গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা: রুখে দাঁড়াও সমাজ
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী নির্যাতন দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। যদিও আবহমানকাল থেকেই এ সমাজে নারীরা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার, তবু আধুনিক যুগে এসে পুরুষ যেন আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে। কোনো বাক্য ব্যয় না করে নারীকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌক্তিক কারণ ও প্রমাণ পাওয়া বা না পাওয়াতে বিশ্বাসী নয় এ সমাজ। শুধু নারীকে পদসেবায় রাখতে, ঘরে অবরুদ্ধ করে শোষণ করতেই অভ্যস্ত পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। ফলে নারীঘটিত যেকোনো কাজে তাদের অসম্মান-অশ্রদ্ধা করার পাঁয়তারা পুরুষতন্ত্র করে থাকে।
নারীনির্যাতনকে বৈধ করতে অনেক সময় গল্পও সাজায় পুরুষতন্ত্র। তবে যদি সত্যি অপরাধ সংঘটিত হয়, তবে সেখানে নারীনির্যাতন কোনো সমাধান নয়। তার জন্য আইন-কানুন আছে। আইনের বিচারের মাধ্যমে সুরাহা করা সম্ভব। তাই ঘরের স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করা যেমন অমানবিকতা, তেমনই আইনের চোখে অপরাধও। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এমন এক ঘটনা, যা এ সময়টাকে নিয়ে ভাবায়! মানুষের মানবিকতা, বিবেকবোধ আজ কোন স্তরে নেমেছে! অপরাধ করলে তার শাস্তি দেওয়ার জন্য আইন-আদালত আছে। কিন্তু তা না করে একজনের ওপর নির্যাতন ও তাকে হত্যা করা কতটা যৌক্তিক!
ফরিদপুরের মধুখালী থানা পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম বলছে, ঘটনাটি উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের মধ্য আড়াপাড়ার সমির মল্লিক(৪৬)-এর বাড়িতে। ৯ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমির মল্লিকের চাচাত ভাই তানভীর মল্লিক (২২) ভাবীর ঘরে আসেন। তখন সমির মল্লিক বাড়িতে ছিলেন না। ফাঁকা ঘরে দেবর-ভাবী অনৈতিক কর্মে জড়িয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় সমির মল্লিক ঘরে ফিরে দেবর-ভাবীর দৃশ্য দেখে ফেলেন। তানভীর সে সময় দৌড়ে পালিয়ে যায়। দেবর-ভাবীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিকেল ৩/৪টার দিকে ঘরের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারপিট করেন সমির মল্লিক। এক পর্যায়ে স্বামীর মারপিটে অসুস্থ হয়ে পড়েন আনোয়ারা। অসুস্থ আনোয়ারাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক আনোয়ারাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে যেভাবে উঠে এসেছে, তা নিতান্তই অপ্রীতিকর। তবে এই ঘটনার নেপথ্যে সত্যটা কী তা খুঁজে বের করা হোক। আমরা জানি, নারী নির্যাতন করে তার পেছনে অনেক গল্প সজানো হয়। ফলে স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে নারীর মৃত্যুর জন্য অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। হত্যার সুষ্টু তদন্তও জরুরি।
যদি গণমাধ্যমে বিবৃত সংবাদের সত্যতা থাকেও তবে নির্যাতন কোনোই সমাধান নয়। নারী নির্যাতন করে একেবারেই জীবনটাই শেষ করে দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী ! নারীর প্রতি এতটা রূঢ় আচরণ হলেও সমাজের অধিকাংশ ঘটনাটি দেখে সত্যতা যাচাই না করেই নারীকে দোষারোপ করবে। যদি উল্লিখিত ঘটনা ঘটেই থাকে, তবে এর জন্য সালিশ, ডিভোর্সের মতো সামাধান তো রয়েছেই। মোদ্দা কথা হলো নারীকে হত্যা কোনো সমাধান ছিল না। মানবহত্যা অপরাধ। তাই এর সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে। যেন আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে।