Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারিগরি শিক্ষায় বাড়ছে নারী: আলো আসুক এভাবেই

বর্তমানে মেয়েরা নিজেদের সম্পর্কে অনেকটা সচেতন। শুধু ঘরে বন্দি থেকে নিজেদের শেষ করে দেওয়ার পরিণাম যে কী ভয়াবহ, তা নারীরা অনুধাবন করতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে নিত্য আলোর মুখ দেখতে নিজেদের প্রস্তুত করছেন নারীরা৷ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নিজেদের অবস্থান করে নিতে সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন। মা-দাদি বা বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের দেখে একটু হলেও নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নারীরা আঁচ করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাই সারাজীবন প্রপঞ্চের শিকার না হয়ে নিজের পরিচয় গঠনের তাগিদে নারী আজ বদ্ধ পরিকর। তবে হ্যাঁ, আলো তো একদিনে আসে না। ধীরে ধীরে পথে হাঁটতে থাকলে একসময় আলোর মুখ দেখা যায়। আমাদের নারীরাও আজ এই পথাবলম্বন করছেন। পথের সৃষ্টি করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।

সময়ের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। কারিগরি শিক্ষায় ছেলেদের একচেটিয়া আধিপত্যে মেয়েরা নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে গত কয়েক বছরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে কারিগরি শিক্ষায় যেমন বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ, তেমনি নারী নেতৃত্বও সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, ১০ বছরে কারিগরি শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ নারী আর শুধু পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০ শতাংশ। ১৫ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী দেশের চারটি মহিলাসহ ৫০টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করছেন।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, চারটি বিভাগীয় শহরে শুধু মেয়েদের জন্য চারটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীসহ ৫০টি ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মোট ১৮ হাজার ৪৯৭ জন মেয়ে শিক্ষার্থী পড়ছেন। যা মোট শিক্ষার্থীর ১৪ শতাংশ। ৩ হাজার ৮১৮ জন মেয়ে শিক্ষার্থী পড়ছেন চারটি মহিলা পলিটেকনিকে। মোট কারিগরি শিক্ষায় আছেন ২৭ শতাংশ নারী। ধীরে ধীরে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এলক্ষে সরকার অনেকগুলো উদ্যোগ ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে মেয়েদের কারিগরি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে সরকার শতভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছেন। যেখানে ছেলে শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে ৭০ শতাংশ বৃত্তি পান। ফলে কারিগরি শিক্ষায় নারীরা আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব বলেন, কারিগরি শিক্ষায় কম মেধাবী ও দরিদ্রের বিষয়, এই ধারণা ভাঙতে শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ছেলেদের ভর্তির যোগ্যতা জিপিএ-৩ হলেও মেয়েরা ২ দশমিক ৫ হলে ভর্তি হতে পারবেন। মেয়েদের জন্য ২০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। শতভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী প্রতি সেমিস্টারে ৪ হাজার টাকা বৃত্তিসহ ইন্টার্নশিপে ১৫ হাজার টাকা সরকারি ভাতা পান। তারপরও সব পলিটেকনিকে মেয়েদের জন্য হল না থাকায় আরও মেয়েরা কারিগরি শিক্ষায় আসতে পারছেন না।

কারিগরি শিক্ষায় নারী শিক্ষার্থী বৃদ্ধির লক্ষে সরকারি উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। বর্তমান সরকার নারীদের জন্য যতটা ভেবেছেন এর আগে কখনও এমনটা পরিলক্ষিত হয়নি। তবে সব সমস্যা একবারে কখনোই সমাধানযোগ্য নয়। ধীরে ধীরে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পাবে। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। নারীদের আত্মমর্যাদা, সম্মান বৃদ্ধি পাবে। কারিগরি শিক্ষায় নারীদের হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া। নারীরা সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এভাবেই আলোর মুখ দেখুক। নিজের এবং পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি করুক। নারীর অগ্রযাত্রা এভাবেই অব্যাহত থাক। তাহলে একদিন অবশ্যই নারীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত অর্জনে সফল হবেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ