছে এমন নয় বরং সর্বত্র নারী শৃঙ্খলাবদ্ধ! বর্তমানে নারী ফুটবলারদের জয়জয়কার সর্বত্র। তবু তাদের জন্য যথেষ্ট টাকা বরাদ্দ নয়। এমনকি তাদের বেতন নিয়েও হেলাফেলা দেখা যায়।

জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। আগে তা মৌখিকভাবে বললেও এবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনও বলেছেন, ‘সাবিনারা একটা চিঠি দিয়েছেন।’ তারা বেতন বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। এই চিঠিতে উল্লেখ আছে, তারা মাসিক ৫০ হাজার টাকা বেতন চান। চার মাস অন্তর আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলতে চান। ক্যাম্পে সিনিয়র ফুটবলারদের মধ্যে আছেন ২৯ জন। এই ২৯ জনই বেতন বাড়ানের পক্ষে দাবি জানিয়েছেন। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সভাপতি সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের দাবিও জানিয়েছেন। ওই সময় বোর্ড রুমে তাদের মিটিং হয়। এই মিটিংয়ে তারা তাদের দাবি-দাওয়া জানিয়েছেন। এই ইস্তেহারে যুক্ত করেন বুটের। যদিও আগেই তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল। তবু নারী ফুটবলাররা পুনরায় দাবি জানিয়েছেন।

আমরা জানি, বাফুফের সভাপতি সালাউদ্দিন সবসময়ই বলে আসছেন, নারী খেলোয়াড়দের দাবি যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। ফুটবলাররা যেখানে একটা স্থায়ী সমাধান চান, সেখানে বাফুফের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তারা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে এই বলে যে, বাজেট নাহলে তাদের পক্ষে সম্ভব নয় সবকিছু বহন করা! তাহলে কি কোনোদিনই নারী খেলোয়াড়রা তাদের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাবেন না!

বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সবার সংসার-জীবনযাপন করা দায় হয়ে পড়েছে। আমাদের নারী ফুটবলারদের বেশিরভাগেরই যে আর্থিক অবস্থা সংকটাপন্ন, তা নানা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেখা গেছে, অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। এর ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনধারণ খুব কষ্টের! এই নারীরা যদি পরিবারিকভাবে স্বস্তি ও শান্তিতে না থাকেন, তবে খেলার মাঠে তারা নিজেতের শ্রেষ্ঠ নৈপুণ্য দেখাতে পারবেন না; এটাই স্বাভাবিক। ফলে যারা দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সুনাম বৃদ্ধি করছে, দেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করাচ্ছে তাদের জন্য রাষ্ট্রেরও দায় থাকা প্রয়োজন।

কিছু দিন আগেই ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পে ফিরেছেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। সামনে এশিয়ান গেমস। গুরুত্বপূর্ণ খেলা এই সময় আবার ছুটিতে গেছেন সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। ১ আগস্ট এশিয়ান গেমসের জন্য ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বাফুফের পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে এই সময়টা নারী ফুটবলারদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কোনোভাবেই নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্য কমছে না। আমরা জানি, সমাজের কতটা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একজন নারীকে এগিয়ে যেতে হয়। তারওপর খেলার মাঠে নারী সে তো অকল্পনীয় জগতের নাম। তবু আমাদের নারীরা সেই প্রতিবন্ধকতাকে দলে-পিষে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। সাফল্যের মুখও দেখাচ্ছে দেশবাসীকে। কিন্তু যখন তাদের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ে, তখন কারও সরব উপস্থিতি নেই! এমনকি নারী ফুটবলাররা তাদের দাবি জানালোও সেখানে গড়িমসি। নারী ফুটবলারদের সুদিন ফিরিয়ে দিতে তাদের আরও অগ্রগামী করতে বেতনবৈষম্য দূর হোক। একটা স্থায়ী সমাধানে আসা উচিত। সাবিনাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান জানানো উচিত। বাফুফের কার্যকরী ভূমিকা পালন করা উচিত। সবার সুবুদ্ধির উদয় হোক।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ