রোজায় প্রবীণ নারীদের যত্ন নিতে হবে
আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য নতুন নয়। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই নারী নির্যাতন -নিপীড়নের শিকার। ফলে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ- মর্যাদা গড়ে তোলা আজও সম্ভব হয়নি। এরচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সমাজের প্রবীণ নারীদের। বর্তমান সময়ের অনেক নারী স্থান-কাল-পাত্রভেদে তাদের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন। নিজের ভালো মন্দ সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সক্ষম । তবে এ সমাজে একশ্রেণির নারী আছেন, যারা আজও আগের মতোই অবহেলার শিকার। যারা বয়সের মাপকাঠিতে এ সমাজে প্রবীণ বলে গণ্য হন। সেই প্রবীণ নারীদের প্রতি পরিবার- সমাজের সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেই।
প্রবীণ নারীরা এ সমাজকে সুগঠিত করতে বিশেষ অবদান রাখলেও তাদের জীবনযাপন নিয়ে পরিবার-পরিজনদের মধ্যে তেমন কোনো তাপ-উত্তাপ নেই। মা- চাচি- ফুপু যেই নামেই নারী অধিকৃত হোন না কেন, তাদের পরিচয় হয় নারী। ফলে সমাজের চোখে বৈষম্য তাদের ঘিরে রাখেই। মায়ের মমতা ছাড়া সন্তান লালন-পালন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে একজন নারী যখন মা হন তখন সন্তান এবং পরিবারের মঙ্গল কামনায় নিজেকে উজাড় করে দেন। জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি মনে করেন সন্তানকে। কারণ তিনি বা অধিকাংশ নারীই মনে করেন এবং একইসঙ্গে অন্তরে বিশ্বাস করেন সন্তানের সাফল্যই মায়ের সাফল্য। কিন্তু একটি পর্যায়ে এসে দেখা মিলছে বিপরীত কোনো পরিবেশ – পরিস্থিতির। সন্তান যখন বড় হচ্ছেন, চাকরি-বাকরি করে নিজের সংসার গোছাতে ব্যস্ত তখন এই মা’ই তাদের কাছে বাড়তি বোঝা হয়ে যাচ্ছে। মায়ের প্রতি সন্তানের যে কর্তব্য তা আর সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। এর ফলস্বরূপ বর্তমানে অনেক বৃদ্ধাশ্রমের জন্ম নিয়েছে। কিন্তু ভেবে দেখা দরকার এই মা বা নারীরা তাদের জীবনের সর্বোচ্চটা নিংড়ে তার পরিবার-পরিজনকে খুশি রাখতে প্রাণপাত করতেও পিছপা হোন না।
এদেশে অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ- মুসলিম । আর ইসলামপ্রধান দেশ বিধায় এদেশের মানুষেরা অধিকাংশ থাকেন ইবাদতে মশগুল। এবং সামনে যেহেতু রমজান সেক্ষেত্রে সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতারি, সেহেরি থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় নিয়ে নানাধরণের শৃঙ্খলা রাখতে চেষ্টা করেন। তবে আমাদের উচিত বিশেষভাবে এই সময়টা প্রবীণ নারীদের প্রতি নজর দেওয়া। তাদের বাড়তি সুযোগ -সুবিধা তৈরি করে দেওয়া।
এক্ষেত্রে নারীরাই কিন্তু নারীর প্রতি বেশি তির্যক আচরণ করে! তাই সবাইকে মনে রাখা প্রয়োজন একদিন এই বয়স, পরিস্থিতি তাদেরও আসতে পারে!
যাতে এ সময়টা তারা একাকিত্ব, কষ্ট বা বয়সের ভার অনুভব না করেন। প্রথম ইবাদত শুরু হোক ঘরের প্রবীণ নারীটির প্রতি ভালো বা শুভ ব্যবহারের মাধ্যমে। এ সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হোক মায়ের মতো আগলে রেখে যারা সমাজ গঠনে, পরিবার গঠনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি সুনজর দেওয়ার মাধ্যমে । এলক্ষে প্রবীণ নারীদের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে হবে। যেহুতু তারা প্রবীণ তাই তাদের শক্তি-সামর্থ্যও কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে রমজানকে ঘিরে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার জায়গাটা আরও বৃদ্ধি পাক। মানুষের মানবিক গুণের মহত্তম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হোক নারী।
মানুষের মনুষ্যত্ব বিবেকের কিছু দায় আছে। যে দায়গুলো যত অজুহাতই আসুক না কেনো ফেলে দেওয়ার নয়। মা বা বাড়ির প্রবীণ নারীটি যে বা যারা সন্তান- ভাই- বাবা- মায়ের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষ হিসেবে কিছু নৈতিক- মানবিক দায়বদ্ধতা আছে। জীবনকে সুন্দর – সুগঠিত করতে যেই নারী তার জীবনকে নিঃশেষ করে দিচ্ছেন একটা সময় সেই প্রবীণ ব্যক্তিটি কেনো সবার বোঝা হচ্ছেন?
একসময় সন্তান মায়ের কোল ছাড়া অনিরাপদ ছিল। মা কিন্তু তার সন্তানকে আগলে রেখেছেন তার সবটা দিয়ে। কিন্তু সেই সন্তান যখন বড় হচ্ছেন তখন সে বা তারা মা বা বাড়ির প্রবীণ নারী সদস্যটির প্রতি ক্রুর আচরণ করছেন। বোঝা ভেবে তার সঙ্গে অসদাচরণে লিপ্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে নারীরাই কিন্তু নারীর প্রতি বেশি তির্যক আচরণ করে! তাই সবাইকে মনে রাখা প্রয়োজন একদিন এই বয়স, পরিস্থিতি তাদেরও আসতে পারে! সেসময় তাকে যদি কেউ বোঝা ভেবে খারাপ আচরণে লিপ্ত হন তা কখনোই কাম্য নয়।
মোদ্দা কথা হলো, মানুষ হিসেবে মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রবীণ নারী বলে পরিবারে – সমাজে অবহেলা করা যাবে না। যেহেতু রমজানে সবাই একটু বেশিই ধর্ম সম্পর্কে সচেতন হতে সচেষ্ট হন তাই কথাপ্রসঙ্গে চলেই আসে, যেন মুখে মুখে আমাদের ধর্মের বড়াই না হয় বরং ধর্ম হোক প্রাণের অনুভূতি। পালনীয়, আচরণীয় ও করনীয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করে তাকে উপর্যুপরি ব্যবহার করা। মানুষের মানবিক চেতনাকে প্রসারিত করা এবং প্রবীণ নারীর প্রাপ্ত সম্মান- শ্রদ্ধা – মর্যাদা- দেখভাল করা। শুভক্ষণের নিমিত্তে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে শুভবোধের উদয় হোক। পরিবারে- সমাজে প্রবীণ নারীরা তাদের পূর্ণ সম্মানে অধিষ্ঠিত হোন।