Skip to content

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইরানী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

ইতিহাসে নারী নির্যাতনের নানাবিধ ঘটনা উল্লেখ থাকলেও আধুনিকতার যুগে এসেও নারীর প্রতি শ্বাসরুদ্ধকর অত্যাচার নতুন করে ভাবতে শেখায়। যুগের পরিবর্তন হলেও নারীরা সর্বক্ষেত্রে সর্বকালেই নির্যাতনের শিকার। নারীর জন্মই যেন আজন্ম অন্যের দাসত্ব করার জন্য। সমাজের শৃঙ্খলে বন্দি থেকে প্রাণ নিংড়ে দেওয়া অপরের কল্যাণে। নারী স্বাধীনতা নিয়ে যতোই সোচ্চার হোক না কেনো কিছু কিছু দেশ তাদের অতি রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে কন্যা সন্তানকে মানুষ হিসেবেই মানতে নারাজ। বিশেষ করে মুসলিমপ্রধান দেশগুলো আজ অবধি নারীর সঙ্গে হীন আচরণে অভ্যস্ত! তবে ইতিহাস ঘাটলে এটাই উঠে আসে, একমাত্র ইসলাম নারীর পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে। তবু কেন সেই মর্যাদার কিঞ্চিৎ ছিটেফোঁটাও নেই বর্তমান যুগে এসেও! তাহলে নারীর মর্যাদা-সম্মান কোথায়?

সম্প্রতি ইরান, আফগানিস্তানের নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীদের কোনো স্বাধীন জীবনযাপন নেই এই দেশসগুলোয়। নারীরা এদেশের পুরুষতন্ত্রের হাতের ক্রীড়নক পুতুল। নারীর সঙ্গে চলে যথেচ্ছ আচরণ। শুধু কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে তাদের ওপর চলে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার। সত্যিকার অর্থে এ যুগে এসেও হীন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষগুলো কি বিবেক দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না!

কেনো বিবেক-বুদ্ধি-জ্ঞানের চর্চা নেই। আর যদি তা না হয়েও থাকে তবু প্রশ্ন থেকে যায়, কোন ধর্মে নারীর সঙ্গে এমন পাষণ্ডের মতো অত্যাচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? ধর্ম আসলে কী বলে? যদি ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে রাখার মধ্যে ধর্মের চর্চা করার নীতি প্রচার করা হয় তবে সেসব অসভ্য, বর্বর মানুষদের জন্য দেশের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে যখন দেশজুড়েই নৈরাজ্য শুরু হয় তখন বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সর্বোপরি নির্যাতিত নারীদের সোচ্চার হওয়া জরুরি।

সম্প্রতি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে ইরানে। কন্যা সন্তানকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে শত শত শিক্ষার্থীকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও বিষের মাত্রা কিঞ্চিৎ কম হওয়ায় এই কন্যাদের অনেকেই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করে টিকে আছে। তবে ইরানী নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন বিরূপ আচরণ শুধু ঘৃণ্যতারই প্রমাণ করে না বরং বিবেকবর্জিত -মনুষ্যত্বহীন-অরাজকতার প্রকাশ করে। মানুষকে মানুষের মতো মর্যাদা দিতে সমস্যা কোথায়? নারী হয়ে জন্মলাভ করলে শিক্ষাগ্রহণ করা যাবে না কোথায় তা উল্লেখিত আছে! এসব পুরুষতান্ত্রিক ধান্দাবাজ মনোভাব শুধু নারীকে পায়ের তলায় পিষে মারার জন্য। নারীরা যাতে অবলা পশুর মতো পুরুষের হ্যাঁ -তে হ্যাঁ মেলাতে পারে তার পায়তারা মাত্র। কোনো বিবেকসম্পন্ন প্রগতিশীল মানুষের পক্ষে এ ধরনের অনৈতিক কাজ মেনে নেওয়া অসম্ভব। ইরানী নারীদেরই নয় বরং প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক নারীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নারী কোন নির্জীব প্রাণী নয়। নারীরা মানুষ। তাই নিজেদের অধিকারের যথার্থ স্বীকৃতি পেতে দরকার হলে জাগতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।

ইরানের পবিত্র নগরী কোমে শত শত স্কুল ছাত্রীকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে এই শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত বছরের নভেম্বরের শেষ থেকে এ শহরে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের বিষক্রিয়ার তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। আক্রান্ত কয়েকজন স্কুলছাত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এমন বর্বর পশুত্বের কারণে আর কতকাল নারীকে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হতে হবে? পুরুষতন্ত্রকে কে দিয়েছে এই শক্তি?

নারীদের জাগতে হবে। মনে রাখতে হবে বাঁচতে হলে বাঁচার মতো বাঁচতে হবে। পশুর জীবনযাপন করে লাভ নেই। তারচেয়ে বড় কথা হলো কেনোই বা একই দেশের নাগরিক ভিন্ন ধরনের অধিকার ভোগ করবে। লিঙ্গভেদে ভিন্ন হওয়ার জন্য তো মেধা-মনন -চাহিদার কোনো পার্থক্য দেখা দেয় না। তবে কেনো এমন অরাজকতা?

তাই নিখিল নারীদের মনে রাখতেই হবে, যদি নিজের জীবনের স্বাধীনতা পালনের ক্ষমতা রোহিত হয় তবে সেই জীবন যতক্ষণ আছে ততদিন লড়াই জারি রাখতে হবে। চায়লেই নারীর সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে অভ্যস্ত হওয়ার মানসিকতার পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে নারীকে। প্রাণ থাকা পর্যন্ত অন্যায়ের সঙ্গে লড়তে হবে।

আবারও জালেমরা তাদের নখাঘাতে নারীদের ক্ষতবিক্ষত করার পায়তারা করতে শুরু করেছে। তাই মনের প্রবল ইচ্ছেয় এগুতে হবে। শত বাধার মুখেও নারীকে মনে রাখতে হবে,জীবন ফুলশয্যা নয়। ফলে এখনই সময় পৃথিবীর সব নারীকে সম্মিলিতভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ইরান, আফগানিস্তান তথা বিশ্বের সব নারী আপন যোগ্যতা, লড়াই জারি রেখে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করুক। নিজেদের সৎ অধিকারের সঙ্গে কারও কাছে মাথা নত নয়৷ বরং ছিনিয়ে আনতে হবে আবারও স্বাধীনতা-নারী স্বাধীনতা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ