Skip to content

৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর যেন কেউ র‍্যাগিংয়ের বলি না হয়

সাধারণত মনে করা হয়, র‍্যাগিং হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরনো শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানোর নতুন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে পুরনোদের কাছ থেকে নতুন শিক্ষার্থীরা আদব কায়দা শিখবে। কিন্তু, বাংলাদেশে র‍্যাগিংয়ের নামে নতুন শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। তাই, এটি পরিণত হয়ে গেছে অপসংস্কৃতিতে।

র‍্যাগিংয়ের ধরনগুলো হলো, ইভটিজিং করা, পানিতে ডোবানো, ঘরে আটকে রেখে বিবস্ত্র করে ভিডিওধারণ করা, এমনকি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি ইত্যাদি। এর পরিণতি খুব খারাপ। অনেক নতুন শিক্ষার্থী র‍্যাগিংয়ের ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে চলে যায় বাড়িতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই-বোনদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার পড়াশোনার আগ্রহ কমে যায়। ভীতি কাজ করে।

বিগত ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৩০০-এর বেশি র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে, ৫০০ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী র‍্যাগিংয়ের কবলে পড়েছেন। তারই শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বুয়েটের শিক্ষার্থীর প্রাণনাশ।

সম্প্রতি, র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী। রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে ওই শিক্ষার্থীর। ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী, ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী অভিযুক্তদের ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা সব সময় শোষিত হচ্ছে। নারীরা নারীর পাশে দাঁড়াবে, তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, এটাই তো হওয়া উচিত। তারপরও ঘটে যাচ্ছে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা। পরিবার,সমাজের তথা রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত নারীরাই নারীদের পদদলিত করছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আজকাল অনলাইনে বা অফলাইনে ঘটে চলছে নারীদের বেদনাময় নির্যাতনের ঘটনা। সেগুলো কিছু কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তখন প্রশাসনের টনক নড়ে। তারা জোরসোরে তদন্ত শুরু করেন। অভিযুক্তরা কখনো ধরা পড়ে, কখনো ধরা পড়ে না। কখনো ভুক্তভোগী সুষ্ঠু বিচার পায়, কখনো পায় না।

এভাবেই সমাজে নারী নির্যাতনের বহু ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত, বেশিরভাগ নারীরা কবলিত হচ্ছে মানসিক ও পাশবিক নির্যাতনের। কেউ মুখ খুলছে, কেউ সামাজিকতার ভয়ে নীরবে নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিচ্ছে। ব্যক্তিজীবনের সম্মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

তাই, যেখানেই নারী নির্যাতিত হচ্ছে সেখানেই ভয় না পেয়ে ঘটনাগুলোকে মানুষের সামনে আনুন। বিচার দাবি করুন। অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে এমন ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটবে। তাই আসুন, পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত নারী নির্যাতন রোধে সোচ্চার হই। কণ্ঠকে দমিয়ে না রেখে, উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের মুখোমুখি হই। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নারী বান্ধব নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করি। সরকারি পর্যায়ে বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ দেই। ঘটনাকে অতিরঞ্জিত না করে সঠিকভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরি।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ