স্কুলে ছাত্রীদের বিষ প্রয়োগ: আফগানি নারীদের নিরাপত্তা কোথায়
তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানী নারীরা যে বিপাকে পড়েছে এ খবর নতুন নয়। তবে তাদের নতুনভাবে উপস্থাপন করার কারণ এই যে, তারা ক্রমাগত নারীদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। নারীদের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল সেগুলো থেকে আফগান নারীদের রক্ষা মেলেনি। তারা আজও তালেবানদের জালে বন্দি।
২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিনিয়ত আফগান নারীদের ওপর চলছে একের পর এক অমানবিক নির্যাতন। ঘরে-বাইরে তাদের একপেশে করে ফেলা হয়েছে। স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার নারীদের নেই। এমনকি পার্কে বেড়ানোর ক্ষেত্রে আরোপিত হয়েছে বিধিনিষেধ। আধুনিক যুগে এসে নারীদের সঙ্গে এমন আচরণ শুধু অমানবিকই নয় অদ্ভুতও বটে। তালেবান সরকারের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শিকারে বর্তমানে আফগানী নারীদের জীবন বিপর্যস্ত। একে একে বন্ধ হয়েছে আফাগান নারীদের স্কুলে- কলেজে এবং চাকরিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা। গত ৩ এপ্রিল আফগান সরকার মেয়েদের পরিচালিত রেডিও স্টেশনটিও বন্ধ করে দেয়। দশ বছর থেকে পরিচালিত এই রেডিও স্টেশনটির সবাই ছিল নারী। সেটাও বন্ধ করে দেয় তালেবান সরকার।
এবার আবারও তালোবান সরকার আলোচনায়। কারণ আফগানিস্তানে স্কুলছাত্রীদের ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৮০ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত শনি ও রোববার ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ আফগানিস্তানে সার-ই-পোল প্রদেশের দুটি স্কুলে। এর মধ্যে অসুস্থ ৬০ জনই নাশয়ানে কাবুদ স্কুলের এবং বাকিরা নওশান-ই ফৈজাবাদ স্কুলের শিক্ষার্থী। স্কুলের ছাত্রীরা বিষপ্রয়োগে হাসপাতালে থাকলেও এ বিষয়ে কতৃপক্ষ কোনোকিছু খোলসা করে বলেননি৷
তবে আফগানী মেয়ে শিক্ষার্থীদের এহেন পরিস্থিতির জন্য যে, তালেবান সরকারের মদদ রয়েছে তা কিন্তু বোঝায় যায়। তালেবানরা ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আলোচনায় রয়েছেন নারীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করার কারণে। স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গামী নারী শিক্ষার্থীরা এখন ঘরের বাইরেও বের হতে পারে না। তাদের পার্কে বেড়ানোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নারীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সামাজিকভাবে এবং জাতি হিসেবে শিক্ষিত-দক্ষ-যোগ্য হয়ে উঠতে সক্ষম হবে। কিন্তু তালেবান সরকার নারীর উন্নয়নকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। না তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন, না পারবেন নিজের মতো স্বাধীন জীবনযাপন করতে, আর নাই বা পারবেন স্বাধীনভাবে যেকোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে! অর্থাৎ এই নারীরা শুধু পতিসেবায় নিজেদের জীবনকে নিয়োজিত করবেন। এতে তাদের ওপর শারীরিক-মানসিক যত নির্যাতনই হোক! এমনকি যেই আফগান নারীরা স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। জোর করে সেই স্বামীর সঙ্গেই ঘর করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক নারী এই অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মগোপন করছে। সবদিক থেকে আফগান নারীদের জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আফগান নারীরা নিজেদের মতো বাঁচা তো দূর সে কথা কল্পনাও করতে পারে না।
ধর্মের নামে এত গোঁড়ামি-ভণ্ডামি করে শুধু নারী হওয়ার কারণে কেনো এত বর্বরোচিত আচরণের সম্মুখীন হবে আফগান নারীরা! বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝতে সক্ষম যে, এগুলো ধর্মের অপব্যাখ্যা- স্বার্থান্বেষী ভাবনা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, হীনতা-নীচতা ছাড়া কিছুই না। মূলত আফগানিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বদৌলতে নারীদের ওপর অমানুষিক অত্যাচারে লিপ্ত এই ভণ্ড শ্রেণি। যদিও আফগান নারীরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছে তবে অধিকার ছিনিয়ে নিতে তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ করা জরুরি। কট্টরপন্থী তালেবান সরকারকে প্রতিহত করতে এবং নারীদের অধিকার রক্ষায় বহির্বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্টগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাহলে দেরিতে হলেও আফগান নারীরা এই হিংস্র শাসক থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবে।
আফগান নারীদের তালেবানদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ জরুরি। নতুবা ২০২১ সাল থেকে যেমনটা ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছে এগুলো দিনে দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে। এই শিক্ষার্থীরা যদি বেঁচে ফেরে তবে তাদের মানসিক শক্তি কোথায় গিয়ে ঠেকবে! যে দেশের রক্ষকই ভক্ষকে উপনীত হয়েছে তাদের মতো দুর্ভাগ্য এ বিশ্বসংসারে আর আছে কিনা সন্দেহ। আর যেন এ ধরনের কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেলক্ষে সবার এগিয়ে আসা উচিত। বিশেষ করে যারা এখন বিশ্ব শাসন করছে, লিডিং পজিশনে আছে তাদের উচিত আফগান নারীদের রক্ষা করা।