Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগানে নারীপরিচালিত রেডিও স্টেশন বন্ধ: বর্বরতার আরেক ধাপ

আফগান নারীদের দুর্ভাগ্যপীড়িত জীবনের কাহিনি নতুন নয়। সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল তালেবান সরকার আরও বিভৎসতার প্রমাণ রেখেছে। রমজান মাসে গান শোনার অভিযোগে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নারীদের পরিচালিত একটি রেডিও স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সরকার।

এই ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিনিয়ত আফগান নারীদের ওপর চলছে একের পর এক অমানবিক নির্যাতন। ঘরে-বাইরে তাদের একপেশে করে ফেলা হয়েছে। স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার নারীদের নেই। এমনকি পার্কে বেড়ানোর ক্ষেত্রে আরোপিত হয়েছে বিধিনিষেধ। আধুনিক যুগে এসে নারীদের সঙ্গে এমন আচরণ শুধু অমানবিকই নয় অদ্ভুতও বটে। তালেবান সরকারের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শিকারে বর্তমানে নারীদের জীবন বিপর্যস্ত।

আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই নারীদের ওপর দমন-পীড়ন থামছে না। তালেবান সরকারের এত হিংস্রতায় নারীদের স্বাভাবিক জীবন রোহিত হয়েছে। নারীরা আর আগের মতো স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারছে না। কিন্তু তার মাত্রা এতটাই বেশি যে, এই নারীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভেতরে ভেতরে ফুঁসে ওঠার ফলে একসময় বিক্ষোভে অংশ নেয় এসব নারী। তবে সেখানেও তালেবানদের বিরূপ আচরণ লক্ষ করা যায়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। যদিও তালেবান সরকার এ বিষয়ে স্বীকার করতে নারাজ। তালেবানদের ক্ষমতায় আসার পর নারীদের ওপর এত নিষ্ঠুর আচরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দশ বছর আগে আফগানিস্তানে যাত্রা শুরু করেছিল সদাই বনোয়ান। অর্থাৎ নারীদের কণ্ঠ। সদাই বনোয়ান আফগানিস্তানের নারী পরিচালিত একমাত্র রেডিও স্টেশন। রেডিওতে আটজন কর্মীর মধ্যে ছয়জনই নারী। রমজান মাসে সেখানে গান বাজানোর অপরাধের অভিযোগে রেডিও স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাদখশান প্রদেশের তালেবান প্রশাসনের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পরিচালক ময়েজুদ্দিন আহমাদি বলেন, স্টেশনে রমজান মাসে গান ও সঙ্গীত প্রচার করা হয়। যা ইসলামি আমিরাতের আইন লঙ্গন। যার কারণে স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা আফগানিস্তানের ইসলামিক নিয়মনীতি মেনে চলার নিশ্চিয়তা দিলে আমরা আবারও চালুর অনুমতি দেবো। তালেবান সরকারের এমন অনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ অমানবিক এবং একইসঙ্গে খুবই হাস্যকর। বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে নিঃসন্দেহে তাদের গোঁড়ামি- বর্বরতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করতেই তাদের যত উদ্যোগ। কিন্তু এই তালেবান সরকার পুরুষতান্ত্রিক বর্বরোচিত আচরণ করে শুধু নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে না বরং বিশ্বের বুকে নিজেদের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করছে। তবে সবকিছু বিচার- বিশ্লেষণ করে বলতেই হয়, এই সরকার ধর্মের নামে গোঁড়ামি- ভণ্ডামি এবং পুরুষতান্ত্রিকতার চর্চায় ব্যস্ত। নতুবা শুধু নারীর ক্ষেত্রে এমন বিধিনিষেধের কোনোই সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

নারীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সামাজিকভাবে এবং জাতি হিসেবে শিক্ষিত-দক্ষ-যোগ্য হয়ে উঠতে সক্ষম হবে। কিন্তু তালেবান সরকার নারীর উন্নয়নকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। না তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন, না পারবেন নিজের মতো স্বাধীন জীবনযাপন করতে, আর নাই বা পারবেন স্বাধীনভাবে যেকোনো কাজে অংশগ্রহণ করতে! অর্থাৎ এই নারীরা শুধু পতিসেবায় নিজেদের জীবনকে নিয়োজিত করবেন। এতে তাদের ওপর শারীরিক-মানসিক যত নির্যাতনই হোক! এমনকি যেই আফগান নারীরা স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। জোর করে সেই স্বামীর সঙ্গেই ঘর করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক নারী এই অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেতে আত্মগোপন করছে।

এদিকে নারী পরিচালিত রেডিও স্টেশনকে যারা শুধু গান বাজানোর যুক্তি দিয়ে বন্ধ করে দিলেন এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয় তারা প্রচণ্ড পরিমাণে ধার্মিক একইসঙ্গে ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে অত্যন্ত সচেতন। তাহলে নারীদের ওপর এত অত্যাচার কেনো? স্বাধীন জীবনযাপন পালনে বাধা প্রদান কেনো?

ধর্মের নামে এত গোঁড়ামি-ভণ্ডামি করে শুধু নারী হওয়ার কারণে কেনো এত বর্বরোচিত আচরণের সম্মুখীন হবে আফগান নারীরা! বিবেকসম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝতে সক্ষম যে, এগুলো ধর্মের অপব্যাখ্যা- স্বার্থান্বেষী ভাবনা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, হীনতা-নীচতা ছাড়া কিছুই না। মূলত আফগানিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বদৌলতে নারীদের ওপর অমানুষিক অত্যাচারে লিপ্ত এই ভণ্ড শ্রেণি। যদিও আফগান নারীরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছে তবে অধিকার ছিনিয়ে নিতে তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ করা জরুরি। কট্টরপন্থী তালেবান সরকারকে প্রতিহত করতে এবং নারীদের অধিকার রক্ষায় বহির্বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্টগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাহলে দেরিতে হলেও আফগান নারীরা এই হিংস্র শাসক থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ