নারীর গলায় পাখির পালক!
কিনে দে রেশমি চুড়ি
নইলে যাবো বাপের বাড়ি!
গহনার প্রতি নারীর যে টান তা গানের অভিমানী বাক্যের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে প্রবলভাবে। গহনা বাঙালি নারীদের কাছে বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান। গহনা ছাড়া নারীদের সৌন্দর্যে যেন ভাটা পরে যায়। মেয়েদের প্রথম পছন্দ ভারী গহনা। সোনা, রূপা, মুক্তা এই ধরনের গহনাগুলোই বরাবর পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এখন এই ধারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ভারী গহনার চেয়ে হালকা কিছুতেই এখন স্বাচ্ছন্দ্য বেশি।
দামী সেসব গহনার ভীড়ে ভিন্ন ধরনের কিছু খুঁজে বেড়ান বাঙালি নারীরা। আর উদ্যোক্তারাও চেষ্টা করেন, কিভাবে ভিন্ন কিছু নিয়ে আসা যায়। কখনও কাঠের, কখনও মাটির। ভিন্নধর্মী গহনা বাজারে আনতে রীতিমতো চলে প্রতিযোগিতা৷ তেমনি ভিন্ন কিছু ভেবেছিলেন সাদিয়া শারমিন। মুনসেজ ক্রাফটে শুরু করেছেন পাখির ঝরা পালক, দুষ্প্রাপ্য শামুক, ঝিনুক, কড়িসহ অনেক কিছু। ফ্যাশনে এই গহনা যোগ করে ভিন্নমাত্রা। বিভিন্ন স্টাইল ও আকারের গহনা যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানানসই। শাড়ি, ওয়েস্টার্ন, সেলোয়ার-কামিজসহ যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যাবে।
যেমন শাড়ির সঙ্গে বড় গলার ব্লাউজ পরেছেন সাথে বড় পালকের একটি গয়না পরে নিলেন যার ওপর ছড়িয়ে আছে কিছু কোড়ি বা ঝিনুক, সৌন্দর্য বেড়ে যাবে কয়েকগুন। পশ্চিমা ঢংয়ের পোশাকের সঙ্গে গয়না সাধারণত কম যায়। তবে এই ভিন্নধর্মী গয়না পশ্চিমা পোশাককেও কয়েকগুন ফুটিয়ে তুলে। আর ডিজাইনগুলোও হয় এমনই। সবধরনের পোশাকের সঙ্গেই কিছু না কিছু মানিয়ে যাবে। এই গয়নাগুলো বিভিন্ন দামে পাবেন মুনসেজ ক্রাফটের ফেসবুক পেজে।
এছাড়াও যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হলো বিভিন্ন জিনিসের ফিউশন করা হয় একসঙ্গে। বুনন শিল্পের সঙ্গে ঝিনুকের যোগসূত্র, গলায় যেন খেলা করে একধরনের নান্দনিকতা। শুধু কি ঝিনুক শামুকেরও যে এতো সুন্দর রূপ রয়েছে গয়নাগুলো যেন সে কথা মনে করিয়ে দেয়। পাখির পালকগুলো ঝরে গিয়েই যে শেষ হয়ে যায়নি তাও প্রমাণ করে এই গয়না।
২০২৩ সালে এসেও যেখানে নামি-দামি হিরে- জহরতের একচেটিয়া আধিপত্য ফ্যাশন দুনিয়ায়। সেখানে এখন পাখির গায়ের ঝড়া পালকে ভর করা কম সাহসের কথা নয়। শুরু হয় করোনাকালীন সময়ে। তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিলো উপকরণ সংগ্রহ করা। এ তো আর যেন তেন উপকরণ নয় যে নিউমার্কেট গেলাম কাঠ আর পুতি কিনে চলে আসলাম। দরকার পাখির ঝরে পরা পালক বা এমন কিছু উপকরণ যা খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ নয়।
এরইমধ্যে অভিযোগ আসলো পাখি মেরে নাকি পাখির পালকের পালকের গয়না তৈরি করা হচ্ছে। তবে আদৌও কি তা সম্ভব? শিল্পী কি কখনো ধ্বংস করতে পারে? শিল্পির কাজ তো নতুন কিছু সৃষ্টি করা। এমনটাই বলছেন, মুনসেজ ক্রাফটের এর উদ্যোক্তা সাদিয়া শারমিন। তিনি জানান কাজ করছেন রিসাইকেল করার জন্য, ধ্বংস করে কিছু তৈরির জন্য নয়। বর্তমানে এক্সপেরিমেন্ট পিরিয়ড শেষ হলে আরও কিছু নতুন বিষয় পাকাপাকি ভাবে বাজারে নিয়ে আসবেন বলেও জানান তিনি।