নিন্দুকের নিন্দায় দমে গেলে চলবে না
আমরা আর কিছু না পারলেও অন্যের দোষ ধরতে দক্ষ। আমরা স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করেই সমালোচনা করতে পারি প্রচুর। সারা বিশ্ব যেখানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে; আমরা সেখানে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অন্যের কাজের দোষ ধরছি। সমালোচনা করছি। আমাদের এ সমালোচনার ক্ষেত্রে নেতিবাচক বিষয়েরই চর্চা হয় বেশি।
সমাজে সাধারণ কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, নিন্দুকের একটি কথা ভুক্তভোগীকে কতটুকু বিমর্ষ করতে পারে। ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এক নিমিষেই বিনষ্ট করতে পারে। খুব সাবলীলভাবে চলার পথ করে তুলতে পারে কণ্টকাকীর্ণ।
এই ধরুন, আপনি সবসময় হাসিখুশি থাকেন, সবার সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলেন, তারা কোনো সমস্যায় পড়লে আপনার সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, কেউ দুশ্চিন্তায় থাকলে তাকে সঠিক সমাধান দেন। কিন্তু একসময় দেখবেন, তারাই আপনাকে নিয়ে নিন্দার ফুলঝুরি ছড়াবে। আপনার কাজের নানা ধরনের দোষ তারা খুঁজে বের করবে। আর তাদের এই সমালোচনা আপনার দৈনন্দিন জীবনে খুব খারাপভাবে প্রভাব ফেলবে।
পৃথিবীর সব দেশেই এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে অন্যকে নিয়ে সমালোচনার এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অকারণেই অন্যের নামে সমালোচনার ভাণ্ডার নিয়ে থাকে তারা। এই নিন্দুক ব্যক্তিদের সমালোচনার শিকার হয়ে অনেকেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তাদের মনের ভেতর জন্ম নেয় অজানা এক ধরনের ভয় ও লজ্জা। স্যার উইনস্টন চার্চিল সমালোচনার কষ্টকে ‘শারীরিক ব্যথার চেয়েও বেশি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু মানুষ তার পরও কেন অন্যের সমালোচনা করতে এত পছন্দ করেন তা এক রহস্য।
অনেকেই নিন্দুকের নিন্দা সহজভাবে নিতে পারে না। আশেপাশের মানুষের যখন তাকে নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত, সে তখন হয়তো অন্ধকারে নিজের দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। সব কিছুর জন্য দোষ দিচ্ছে নিজেকে। নিন্দুকের নিন্দা একজন মানুষকে আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে যেতে পারে। শুধু সমালোচনার করাঘাতেই ঝরে যেতে পারে নির্দোষ কারও প্রাণ।
সমালোচনা আমরা অবশ্যই করবো, কিন্তু শুধু শুধু সমালোচনা করে বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে আমরা কারও সৎ ও আন্তরিক উদ্যোগে যেন বাগড়া না দেই! নিজে কিছু করতে না পারি, না-ই করলাম, কিন্তু যে কিছু একটা করছে, খামোখা কেন তার পথকে কণ্টকিত করবো? কিন্তু তারপরও নিন্দুকরা নিষ্ক্রিয় হবে বলে মনে হয় না। তাদের ব্যাপারে কর্মী ও উদ্যোগী মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে দিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতার সেই ‘নন্দলাল’ হয়ে ঘরে শুয়ে-বসেই সাধের জীবনটা পার করে দিতে হবে!