Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরির নামে নারী-নির্যাতন: বন্ধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি

সম্প্রতি নারী নির্যাতনের নতুন কৌশল সৃষ্টি করেছে কিছু অসাধু শ্রেণী। নারীকে বশে আনতে তাদের দুর্বলতায় আঘাত হানছে। বর্তমান সময়ে যেহেতু নারীরাও জীবন-জীবিকার সন্ধানে বাইরের জগতে পা বাড়িয়েছে, ঠিক তখনই এই অসাধুচক্র নারীদের উন্নত জীবনের আশায় তাদের প্ররোচিত করছে। আর এভাবেই অসংখ্য নারী শুধু দেশের গণ্ডিতেই নয় এমনকি বহির্বিশ্বের যেকোনো দেশেই পাড়ি জমাতে দ্বিধা করছে না।

উন্নত জীবনের আশায় অনেক নারীকে পাচার করার দুঃসাহসও দেখায় এ শ্রেণী। বেশিরভাগ নারী বুঝতেও পারে না তারা ভয়ানক চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছে! আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদারকি না থাকায় দেশে এবং দেশের বাইরে এসব অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে কিছু নিরীহ মানুষ। তাই চাকরি হোক বা জীবন-জীবিকার একমাত্র আশ্রয়ের আশা হোক নারীকে সচেতন হতে হবে।

জনসংখ্যার তুলনায় দেশে সবার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকের ধারণা প্রবাসে তাদের জীবনের সব সমস্যার সমাধান ঘটবে। এজন্য বিশেষ করে গ্রাম-অঞ্চলের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত নারী-পুরুষ না বুঝে এই শ্রেণীর ফাঁদে পা দিচ্ছে। যেহেতু তাদের একমাত্র সম্বল কিঞ্চিৎ জমি বা বসতভিটা। তাই শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে বা বর্গা রেখে টাকা সংগ্রহ করে এ শ্রেণীর নারী-পুরুষ। আর এই রক্তশোষা সম্বলটুকু নিয়ে পাড়ি জমায় দূর দেশে। পরিবার-পরিজনের মঙ্গলের আশায়। ফলে তারা যখন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তখনো দেশে ফিরে পরিবার এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়। আর এই শঙ্কার ফলে অসাধু চক্রের সব কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

কিন্তু বেশিরভাগক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই অসাধু চক্র বা দালাল শ্রেণীর হাত ধরে যারা উন্নত জীবনের আশায় পথে পা রাখছেন, সেই নারীরা অধিকাংশ সময়ই যৌন-নির্যাতন, ধর্ষণ তথা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কেউ কেউ গুম, খুনের শিকারও হচ্ছে।

সরকারি বিধিমালা মোতাবেক বিদেশে যেতে হলে যে পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হয়, সে তুলনায় অসাধু চক্র কম টাকায় বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। এর ফলে অসহায় হয়ে জীবনের তাগিদে জীবন-মরণ বাজি রেখে পা বাড়াচ্ছে আজও অনেকেই। এর ফলস্বরূপ প্রবাসে নারীদের নির্যাতনের নানাবিধ চিত্রের যে দেখা মিলছে না তা নয়। তবু আজও সচেতন নয় গ্রাম-অঞ্চলের নারীরা!

মানবপাচার রোধ, ভুক্তভোগীকে সহায়তা করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে নারীদের মুক্তি মেলে।

রিক্রুটিং অ্যজেন্সির প্রলোভনে পড়ে যাতে কোনো নারী ভুল পথে পা না বাড়ায় সে লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর জন্য সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট ছোট নাটিকা উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে গ্রামের সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে যাতে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি বাড়াতে হবে। দালাল চক্রের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করার প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের সেবক। সাধারণ মানুষ তাদের নিয়ম-নীতি-নিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল। ফলে তাদের মধ্যে দুর্নীতি দেখা দিলে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হতে হয়!

এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তৎপরতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে গ্রাম সরকার যদি গ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন তবে প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সমস্যা গোড়াতেই নির্মূল হয়ে যাবে। বিশেষ করে নারীদের এ ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে গ্রামের সবার এগিয়ে আসা অবিশ্বম্ভাবী। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদিও মানুষের পারস্পরিক সখ্য কমেছে তবু আজও পাশের বাড়ির খবরটা অন্তত প্রতিবেশী রাখে। ফলে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নারীদের পরিবার-পরিজন এমনকি গ্রামের বোধসম্পন্ন ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। সর্বোপরি অসৎ পথ ত্যাগ করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, হায়েনার দল সর্বত্র ফলে নারীর নিজের সাবধানতা আবশ্যক।

চাকরি দেওয়ার নামে শুধু প্রবাসে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেই নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এমন নয়। বরং দেশেও এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফলে হুটহাট নারীরা কোন অপরিচিত-অজ্ঞাত ব্যক্তির কথায় প্রলুব্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে অর্থ লেন- দেন বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যেকোনো স্থানে সাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যুগ যেমন পাল্টাচ্ছে তেমনই অসৎ মানুষের কৌশলেরও পরিবর্তন ঘটছে। নারীরা যেহেতু বেশিরভাগ সময়ই না ভেবেই জড়িয়ে পড়ে তাই এই অসাধুরাও নারীকেই টার্গেট করে। তাই অসাধু, প্রতারক শ্রেণীর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে নারীর সাবধানতার বিকল্প নেই। এছাড়া, মানবপাচার রোধ, ভুক্তভোগীকে সহায়তা করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে নারীদের মুক্তি মেলে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ