অটিজম সচেতনতা দিবস: নারী-কন্যার প্রতি যত্নশীল হোন
আজ ২ এপ্রিল, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও অটিজম ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এই প্রসঙ্গে দুটি কথা বলতে চাই।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা আর দশটা স্বাভাবিক মানুষ থেকে ভিন্ন। চিকিৎসক বিজ্ঞান তাদের অটিজম বলছে। আর এই অটিজম’রা সমাজে নানাভাবে বঞ্চিত-নিপীড়িত। এর মধ্যে আবার কন্যাশিশু ও নারীরা নানাভাবে বঞ্চিত। শৈশব থেকেই নারীর প্রতি এক ধরনের বিদ্বেষ পোষণ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। তারওপর নারী যদি হয় অটিজম, তাহলে এ সমাজে তার অবস্থান কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
এ সমাজে প্রতিপদে নারীর ওপর আরোপিত হয় নানাবিধ বিধিনিষেধ। নারীর স্বাভাবিক বিকাশ কখনোই হতে দেয় না পরিবার-সমাজ। শৈশব থেকেই পরিবার-সমাজের চাপিয়ে দেওয়া বোঝা আজীবন নারীকে বয়ে বেড়াতে হয়। নিজের ইচ্ছেকে খুব কম নারীই বাস্তবে রূপ দিতে পারে। তবে সেই গুটিকতক নারীকেও পার করতে হয় পাহাড় সমান বাধার দেয়াল। এই বাধাকে ডিঙিয়ে যারা স্বপ্নের পথে হাঁটতে পারে, তারাই প্রকৃত যোদ্ধা। জীবন পথের পথিক।
তবে সবাই তো আর সমান মেধা-মনন-মানসিক ও শারীরিক শক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কেউ কেউ এমন জীবন লাভ করে, যেখানে তার নিজের কিছু করার থাকে না। স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনই তাকে বহন করতে হয়। তবে এ কারণেও সমাজ তাকে বিচার করে, কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। ভালো-মন্দের দিক বিচার-বিশ্লেষণ না করে একটা বেফাঁস মন্তব্য করে বসে। যা এ শ্রেণির মানুষ এবং পরিবার-পরিজনের জন্য অনেক কষ্টের।
এ সমাজে অটিজম নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে পরিবার-সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি
অটিজম মূলত শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। যা স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও বৃদ্ধির অস্বাভাবিকতার জন্য হয়ে থাকে। এর ফলে স্বাভাবিক বিকাশ রোহিত হয়। কারও কারও মধ্যে বুদ্ধির বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারও শরীরের দৈহিক-গঠন প্রকৃতির সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার অনেকেই উভয় সমস্যাই পীড়িত হন। তবে নারীদের ক্ষেত্রটা ভিন্ন। শরীরবৃত্তীয় নানাবিধ বিষয়ে নারীদের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই এই নারীদের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন । তাই পরিবার-পরিজনের সচেতন হওয়া সবচেয়ে জরুরি। পরিবার যদি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব কন্যা-নারীর পাশে থাকে তবে এই নারীরা কিছুটা হলেও সঠিক পরিচর্যা পেতে সক্ষম হন। এমনকি সমাজের হীন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। নাহলে এ সমাজের কিছু নরপিশাচ আছে যারা নারী দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার চেষ্টায় মত্ত থাকে। তাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এসব নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিবারের সচেতনতা, ভালোবাসা জরুরি। তাদের প্রতি করুণার চোখে নয় বরং ভালোবাসার পরশে, মায়া-মমতায় আগলে রাখা প্রয়োজন।
আর আমাদের সমাজের মানসিকতা এখনো ততটা উন্নত নয়। ফলে কিছু মানুষ আছে যারা ‘অটিজম’ নারীকেও কটাক্ষ করে। শিকারে পরিণত করতে চায়। এ সমাজে অটিজম নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে পরিবার-সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে একটাই চাওয়া, অটিজম ব্যক্তিদের প্রতি যত্নশীল হোন। তবেই পৃথিবী হয়ে উঠবে আমাদের সবার।