ফোবর্সের তালিকায় ৩ বাংলাদেশি নারী: খুললো আরও সম্ভাবনার দুয়ার
নারীর অগ্রযাত্রায় নানামুখী জটিলতা থাকলেও আমাদের নারীরা সব বাধাকে অতিক্রম করে বিশ্ব দরবারে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছে। পুরুষতন্ত্রের শোষণের বেড়াজালে বন্দি না থেকে তারা যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে, তা বাঙালি নারীর জন্য আশা জাগানিয়া। বাকি বাঙালি নারীরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। চলার পথে যতই প্রতিবন্ধকতা থাক না কেনো নারীরা নিজেদের উন্মুক্ত করতে, সাফল্য অর্জন করতে এই নারীদের সাফল্যের গল্পকে সামনে রাখতে পারে। তাদের অনুপ্রেরণা সঞ্চারিত গল্পকেই চলার পথের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
বিখ্যাত বিজনেস জার্নাল ‘ফোবর্স’ ২০২৩ সালের ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০’ তরুণ সংগঠক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভবকের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় স্থান পেয়েছে দেশের অদম্য ৩ নারী। যারা শত প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে নিজ লক্ষে পৌঁছে যেতে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন।
এই তালিকায় অংশ নেওয়া ৭ জন বাংলাদেশির মধ্যে ৩ জন নারী। এই নারী হলেন তাসবিন, জাহ্নবী রহমান ও সারাবন তহুরা। এই নারীরা তাদের পথ চলাকে অব্যাহত রেখেছিলেন বলেই আজ বিশ্বের নামকরা জার্নালে তারা স্থান পেয়েছেন। নাহলে দেশের বাইরে এ ধরনের স্বীকৃতি পাওয়া বেশ দুঃসাধ্যই বটে!
প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসা খাতে অবদান রেখে বিশ্ব গণমাধ্যমে নাম ওঠা সহজ নয়। তবে চেষ্টা থাকলে, সাধনা করলে কোনো কিছুই যে অসাধ্য নয়, তা বারবার প্রমাণ করে চলেছেন এই দেশের নারীরা। এই তিন নারীও এর ব্যতিক্রম নন। তারা তাদের সর্বোচ্চ মেধা-যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে প্রতিনিয়ত লড়াই করেছেন প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে। যার মাধ্যমে আজ বিশ্ব তাদের কুর্নিশ জানাতে বাধ্য হয়েছে।
তাসফিয়া তাসবিন মার্কোপলো.এআই প্রতিষ্ঠা করেছেন। মার্কোপোলো.এআই হলো একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। যা ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসার জন্য ডিজিটাল বিপণনে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এগুলোর প্রচার-প্রচারণা হয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিচালিত। গত বছর তাসবিন পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরের ভিসি ফার্ম এক্সিলারেটিং এশিয়ার মাধ্যমে ৭ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। ফলে স্বভাবতই এই নারীর সাফল্য অনুধাবনযোগ্য। আমাদের সমাজের নারীরা যে দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছে সেখান থেকে এ ধরনের সাফল্য নারীদের মনকে প্রফুল্ল করে। বাঁচার স্বপ্নকে উজ্জীবিত করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। কুর্নিশ এই নারীর সাফল্য, চেষ্টা ও সতততার প্রতি।
জাহ্নবী রহমান রিল্যাক্সির সহ-প্রতিষ্ঠা। এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে যান্ত্রিক জীবনের কষাঘাতে পড়ে অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এই মানসিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ।
এই নারীর মতোই ফোবর্সে স্থান করে নিয়েছেন সারাবন তহুরা। তিনি টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও- এর প্রতিষ্ঠাতা। সারাবন তহুরা তুরিন ও আনোয়ার সায়েফ অনিকের প্রতিষ্ঠিত টার্টল ভেঞ্চার স্টুডিও নতুন স্ট্যার্টআপদের অর্থায়ন, পরামর্শসহ বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক সুবিধা রয়েছে। যা বাংলাদেশে নতুন কোনো উদ্যোগ। এই তিন নারীর মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু তাই নয় দেশের নারীদের এমন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ দেশকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরতেও বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করছে৷ নারীদের এমন উদ্যোগ গোটা নারী জাতির জন্য অহংকারের। এভাবেই নারীরা সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করুক। যাতে সব শ্রেণীপেশার নারী জীবন চলার পথের নানামুখী বাধা অতিক্রম করার সাহস পায়। নারীদের মনোবলই তাদের চলার পথের মূল প্রেরণা। তবু দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী যারা তাদের এই ধারাবাহিকতা নারী জাতিকে পথে চলতে মনোবল জোগায়। তাদের এই অর্জন দেশের অর্জন। জাতির অর্জন। এই নারীদের প্রতি রইলো ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।