পুরুষতন্ত্র কেন নারীকে শোষণ করে
আবহমানকাল ধরে নারীরা এ সমাজে শোষিত৷ কন্যাশিশু জন্মের পর থেকেই পিতা-মাতার নানরকম দুশ্চিন্তা পরিলক্ষিত হয়। তার ওপর যদি একাধিক কন্যা সন্তানের জনক-জননী হন, তবে তাদের মতো হতভাগ্য এ পৃথিবীতে কেউ নেই বলেই গণ্য করা হয়। মানুষ হিসেবে মূল্যায়নের চেয়ে ছেলে ও মেয়ে হিসেবেই এ সমাজ বিভেদ সৃষ্টি করে। শৈশব থেকে পরিবারে যে ধরনের শোষণ-বঞ্চনা সৃষ্টি হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নারী সেভাবেই গৃহীত হয়।
পুরুষতন্ত্র নারীকে শোষণ করে তাদের স্বার্থে। প্রতিনিয়তই নারীকে ভোগ্যপণ্য এবং দাসত্বে বাঁধতে চায় ফলে নারীকে অবরুদ্ধ করে, তাকে অবমূল্যায়ন করে সব হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল পুরুষতন্ত্র রপ্ত করেছে। যা দিয়েই আজীবন নারীকে শোষণ ও নির্যাতন করে আসছে পুরুষ। আর নারীও এসব প্রতিবন্ধকতাকে জিইয়ে রেখে সামনের দিকে এগুতে ভয় পান। তবে যে বা যারা বাধার দেওয়াল ডিঙাতে পারেন তারা তাদের সর্বোচ্চ অর্জন করেন।
মেয়ে হয়ে জন্ম হলেই যে পৃথিবীর সবটা তার জন্য বেশি চ্যালেঞ্জের এটা নারী মাত্রই বোঝেন। তবে এই বোঝা এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য আছে। নারী ঠিক যতটা বোঝেন এবং সে অনুযায়ী চলতে চান পুরুষতন্ত্র আরও দ্বিগুণ কোনঠাসা করতে চান। নারীরা ইচ্ছে মতো জীবনযাপন করতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না। সবকিছুই পুরুষের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ওপর যেন নির্ভরশীল। নারীর প্রতি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নারীকে বেশি কষ্ট দেয়। নারীর প্রতি অন্যায় হলেও পুরুষতন্ত্র নারীকেই দোষারোপ করে। সবকিছুর জন্য নারীকে দায়ী করে।
একজন পুরুষ চাকরিজীবী হলে তার প্রতি সমাজের সম্মান-সমীহ ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু একই কাজ নারী করলে সেখানে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। নারীকে কেউই তার যোগ্য স্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন না। অধিকাংশের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য । কিন্তু পুরুষের জন্য নেই সমাজের বাধা। এমনকি পারিবারের সব সদস্য একজন ছেলে সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবটা করে।
জমি বেঁচে ছেলেকে পড়ান এমন বাবা-মায়ের সংখ্যা হয়তো অসংখ্য। কিন্তু ঐ একই জমি কিন্তু কখনোই মেয়ে সন্তানের প্রতিষ্ঠার জন্য বিক্রি করেন না। এর কারণ বাবা-মা এমনকি পরিবার-পরিজন বিশ্বাস করেন মেয়ে অন্যের ঘরের আমানত। ফলে বিয়ের পর তাকে অন্যের ঘরে যেতে হবে। এবং এ কারণে যদি কোন পিতা-মাতার ছেলে সন্তান না থাকে তবে তারা মেয়েকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে বাকি সম্পত্তিটুকু আগলে রাখেন। যাতে বৃদ্ধ বয়সে ওটুকু তার সম্বল হয়। আমাদের সমাজে আজ অবধি এমন ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। গ্রামাঞ্চলে এমন ঘটনা অহরহ চোখে পড়ে। শিক্ষিত বাবা-মায়েরও ছেলে সন্তানের প্রতি একটা ন্যাক কাজ করে। ছেলে মানেই তাদের অবলম্বন। আর মেয়ে না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা!
ফলে পুরুষতন্ত্রের এই শোষণ নারীকে জিইয়ে রাখতে হয় আজীবন। নিজের জন্য কোনোদিন ভালোবাসা পান না। এমনকি নারী নিজেকেও ভালোবাসতে পারেন না। ফলে সর্বদা নারী এক অবহেলিত বস্তু। কোথাও নারীকে পূর্ণ মর্যাদা বা মূল্যায়ন করা হয় না।
এখন যুগের দিক থেকে আমরা আধুনিক । কিন্তু চিন্তা -চেতনায় আজও মান্ধাত্মার আমলেই পড়ে আছি। ফলে পুরুষতন্ত্রের অত্যাচারও আমাদের পীড়িত করে। শোষণকে রুখতে হলে নারীর আওয়াজ জরুরি। নিজের জন্য যা ভালো সেটাকে গ্রহণ করতে হবে। যা ভালো লাগে, ভালোবাসেন তাই করতে হবে। নতুবা দিনশেষে অবহেলিত হতে হবে। তাই পুরুষতন্ত্রের কথা গায়ে না মেখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন। আলোকিত করুন।