Skip to content

২৪শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অশ্লীলভঙ্গি ও সস্তা জনপ্রিয়তার ইঁদুরদৌড়

‘যত কম পোষাক পরবেন, নারীদের ততই সুন্দরী লাগবে। মানুষ বিশেষ করে পুরুষরা দেখে চোখের ক্ষুধা মেটাবে। আর নারী জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে যাবেন।’ তাই এমন ধ্যান ধারণার অধিকারী কিছু নারী বিশেষ করে, মিডিয়ার কর্মরত কিছু নারী সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই রকম পোষাক পরছেন।

হয়তো বলবেন, নারী হয়ে নারীর পোষাকের স্বাধীনতাকে নগ্নতা বলছি। পোষাকের স্বাধীনতা আর কোনো লক্ষ্যপূরণে নগ্ন হওয়া এক বিষয় নয়। যৌন-খোরাক বা যৌনপ্রাণী নারী নিজেকেই করে তুলছেন। বলবেন, যুগের পরিবর্তন হয়েছে। তাই মিডিয়ার নারীরাও বদলাতে শুরু করেছেন।

মিডিয়ার নারীরা ভাবছেন ওজন কমিয়ে স্লিম হলে, তাদের আর্কষণীয় মনে হবে। তাতে দর্শকদের প্রিয়ভাজন হতে পারবেন। আর দর্শকরা যখন এইসব নারীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন, তখন তার চাহিদা বাড়বে। কাজের সুযোগও বেশি পাবেন। সমাজের মানুষরা মনে করেন, শুধু মাত্র ক্রেজিনেস ফিগারই পারে পুরুষদের চাহিদা মেটাতে। তাই তারা আর্কষণীয় চেহারাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর খোলামেলা পোষাকে নায়িকাদের দেখতে অভ্যস্ত হলে, দর্শক জনপ্রিয়তা পাবেন। আর নায়িকা ও পরিচালকদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে।

আগের যুগেও নায়িকারা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন কিন্তু নগ্ন হয়ে নয়। বর্তমান যুগেও মিডিয়ায় অনেকেই আছেন, যারা অনেক শালীনতা বজায় রেখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন।

আদিকাল থেকে পুরুষরা যতটা না নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতাকে সম্মান করে আসছে, তারও বেশি মূল্যায়ন করেছে দৈহিক সৌন্দর্যকে। নারীরা পুরুষের দৈহিক সৌন্দর্য দেখে অবশ্যই, কিন্তু তার আগে দেখে তার আর্থিক সক্ষমতা। যখন নারী উপার্জনক্ষম হবে, তখনো স্বাবলম্বী পুরুষদেরই জীবনসঙ্গী হিসেবে খুঁজবে। অথচ একজন পুরুষেরা নারীর স্বাবলম্বীতার চেয়ে তার সৌন্দর্যেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তবে এখন কিছু কিছু পুরুষের মানসিকতার বদল ঘটছে, স্বাবলম্বী নারী হলে তার সৌন্দর্যের ঘাটতিকে বিবেচনায় আনছে না।

পুরুষের কাছে নারী একটা সেক্স অবজেক্ট হিসেবে যতদিন আটকে থাকবে, ততদিন তারা সম্মান হারাবে। নারীর নিজেকে যোগ্য, অভিজ্ঞ, স্বতন্ত্র, মুক্তচিন্তাবিদ, সাহসী, দৃঢ় হয়ে গড়ে উঠতে হবে।

আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর জন্য, ক্ষমতার জন্য, জনপ্রিয়তার জন্য, সমাজে তার অবস্থান ওপরে তোলার জন্য নগ্নতা কোনো সুস্থ উপায় নয়। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে পুরুষকেও। নারীকে দেখতে হবে তার পাশাপাশি চলার যোগ্য সঙ্গী রূপে। যৌনতা মানুষের জৈবিক সহজাত প্রবৃত্তি, সেটাকে সুড়সুড়ি দিয়ে রাস্তায় নামানোর প্রয়োজন নেই।

নারীদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি অনেক আছে, যা কাজে লাগিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যায়। তাই অশ্লীল ভঙ্গির নগ্নতা যেন সস্তা জনপ্রিয়তার মাপকাঠি না হয়ে ওঠে, সে দিকে নারীদেরই সচেতন হতে হবে।

মিডিয়ার অনেকেই ওজন কমিয়ে শীতকালে খোলামেলা পোষাকে উষ্ণতা ছড়াচ্ছেন। অথচ কে না জানে, সস্তা জনপ্রিয়তা ক্ষণিকের, কিন্তু যোগ্যতা, দক্ষতার গুরুত্ব আজীবন থেকে যাবে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে ভাবা হয় আয়ের উৎস। তার দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জন করছেন চলচিত্র নির্মাতারা। নায়িকারাও আয়ের পথ হিসেবে সহজ রাস্তাটাই বেছে নিচ্ছেন। পরিচালকরা আর্ট ফিল্মের চেয়ে কমার্শিয়াল ফিল্ম তৈরি করতে উৎসাহ পান বেশি। কারণ বেশিরভাগ দর্শকই সিনেমা হলে যান বিনোদনের জন্য। আর সেখানে যদি নারীর অশ্লীলভাবে নগ্নতার প্রকাশ না ঘটে, তাহলে তারা কেন যাবেন? তাই সিনেমার পরিচালকরাও হয়তো চান, নায়িকারা একটু খোলামেলা পোষাকে অশ্লীল ভঙ্গিতেই ক্যামেরার সামনে আসুক। নায়িকারা চান সস্তা জনপ্রিয়তা এবং কম সময়ে অনেক উপার্জন। তাই অনেকেই পরিচালকদের কথা অনুযায়ী অভিনয় করছেন।

পরিচালকের সঙ্গে বিছানায় গিয়ে সিনেমাতে সুযোগ নিচ্ছেন। যার যা দেখানোর আছে তাই তো দেখাবে। উচ্চসিঁড়িতে পৌঁছানোর জন্য এটাই সহজ রাস্তা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের ভাবা হয় পুরুষদের মনোরঞ্জন করার অবজেক্ট।

দিনশেষে নারীদের ঘরে ফিরতে হয়, তাদের সংসারের যাবতীয় কাজ করতে হয়। সন্তান লালন-পালন করতে হয়। অনেক পরিবারে নারীদের আয়ে সংসার চলছে। তারা তাই সহজ পথ হিসেবে নিজের শরীরকে পুঁজি করে সস্তা বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে।

আধুনিক নারীবাদীরা মনে করেন, ব্যক্তি স্বাধীনতা মানে পোষাকের স্বাধীনতা, নগ্নতা ছড়িয়ে দেওয়া, অশ্লীলতা, যৌন আবেদন সৃষ্টি করা। অশ্লীলভাবে নগ্নতা নাকি একটা আর্ট, এসব চোখে দেখার মতন মানসিকতা থাকতে হয়। যে, যে পোষাক পরে না, তার কাছে নাকি সেটাই অশ্লীল। সাগর পাড়ে অশ্লীল পোষাকে বাংলাদেশের নারীদের দেখলে তাদের কাছে মনে হয়, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যারা এসবের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের ভাবা হয় নগ্ন মস্তিষ্ক এবং বিকৃত চিন্তাধারার। যারা অশ্লীল ভঙ্গিতে নগ্নতা ছড়ালো, তারা তাদের কাছে জনপ্রিয়।

সবশেষে বলতে ইচ্ছে করছে, নারীদের মানসিক চিন্তা শক্তির বিকাশ ঘটানো খুবই প্রয়োজন। দৃষ্টিকটু লাগে এমন অশালীনভাবে পোষাক পরা উচিত নয়। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, জনপ্রিয়তার চোরাগলিতে চলা অশ্লীলভাবে নগ্ন হয়ে সে নায়িকারা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন একদা, তাদেরও কাউকে কাউকে পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, সিনেমা ছেড়ে হিজাব, বোরখা পরতে। এমনকি হজ করে এসে হাতে তসবিহ জপতেও দেখা গেছে। এই স্ববিরোধী আচরণকে ভণ্ডামি বললে কি খুব অত্যুক্তি হবে?

নারীদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি অনেক আছে, যা কাজে লাগিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যায়। তাই অশ্লীল ভঙ্গির নগ্নতা যেন সস্তা জনপ্রিয়তার মাপকাঠি না হয়ে ওঠে, সে দিকে নারীদেরই সচেতন হতে হবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ