Skip to content

২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মার্ট বাংলাদেশ ও নারী

সম্প্রতি নারীরা তাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে বিশেষ স্থান দখল করে নিতে সক্ষম হচ্ছেন। যে নারীরা পরিবার এবং সমাজে বৈষম্য- অবহেলা- অবজ্ঞা- নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার সেই নারীরাই বাধার দেওয়াল টপকে নিজেদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে সক্ষম হচ্ছেন। সব প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার মানসিক শক্তি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে নারীর। দেশের নারীরা যাতে আরও বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন সেলক্ষে বাংলাদেশ সরকার বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারীকে যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে বিভিন্নভাবে সাহায্য – সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বিভিন্নভাবে। যাতে নারী শক্তির জাগরণ ঘটে।

করোনাকালীন বিশ্ব অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে অনেকটা। দেশে এবং দেশের বাইরে এসব মন্দা পুষিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে এদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নারীর ভূমিকা অবিশ্বাস্য। আর নারীদের অংশগ্রহণ সেই বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকে পুষিয়ে নিতে বেশ সহোযোগিতা করেছে।

করোনাকালীন অনেকেই চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। সেসময় নতুনভাবে তারা শুরু করেছেন তাদের পথচলা। ঘরে বসে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায় অনেক নারী নিজেদের ভাগ্য বদলে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। ছোট বা মাঝারি এসব নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে সহোযোগিতা করার চেষ্টা করেছে রাষ্ট্র। তবে সবসময় সহোযোগিতা শতভাগ নিশ্চিত করা একা সরকারের পক্ষে সম্ভবও হয়নি। কারণ দেশের অর্থনীতিই সে সময়টা বেশ টালমাটাল ছিল। সে যাইহোক সম্প্রতি সরকার নারীদের উন্নয়নে নতুনভাবে চিন্তা করছেন। পাশে থেকে সর্বাত্মক সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। যাতে বাঙালি নারীরা নিজেদের সক্ষমতা বুঝতে সক্ষম হন। শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভর না করে কর্মোদ্যোগী হতে পারেন।

দেশ ধীরে ধীরে স্মার্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে এদেশের মানুষেরও স্মার্ট হওয়া জরুরি। তবে সেই স্মার্টনেস শুধু কথায় বা পোশাকে নয়, চিন্তা- চেতনা ও মননেও হওয়া অতীব জরুরি। যেখানে নারী – পুরুষের লৈঙ্গিক বৈষম্যে নারীকে হেয় করা হবে না। ধর্মকে পুঁজি করে মানুষকে খাটো করা যাবে না। মানুষ হবে এক অন্যতম সৃষ্টি যার মাধ্যমে তারা দেশের সামগ্রিক কল্যাণের প্রতি মনোযোগ দিতে সক্ষম হন। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হবে মানুষের মহত্তম হৃদয় দিয়ে। এই দেশ, এই জাতির সেই স্মার্ট বা আধুনিকায়ন করতে এগিয়ে আসতে হবে নারীকে। তাহলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে তেমনি এদেশের সামাজিক – সাংস্কৃতিক দিকও রক্ষিত হবে।

নারীরাই পারে জগৎকে পরিবর্তন করতে। কারণ সন্তান যখন জন্মগ্রহণ করছে তখন সেই সন্তানের লালন-পালনের ভার মায়ের ওপর শতভাগ বর্তায়। সন্তানের সবসময়ের সঙ্গী হন মা। তাই প্রত্যেক নারীই যদি কলুষতা মুক্ত আধুনিক মনন, চিন্তা – ভাবনা- জ্ঞানে ও দক্ষতায়, রুচিতে, বিজ্ঞানের চর্চায় সচেতন হন তবে সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশে অবশ্যই তার প্রভাব পড়া বাঞ্ছনীয়। তাই এদেশের অর্থনীতিকে সচল করতে হলে, এদেশের জনগণের সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে নারীর প্রতি মনোযোগ আরও বাড়াতে হবে। নারীকে বস্তা বন্দি করলে এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও মেধা- মননে কুয়োর ব্যাং হয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে নারী যদি স্মার্ট হন তবেই দেশ এবং অর্থনীতি হবে স্মার্ট।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে, এদেশের স্মার্ট অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে নারীদের আর্থিক সাহায্য- সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাবলম্বী হলেই সব চুকে যাবে এমনটা নয়। স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নারীরা কতটা রাষ্ট্র এবং সমাজকে প্রভাবিত করছেন তার প্রতি নজর দিতে হবে। নারীদের উন্নয়ন তরান্বিত হলে এদেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আলোর পথ দেখবে। এলক্ষে দেশকে যতটা জাগতে হবে ঠিক ততটা জাগতে নারীকে।

শুধু পোশাকেই স্মার্টনেস প্রকাশিত হয় না। স্মার্ট বাংলাদেশের ধারক- বাহক হতে হলে নারীকে গোঁড়ামি, কুসংস্কার দূর করতে হবে আগে। কারণ প্রবাদে আছে, গোড়ায় গলদ থাকলে মাথায় জল ঢেলে লাভ নেই! ঠিক বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান – বিজ্ঞানে নারীর চর্চা বাড়াতে হবে। পরিবর্তনের ক্ষমতা যেহেতু নারীর হাতে রয়েছে তাই এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে নারীকে জাগতে হবে। নারী যখন জাগতে শুরু করবেন তখনই এদেশ প্রকৃত অর্থে স্মার্ট হবে। এদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হতে পারবেন নারী।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ