বিয়ের দাবিতে আত্মহত্যার হুমকি কিসের লক্ষণ
দাম্পত্য সংকটকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সংসার ভাঙছে অহরহ! তবে সংসার ভাঙার পেছনে নানামুখী সমস্যা রয়েছে। কোনো একটি কারণে সংসার ভাঙছে না। স্বামী-স্ত্রীর মনের অমিল, চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতা, সবমিলিয়ে সংসার নামক প্রতিষ্ঠান ধুঁকছে। এক্ষেত্রে কেউ বেরিয়ে আসছে বন্ধন ছিন্ন করে। কেউবা জোড়াতালি দিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম করে চলেছে। কিন্তু এসব সংকটের মধ্যে বর্তমান সময়ে সংসার ভাঙার অন্যতম কারণ অন্যত্র সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া।
স্বামী-স্ত্রীকে যথেষ্ট সময় ও সম্মান না দেওয়া, মনের মতো না হওয়া, রুচি-অভিরুচির পার্থক্য, যৌতুক, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মতো অসংখ্য কারণে সাংসার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কিছু অসাধু মানুষ। সুযোগ বুঝে নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে। এবং সময় বুঝে সটকে পড়ছে। তখনই দেখা দিচ্ছে নতুন সংকট! অনেক নারী যন্ত্রণামুক্ত হতে গিয়ে আবারও নতুনভাবে জটিলতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন। এবং তখনই প্রেমিকের বাড়িতে অনশন, আত্মহত্যার হুমকি, আত্মাহুতির মতো নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করছেন। যা রীতিমতো বর্তমান সময়ের সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র।
পরপুরুষে-পরনারীতে আসক্তি বর্তমানে নতুন নয়। অনেকদিন যাবৎ এমন ঘটনা অহরহ চোখে পড়ছে। তবে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে নারীদের নিচু মানসিকতার পরিচয় মিলছে! নারীরা সংকটে পড়ছেন! সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে গিয়ে আবারও পাঁকে তলিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সমাজের নারীরা প্রতিনিয়তই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রোষানলের শিকার। ফলে নারীরা নিজেদের একটু চাপমুক্ত করতে, শান্তি দিতে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। সুখ মরীচিকার অপর নাম হলেও সেই সুখের তাগিদে যাপন করতে সচেষ্ট হচ্ছেন। যখন সবটুকু খুইয়ে দাঁড়ানোর পথ পাচ্ছে না তখন প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে রত হচ্ছে। আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি কিন্তু শুধু নারীর ক্ষেত্রেই চোখে পড়ছে। কোনো পুরুষকে কিন্তু নারীর বাড়িতে অনশন করতে দেখা যায়নি বললেই চলে আজও! বর্তমানে নারীদের এহেন অবস্থা সত্যি নিন্দনীয়। একইসঙ্গে নারীদের বোকামির দ্বন্দ্ব বটে। সাংসারিক সংকট দেখা দিলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা এবং পরবর্তীকালে সম্পর্ক স্থাপনে নারীকে সচেতন হতে হবে। নাহলে জীবনের ষোলা আনাই মিছে হওয়া খুব একটা কঠিন হবে না!
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরে চোখ আঁটকে গেলো। আজও নারীদের এমন কর্মকাণ্ড প্রতিটি নারীকে অসম্মানিত করে। সংবাটি এরকম:
উদয় আমার সঙ্গে তিন বছর প্রেম করে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছে। আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছে উদয়। এখন উদয় আমাকে বিয়ে না করে আত্মহত্যা করবো। এমনই মন্তব্য করছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার সূবর্নসাড়া কাঠের পুল এলাকার উত্তম পোদ্দারের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করা এক তরুণী।
ওই তরুণী আরও জানায়, বেলকুচি পৌর এলাকার সূবর্নসাড়া গ্রামের উত্তম পোদ্দারের ছেলে উদয় পোদ্দার আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। শুধু তাই নয় তিন বছর এভাবে সম্পর্ক রেখে আমাকে আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছে।
এছাড়াও আমাকে বিয়ে করবে বলে বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়েছে। ও আমার জীবন নষ্ট করে এখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। তাই আমি ওর বাসায় এসেছি। আসার পর থেকে ওর বাবা-মা আমার ১০ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণ যৌতুক বাবদ দাবি করছে। আমি এগুলো যদি না দিতে পারি তাহলে উদয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবে না বলছেন। আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। উদয় আমাকে বিয়ে না করে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবো।
প্রকাশিত ঘটনা অনুযায়ী একজন নারীর এহেন আচরণ যেমন অন্যায়। তেমনই তার প্রতিটি পদক্ষেপেই ভুল সিদ্ধান্ত বিদ্যমান। পূর্বের স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে ভালো না থাকলে তিনি সেখান থেকে আগেই কেনো বের হননি! আবার সম্পর্কচ্ছেদ না করেই অন্য পুরুষের প্রতি আসক্ত হওয়া কতটুকু ন্যায়সঙ্গত। পরক্ষণেই সবকিছু ছাপিয়ে আত্মহত্যার হুমকি-ধমকি কতটুকু ন্যায়সঙ্গত! পুরো ঘটনাটিতে শুধু পুরুষকে দায়ী করা যায় না। কারণ নারীর যে ধরনের বক্তব্য প্রকাশিত তাতে মনে হয় তিনি লটারির টিকেট কাটতে চান। যে বা যিনি ভালো তাকে নিতে হবে। শেষকথা তার মাথার ওপর ছাদ চায়। বাসের জন্য নির্দিষ্ট এবং সম্মানজনক স্থান চায়। এমন ঘটনার ফলে সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা নির্যাতিত হলেও কিছু নারীর এমন আচরণের কারণ সবাইকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে! নারীদের আত্মসম্মান জরুরি। পৃথিবীতে এই একটি সম্পদ টাকা-পয়সা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। বিবেকবোধ, ন্যায়বোধ, মানবিক হওয়া জরুরি। নিজের প্রতি বিশ্বাস ভরসা থাকা জরুরি। অন্যায়ের পথ থেকে সরে আসা জরুরি।
নারীদের মাথায় রাখা প্রয়োজন প্রেম এবং বিয়ে ভিন্ন জিনিস। একটি সামাজিক-রাষ্ট্রিক স্বীকৃতি। অন্যটি গুপ্ত প্রেম। সেখানে রাষ্ট্রিক-সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই। ফলে পুরুষের ফাঁদে নারী যখন পা দিচ্ছেন তখন নিজের সর্বস্ব যাওয়ার সম্ভবনা নিরানব্বই ভাগ। তাই নারীকে বুঝে-শুনে পথবলম্বন করা উচিত। ঝোঁকের বশে পড়ে জীবনের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে আজীবনের জন্য সমস্যাকে কাঁধে তোলা উচিত নয়। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য প্রত্যেক নারীকে সচেতন হতে হবে। নারীদের জীবনের এমন দৈন্য কাটুক যেখানে আত্মসম্মান খুইয়ে বিয়ের মতো দাবি নিয়ে অনশন করতে হয়! আত্মহন্তার হুমকি দিতে হয়। এভাবে আর যাইহোক সংসার গড়ে উঠবে না। ফলে ঘটনাগুলো থেকে সবার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সচেতন হওয়া জরুরি।