ট্রান্সজেন্ডাররা হয়ে উঠুক মানবসম্পদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল দেশের মানুষের মুক্তি, সবার জন্য বাসযোগ্য, বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে গর্ব করার মতো অনেক অর্জন থাকলেও বৈষম্যহীন ও সবার জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যর্থতার কারণে সবচেয়ে বড় অবহেলিত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডাররা অন্যতম।
নানা জটিলতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে মেধা বিকাশের সুযোগ তারা খুব কম থাকা সত্ত্বেও যারা নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারেন, তারাই হয়ে থাকেন ইতিহাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
খবরে প্রকাশিত, প্রথম ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন অংকিতা ইসলাম। এর মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট অনেকের। তবে, একজন ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে অংকিতাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। সেই দীর্ঘ লড়াই ছাপিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগে এক্সিকিউটিভ এমবিএ করার সুযোগ পেয়েছেনতিনি।
তার অধ্যয়নের পথ মসৃণ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের বাণিজ্যিক এই প্রোগ্রাম শেষ করতে অঙ্কিতার অর্থ ব্যয় হবে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। শিক্ষা ক্ষেত্রে স্বাক্ষর রেখে এভাবেই বাকি ট্রান্সজেন্ডারদের অনুপ্রেরণা হলেন অংকিতা।এভাবে দেশের প্রতিটা সেক্টরে তাদের যোগ্যতার পরিচয় দেশের নানা মুখী সমস্যা দূর করে একটি স্বাভাবিক সমাজ গড়তে সাহায্য করবে। ট্রান্সজেন্ডার বলে কোনো জায়গায় পিছিয়ে থাকতে হবে এই পুরনো ধারণা থেকে বের হয়ে আসার সময় এসেছে।
আমাদের সমাজে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের ছোট বেলা থেকেই স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠতে পরিবার ও সমাজ থেকে সহযোগিতা করতে হবে। বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের যে শারীরিক পরিবর্তন আসে, তাকে ৫ টা সাধারণ ছেলে মেয়েদের মতোই স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে। সমাজ তাদের আলাদা সুযোগ-সুবিধা দেবে আলাদা, দৃষ্টি দেবে; এই চিন্তা থেকে বের হয়ে তাদের যোগ্যতা ও মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের অলশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
জন্মগতভাবে এই শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে যারা আমাদের সমাজে ভূমিষ্ঠ হয়, তাদের পারিবারিক, সামাজিক; এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হওয়ার অনাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা আমাদের চিরচেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই অবহেলিত নাগরিকদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ভোটার তালিকায় তারা এখন নারী বা পুরুষ হিসেবে নয়, সরাসরি হিজড়া পরিচয়েও নিজেদের নাম নিবন্ধন করার অধিকার পেয়েছে। বিপুল সংখ্যক হিজড়াকে সরকার ভাতাও দিচ্ছে। তবে আমরা মনে করি ট্রান্সজেন্ডারদের ধারাবাহিক ও স্থায়ী উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করতে সবার মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকার, বেসরকারি সংগঠন ও গণমাধ্যমকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু কর্মসূচি ঘোষণা করলেই হবে না, তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। তাহলে সমাজের এই অবহেলিত জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হবে।