প্রেমের আড়ালে ধর্ষণ: হোক কঠোর শাস্তি
দুজন নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেম স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রেমের সম্পর্ককে পবিত্র সম্পর্ক বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রেমঘটিত দুর্ঘটনাই যেনো চোখে পড়ছে বেশি।
নতুন বছরের শুরুতেই পত্রিকার পাতা খুলে চোখে পড়লো নির্যাতিতা নারীর ঘটনা। সোমবার (২ জানুয়ারি) প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলো তরুণী। ফোনের পরিচয় থেকেই এই কিশোরীর সঙ্গে একসময় প্রেমের সম্পর্কে জড়ান অভিযুক্ত ১ জন। প্রেমিকের সঙ্গে থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে দেখা করতে করতে গিয়েছিল ওই কিশোরী। প্রেমিক ও প্রেমিকের ১ বন্ধু মিলে তাকে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে।
প্রেমের মতো একটি মধুর সম্পর্কেই একজন নারীর নিরাপত্তা নেই। যেই প্রেমিক বন্ধুদের নিয়ে তার প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে সেই প্রেমিকের মূল্যবোধের কতটুকু কাজ করে তাই প্রশ্ন। সমাজে ভালোবাসার মূল্য কোথায় রইলো?
গত বছর শেষও হয়েছিলো ধর্ষণের ঘটনা দিয়েই। চলন্ত গাড়িতে চারজন তরুণ ধর্ষণ করলো তরুণীকে। এত বছরেও কেন নিশ্চিত হলো না নারীর নিরাপত্তার জায়গা? কেন নারীরা এখনো নিরাপদে পথ চলতে পারে না? কেন এখনো দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় নারী? এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ কেন দিচ্ছে না? প্রশাসন কেন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কেন অভিযুক্তরা সাজা পাচ্ছে না? প্রেমের মতো পবিত্র সম্পর্ককে কেন কিছু মানুষ ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে ব্যবহার করে?
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে একজন পুরুষ যেমন স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার আছে, তেমনি রয়েছে নারীরও। কিন্তু পুরুষ যেভাবে চলাফেরার স্বাধীনতা ভোগ করে, নিরাপত্তার সুবিধা পায়, তেমন স্বাধীনতা-সুবিধা নারীরা পায় না। নারীর জন্য কর্মক্ষেত্র, গণপরিবহন, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। এমনকি নিরাপদ নয় নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছেও। অন্তত বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তাই দেখা যাচ্ছে।
নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছেই আমরা নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করি। ভালোবাসার মানুষ আমাদের কাছে বিশ্বস্ততার ওপর নাম। কিন্তু এই বিশ্বস্ততার সুযোগ নেই কিছু মানুষরূপী নরপশু। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের ঘটনা সাধারণত ঘটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সমাজে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার জানাজানি হলে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় পরবর্তী সময়ে এই মামলার বিচার হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এই বিচারের রায় ভুক্তভোগীর পক্ষে থাকে না। ভুক্তভোগীএর চরিত্রে ‘কলঙ্ক’ আরোপ করার সবরকম চেষ্টা করে তারা। আর অভিযুক্ত যদি বিত্তশালী হয়, তাহলে নির্বিঘ্নে ঘটনার আলামত নষ্ট করে দেয়। আইনি প্রক্রিয়ায়ও গড়িমসি করে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী নিজে থেকেই চুপ হয়ে যায়।
ধর্ষণ একটি সামাজিক বিকার-ঘৃণ্যতম অপরাধও। ধর্ষকদের মধ্যে আছে বর্বরতা, আছে নির্লজ্জ অজুহাতও। দ্রুত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া ধর্ষণের মতো অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই ধর্ষকদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অপরাধীর যথাযোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমাজকে নারীর জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হবে।
নারীর নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। নিজের ভালো-মন্দ নিজেকে বুঝতে হবে। কে তাকে ব্যবহার করছে আর কে তাকে ভালোবাসে, এই বিষয়টি বুঝতে হবে। সর্বোপরি, নারীর নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে।