খেলার মাঠে জয়: এভাবেই এগিয়ে যাক নারী
আমাদের সমাজে নারীদের প্রতিনিয়ত পরিপার্শ্বের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। নারী মানেই সব কাজ তার দ্বারা সম্ভব নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই বিকৃত ও হীন মানসিকতা ভেঙে বারবার নারীরা বেরিয়ে আসছেন। প্রমাণ করছেন পৃথিবীতে মানুষের পরিচয় তার কর্মে। শুধু লিঙ্গজনিত কারণে সমাজ যে বিভেদ সৃষ্টি করে তা কেবল নারীকে দমিয়ে রাখার জন্য। নারীকে ঘরে অবরুদ্ধ করতেই এ সমাজে নারীকে যোগ্য স্থান দেওয়া হয় না। তবু সব বাধা ভেঙে এদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বুকে পদাঘাত করে দেখিয়ে দিচ্ছে তারা মানুষ। পুরুষের দাসত্বেই তাদের জীবন বাধা নয়৷
পেসার মারুফা আকতার ও স্পিনার রাবেয়া খানের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে প্রথমবারের মত ওয়ানডে ফরম্যাটে ভারতকে হারালো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ৪০ রানে হারিয়েছে ভারতকে। ছয়বারের দেখায় এই প্রথম ভারতকে হারের লজ্জা দিলো বাংলাদেশ। মারুফা ৪টি ও রাবেয়া ৩টি উইকেট নেন। ঐতিহাসিক এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিগার সুলতানার দল।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫০ ওভারের ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। সাবধানে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মুরশিদা খাতুন ও শারমিন আকতার। ৪৫ বল খেলে মাত্র ১৪ রান তুলেন তারা। রানের খাতা না খুলেই প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন শারমিন। পরের ওভারে নামের পাশে ১৩ রান রেখে ফিরেন মুরশিদা।
১৪ রানে ২ উইকেট পতনের দলের হাল ধরেন ফারজানা হক ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। ১৫ দশমিক ১ ওভারের পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। প্রায় ২ ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকলে ম্যাচটি ৪৪ ওভারে নামিয়ে আনা হয়।
তৃতীয় উইকেটে ৭৪ বলে ৪৯ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন ফারজানা ও নিগার। ফারজানা ২৭ রানে থামলেও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন নিগার। ফারজানার ইনিংসে ৫টি ও নিগারের ব্যাট থেকে ৩টি বাউন্ডারি আসে।
৩১তম ওভারে দলীয় ১০৩ রানের মধ্যে ফারজানা ও নিগার ফেরার পর শক্তহাতে বাংলাদেশের হাল ধরতে পারেননি পরের দিকের ব্যাটাররা। ৪৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৩ ওভারে ১৫২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারে সুলতানা খাতুন ১৬, ফাহিমা খাতুন অপরাজিত ১২ ও রাবেয়া খান ১০ রান করেন। অতিরিক্ত থেকে ১৯ রান পায় বাংলাদেশ। ভারতের আমানজত কৌর ৪টি উইকেট নেন।
৪৪ ওভারে জয়ের জন্য ১৫৪ রানের টার্গেটের শুরুতেই চাপে পড়ে ভারত। বাংলাদেশের বোলারদের তোপে ৬১ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত। এসময় মারুফা ২টি ও রাবেয়া ১টি উইকেট নেন।
শুরুর চাপ সামলে উঠার চেষ্টা করেও সফল হয়নি ভারতের মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। মারুফা ও রাবেয়ার বোলিং তোপে ৩৫ দশমিক ৫ ওভারে ১১৩ রানে অলআউট হয় ভারত। দলের পক্ষে দিপ্তি শর্মা ২০, আমানজত-ইয়াশটিকা ভাটিয়া ১৫ রান করে করেন।
৭ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন বাংলাদেশের মারুফা। রাবেয়া ৭ দশমিক ৫ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া নাহিদা আকতার-সুলতানা খাতুন ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন মারুফা। আগামী ১৯ জুলাই মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
এই ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের নারীদের জন্য আশা জাগানিয়া। যে দেশে ঘরে-বাইরে নারীকে প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও কটুক্তির শিকার হতে হয় সেখানেও নারীরা তাদের অদম্য শক্তি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন নারী বলে অবহেলা করার কিছু নেই। সুযোগ-সুবিধা পেলে নারীরা তাদের যোগ্যতা অবশ্যই প্রমাণ করে। বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নারীদের আছে। নারীরা পারে না এমনকিছু নেই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শুধু নারীকে অবরুদ্ধ করতেই এমন কথোকথার প্রচারণা চালানো হয় যে, নারীরা সব করতে পারবে না!
প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী দল প্রমাণ করলো তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে তারা আরও সুনাম বয়ে আনবে দেশের জন্য। তাদের কাজের প্রতি যদি সবার শ্রদ্ধা-সম্মান ও সহযোগিতা থাকে তবে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে। সমাজের প্রতিবন্ধকতা যদি তাদের গিলে খেতে না চায় তবে এই নারীরাই বিশ্ব জয় করবে তাদের নৈপুণ্য দিয়ে।
যুগ বদলাচ্ছে। মানুষের মানসিকতা তবু সুপ্রসারিত হয়নি। এখনও অধিকাংশ মানুষ নারীদের খেলাধুলা, স্বাধীন জীবনযাপন করা পছন্দ করেন না৷ তাই তাদের বস্তাবন্দি রেখে দাসত্বের পাট শিক্ষা দেন! কিন্তু নারীদের পথকে সুপ্রসারিত করলে কী ফল হতে পারে তা বিশ্ববাসী পুনঃপুনঃ দেখছে!