Skip to content

২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবধানতাই নারীর একমাত্র সম্বল

এ সমাজে নারীরা ক্রমাগত অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মূল্যায়ন নেই৷ কোনোদিন ছিলও না। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানব জীবনের পরিবর্তন জরুরি। তবে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ যুক্তি-বুদ্ধিতে বিশ্বাসী নয়। ফলে আবহমানকাল ধরে চলে আসা বস্তাপচা সংস্কারকে জিইয়ে রেখেই তাদের শান্তি৷ এরফলে সমাজ-রাষ্ট্রের যতই ক্ষতি সাধন হোক না কেনো প্রথা- আচার-আচরণে তারা গোঁড়ামিতে অভ্যস্ত! কিন্তু অন্যায়-অনাচার-নিপীড়নের ক্ষেত্রে এই শ্রেণিই আবার ব্যাপক ডিজিটালাইজড। অর্থাৎ যেখানে আমাদের প্রয়োজন নেই সেখানেই অসাধুরা তৎপর!

তবে নারীকে ফাঁদে ফেলে কার্যসিদ্ধিতে মেতেছে একদল হীন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ। এই শ্রেণি প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল বদলাচ্ছে! ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা কিঞ্চিৎ দেখা দিলেও অধিকাংশ সময় তারা বুঝে ওঠার আগেই জীবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। নারীর ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপ এখন ভাবনা- চিন্তার। কারণ এ সমাজে এক অশুভ ছায়া নারীকে ঘিরে রেখেছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী ভোগ্যপণ্য। নারীকে প্রতিনিয়ত ফাঁদে ফেলার জন্য একদল মুখিয়ে আছে। নারীর সরলতার সুযোগে এসব নিকৃষ্ট মানুষ নারীকে বাজারের পণ্য করে তুলতেও পিছপা হয় না।

সম্প্রতি প্রেমের নামে অন্যকে করায়ত্ত করার বিষয়টি বেশ নজরে আসছে। একশ্রেণির পুরুষ নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে পরিচয় এবং পরবর্তীকালে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলছে। কখনও কখনও প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং নারীকে ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। শুধু এ চক্র অর্থ হাতিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না বিভিন্নভাবে নারীকে ব্লাকমেইলিং করে চলছে! কিন্তু এসবকেও ছাড়িয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার একটি ঘটনা। মানুষ যে দিনে দিনে কতটা বিভৎস এবং নিকৃষ্ট হচ্ছে তার প্রমাণ এটি।

গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক নারীকে (৩০) বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গার এক ব্যক্তি (৩৪)। এরপর স্ত্রীকে ঢাকায় নেওয়ার পথে চেতনানাশক খাইয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। বাসের মধ্যে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করা হয় তাকে। তার যখন জ্ঞান ফেরে, দেখতে পান তিনি অন্ধকার একটি ঘরে বন্দী। আড়াই মাস পর কৌশলে যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন ওই নারী।

একটি নালিশি অভিযোগের তদন্ত শেষে আদালতে জমা দেওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদনে এসব তথ্য রয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার আমলি আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজের এক মাস ১২ দিন পর আদালতে এই নালিশি দরখাস্ত করেছিলেন ভুক্তভোগী নারীর মা।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভিযোগ ওঠা ব্যক্তি ও ভুক্তভোগী নারী একই সঙ্গে কাজ করতেন। সেখানেই তাঁদের পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি তাঁর প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তবে ওই নারীর যে আগে বিয়ে হয়েছিল, তা তিনি জানতেন। গত বছরের মে মাসে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর ওই ব্যক্তি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। দেড় মাস পর নারী জানতে পারেন, তার স্বামীর আগের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন কৌশলে নারীটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার স্বামী। এবং সেখানেই তার প্রাক্তন স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথাও বলে।

পিবিআইয়ের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অবস্থায় প্রতারণার ফাঁদ পাতেন ওই ব্যক্তি। প্রথম স্ত্রী তালাক দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী তরুণীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। এক মাস পর ওই যুবক জানান, প্রথম স্ত্রী মামলা করেছেন। মামলার নিষ্পত্তির জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এ জন্য তিনি ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় কাজ নেবেন। গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে তারা বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাসের মধ্যে চেতনানাশক খাইয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে পালিয়ে যান ওই ব্যক্তি। পরবর্তীকালে আড়াই মাস পর এই নারী পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে নারীরা কতটা অনিরাপদ তা এই ঘটনায় প্রমাণ করে। নারীরা কার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে! স্বয়ং স্বামী নামধারী কালপ্রিট তাকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে পলাতক থেকেছে! নারীদের সঙ্গে হরহামেশাই এসব ঘটনা ঘটছে! সচেতনাও যেন এখনে কম হয়ে পড়ছে!

এসব ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেলক্ষে নারীদের সচেতন হতে হবে। হুটহাট করে না জেনে বুঝে প্রেম এবং পরিণয় থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুবা এই হীন মানসিকতার পুরুষ সমাজ নারীর প্রতি অবিচার করতে বিবেকে বাধবে না। এই ঘটনায় উপযুক্ত তথ্য- প্রমাণ নিশ্চিত করে অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। নতুবা এসব অসাধু লোকের ফাঁদে পড়ে অন্য নারীরও সর্বনাশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আইনের পাশাপাশি নারীদের আরও সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে এ সমাজে নারীরা অস্পৃশ্য পুরুষের কাছে। তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নারীর ওপর যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা অস্বাভাবিক নয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ