Skip to content

২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গুতে নারীর মৃত্যু বেশি: সচেতনতা জরুরি

বর্তমানে ডেঙ্গু মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। কোনভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনিই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হসপিটালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ নিয়ে যতটুকু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে তা খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। এর জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া আবশ্যক। যদি প্রত্যেকেই নিজ জায়গা থেকে সচেতন না হয় তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাওয়া অসম্ভব নয়!

এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেখানে নারীর সংখ্যাই অধিকাংশ। আইইডিসিসিআর – এর এক রিপোর্টে দেখা গেছে যেই নারীদের মৃত্যু হয়েছে তাদের অধিকাংশের বয়স ১৮-৪০। তবে এই বয়সের নারীদের মৃত্যুহার কেনো বেশি সে সম্পর্কে কোনোই সুরহা হয়নি!

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। আর বয়স ভিত্তিক বিভাজনে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮-৪০ বছর বয়সীদের হার বেশি। কিন্তু কী কারণে এমনটা ঘটছে সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কোনো বিশ্লেষণ নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি!
আমরা জানি, দেশে যেকোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সেই রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং তা সম্পর্কে সাধারণকে জানানো, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সবই করে সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮-৪০ বছর বয়সী নারীদের কেনো মৃত্যু ঘটছে, এমনকি ডেঙ্গুতে নারীদের কেনো মৃত্যুহার বেশি তা নিশ্চিত নয়! যদিও রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই বয়সী নারীদের মৃত্যুর পিছনে হয়তো কোনো বিশেষ কারণ থাকতে পারে!

চলতি বছর ২৮ হাজার ৪৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে । আর মারা গেছে ১৫৬ জন। এর মধ্যে নারী ৮৯ জন। এবং পুরুষ ৬৭ জন। এ সময়ে রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ১৭ হাজার ভর্তি রোগীর মধ্যে ১২২ জন ও সারা দেশে সোয়া আট হাজার ভর্তি রোগীর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বয়সভিত্তিক হিসাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহারে সবচেয়ে এগিয়ে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। মোট মৃত্যুর ৪০ শতাংশ এ বয়সী নারী ও পুরুষ। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছে নারীরা। এ বয়সী মৃত মোট ৬২ জনের মধ্যে ৪৩ জনই নারী। শতকরা হিসাবে ৬৯ শতাংশ নারী ও ৩১ শতাংশ পুরুষ। বাকিদের মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী আটজন, পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সী আট, ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী ১৭, ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩৬, 60 থেকে ৮০ বছর বয়সী ২২ এবং ৮০ বছরের উর্ধে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার হিসাবে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মোট রোগীর সোয়া নয় হাজারই এ বয়সী পুরুষ। এ বয়সী রোগাক্রান্ত নারীদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, চিকিৎসকের কাছে দেরিতে আসার কারণে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুহার বেশি। একই সঙ্গে এ বছর এডিস মশার আচরণ পরিবর্তন ও ভাইরাসের রূপান্তরের কারণে মৃত্যু প্রভাবিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ বা গবেষণা না থাকায় এ বয়সী নারীদের মৃত্যু বেশি হওয়ারও সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে সবার সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু মহামারী থেকে জাতিকে রক্ষা করতে। শুধু সরকারি উদ্যোগের ওপর ভরসা করে থাকা বোকামি। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি সবাইকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

বাড়ির পাশের ডোবা, নালা, ফুলের টব অর্থাৎ যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে পারে সেই স্থান ধ্বংস করতে হবে। আমরা জানি, স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা তার বংশবৃদ্ধি করে! যদি এখন এর আচরণ পরিবর্তন হয়েছে। তাই বাড়ির আশেপাশের ডোবা-নালার পানি পরিষ্কার করতে হবে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পারে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ