এখনই নারীর যোগ্যতার মূল্যায়ন হোক

আমাদের সমাজে আজ অবধি নারীর কাটতি তার রূপে। যেই নারী যতটা সুন্দরী তকমাধারী সমাজে তার কদর তত বেশি। গায়ের রঙ ফর্সা হলেই এ সমাজে নারীর প্রতি সুদৃষ্টি জন্মে। গায়ের রঙে সমাজের নির্ধারিত সুন্দরী খ্যাত না হলে সে নারীর অবস্থা যে কোন পর্যায়ে পড়ে তা এ সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিই জানেন। অর্থাৎ নারীর মূল্যায়ন তার রূপে। সেখানে তার গুণের প্রতি কারো মনোযোগ নেই।
আমাদের সমাজে প্রতিনিয়তই নারীরা অবহেলিত হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ তিনি কতটা সুন্দরী তার ওপর। যদি কোন নারী সুন্দরী হন তবেই সাত খুন মাফ। পাত্র পক্ষের প্রথম চাহিদা পাত্রীকে অবশ্যই সুন্দরী হতে হবে। সুন্দরী বলতে তারা বোঝান পাত্রীর গায়ের রঙ কোনভাবেই শ্যামবর্ণ বা কালো হতে পারবে না। এরপর যদি কোনো ক্রাইটেরিয়া থাকে তবে পাত্রীর কিঞ্চিৎ পড়াশোনা আর বাপের টাকাপয়সা। কারণ শ্বশুরবাড়িতে নারীকে মূল্যায়নের এটাও অন্যতম হাতিয়ার। রবীন্দ্রনাথের ‘দেনাপাওনা’ গল্পের নিরুপমার যেমন ভাগ্যদশা হয়েছিল তা এ সমাজের অধিকাংশ মেয়ে আজও ভোগ করে।
নিরু কহিল, “টাকা যদি দাও তবেই অপমান । তোমার মেয়ের কি কোনো মর্যাদা নেই। আমি কি কেবল একটা টাকা থলি, যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ আমার দাম! না বাবা, এ টাকা দিয়ে তুমি আমাকে অপমান কোরো না।” নিরু প্রতিবাদ করেছিল কিন্তু এ সমাজের অধিকাংশ নারী প্রতিবাদহীন। তারা নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস রাখে না বলেই অনেকসময় ভালো চাকুরিজীবী স্বামীর জন্য যৌতুক নিয়ে রেডি থাকেন। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে এমন অস্বাভাবিক যৌতুক পথা চালু রয়েছে যা সত্যি নারীর জন্য অসম্মানের।
ধরকম-বর্ণ নির্বিশেষে উত্তরাঞ্চলে মেয়েকে পাত্রস্থ করতে হলে পরিবারের কালঘাম ছুটে যায়। ভালো চাকরিজীবী ছেলের ডিমাণ্ড লাখ লাখ টাকার নিচে নেই! তাদের এই অপসংস্কৃতি ভাবায়, আসলেই নারীর মূল্যায়ন কিসে! রূপ, অর্থে! নাকি তার যোগ্যতায়?
সমাজের এই অপসংস্কৃতি দূর করতে হলে নারীকেই এর হাল ধরতে হবে৷ নিরু যেমন বাবাকে এবং নিজেকে অপমান করা থেকে রক্ষা করেছিল সে পথে এগুতে হবে। হ্যাঁ নিরুপমা প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার -অপমানে জর্জরিত হয়েছে। তবে এখন যুগের পরিবর্তন হয়েছে। আইন হয়েছে। যে বা যারা এমন অপরাধে সামিল হতে চাইবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ নারীর মূল্যায়ন তার যোগ্যতায়। তিনি দেখতে কেমন, বাবা কত টাকা যৌতুক দিয়ে মেয়েকে সুখী করবেন এগুলো বিবেচ্য নয়।
আজকাল শিক্ষিত ছেলেদের এই প্রবণতা একেবারে জেঁকে বসেছে। কোনরকমে পড়াশোনা করে বের হয়ে একটা চাকরি জুটুক বা না জুটুক। ডিমেণ্ডের শেষ নেই। তাদের এই বিকৃত মানসিকতা দিন দিন সমাজটাকে গ্রাস করছে। সমাজে পচন ধরেছে। এই পচন রোধ করতে হলে, অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে নারীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী যদি সঠিকভাবে তার যেগ্যতার মূল্যায়ন পান তবেই নারীর প্রতি কদর্য দৃষ্টিভঙ্গি কমবে।