বন্ধ হোক বডি শেমিং
বডি শেমিং একটি মানসিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাধি। হয়তো বা কষ্ট দেওয়ার জন্য কিংবা মজা করে হয়তো বা হাসির ছলে অথবা নিজেরা বলে আনন্দ পাওয়ার জন্য নানানভাবে বডি শেমিংয়ের চর্চা হচ্ছে। তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ফ্যাশন মঞ্চ থেকে রাস্তাঘাট; কোথাও বাদ পড়ছে না বিষয়টি। অন্যের দৈহিক আকার, বর্ণ, সাজসজ্জা, অঙ্গের তথাকথিত ত্রুটি-বিচ্যুতি, হ্রাস-বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে তাকে দু’চার কথা শুনিয়ে চুপিচুপি আত্মশ্লাঘা অনুভব করা, ঠাট্টার ছলে হুল ফোটানোর এই বদভ্যাস আদতে বিকৃতি।
মোটা হলে আলুর বস্তা, চিকন হলে পাটকাঠি, ফর্সা হলে টিউব লাইট, লম্বা হলে তালগাছ; এমন কত ধরনের মনগড়া মন্তব্য খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের হেয় করার জন্য এ ধরনের কথা বলা হয়। একবারও ভেবে দেখেছেন ,এসব বলায় কারও জীবন পরিবর্তন হয়ে যাবে না। গায়ের রঙ, স্বাস্থ্য, বাহ্যিক সৌন্দর্য বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলা কেবলই একটা মানুষের বিষাক্ত রুচির প্রমাণ করে।
কোনো না কোনোভাবে প্রতিদিনই বডি শেমিংয়ের শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। তবে কী বলে বডি শেমিং করছেন তার চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো আপনি একজন মানুষের মানসিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে তার শারীরিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। শরীর খুব ক্ষণস্থায়ী একটি অস্তিত্ব। মরে গেলে পচে-গলে মাটির সঙ্গে মিশে যায় শরীর। আর অনন্তকাল থেকে যায় মানুষের কর্ম। একটি সুন্দর মন পাল্টে দিতে পারে একটি সমাজ, একটি সুন্দর শরীরের কথা মানুষ যত না মনে রাখে তার চেয়েও বেশি মনে রাখে কর্ম। তারপরও মানুষ কেন এত বেশি বডি শেমিং করে?
বডি শেমিং হলো একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। যাকে নিয়ে বডি সুইমিং করছেন হয়তো বা তাকে আপনি কোনো কারণে অপছন্দ করেন, নয়তো বা তার মধ্যে এরকম কোনো অভ্যন্তরীণ গুণ রয়েছে, যা আপনি সহ্য করতে পারছেন না। এছাড়া, সমালোচনামূলক কোনো বিষয় আলোচনা করতে মানুষ অনেক বেশি পছন্দ করে। এসব করে হাসি-ঠাট্টা বা রসিকতা করার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
যাদের বডি শেমিং করা হচ্ছে, তারা এসব কারণে প্রায় হতাশার মধ্যে দিয়ে জীবন ধারণ করছে। সবসময় তারা চাইলেও পারে না পজিটিভ থেকে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে। অনেক সময় দেখা যায় বডি শেমিংয়ের কারণে অনেকে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, যা তার জীবনের জন্য ক্ষতি হতে পারে কিংবা তার স্বাস্থ্যের জন্য বা তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কেউ যদি তার বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে সুখী থাকে তাহলে মানুষের এত সমস্যা কোথায়! একটা বিষয় সবাইর মাথায় রাখা উচিত মানুষ প্রজাতির সৌন্দর্যই বিভিন্নতায়। প্রতিটি মানুষের ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, ভিন্ন গড়ন। মানুষের পরিবর্তন আসবে বয়সের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন আসবে পরিবর্তন একটা স্বাভাবিক বিষয়।
বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে বার বার রুখে দাঁড়িয়েছে অনেক তারকারা। বিদ্যা বালান মুখ খুলেছেন বডি শেমিং নিয়ে তিনি বলেন, ‘নিখুঁত’ শরীর নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? শিল্পে বুঁদ লোকজনও তাঁর শরীরের আকৃতি নিয়ে কথা তুলতেন। মেধা, মস্তিষ্ক নিয়ে তো এত আলোচনা, কাটাছেঁড়া নেই! কারণ শরীরটাই পণ্য। মস্তিষ্ক তো আর বিক্রি হয় না!
বডি শেমিং আসলে কোনো মজা নয়। নির্মল রসিকতার অকারণে আঘাত করার মধ্যে গণ্ডি টানতে জানাটাই সভ্যতা এবং সুস্থতা। যারা এসব করছেন বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর মনে বিকার রয়েছে। এমন আচরণের উৎস হীনম্মন্যতা, অপ্রাপ্তির হতাশা, ঈর্ষা, অহংতৃপ্তি বা আজন্মলালিত সংস্কার। অন্য দিকে যাকে আক্রমণ করা হচ্ছে, তার মনে ও ব্যক্তিত্বে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে।
মানুষের জীবনে নানা কারণে নানা বিষয়ে পরিবর্তন আসতে পারে। সেই পরিবর্তনকে হাস্যরসিকতার দৃষ্টিতে না দেখে সম্মান দেওয়া উচিত। যদি একদমই ভালো না লাগে সেই ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তবে কোন ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করা উচিত নয়। যা নিজের বিষাক্ত মানষিকতার পরিচয় তো দেয়ই, পাশাপাশি যাদেরকে করা হচ্ছে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বডি শেভিংযে মতো একটা রুচির বিকৃতি বন্ধ হোক।