রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে নারীর মৃত্যু: নেপথ্য কারণ
রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে কোনো নারীর মৃত্যু এই প্রথম নয়। বরং নারীর শুধু মৃত্যুই ঘটে না রিকশা, ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে অনেক নারী এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছে। এমন নজিরও অসংখ্য আছে। ২০১৭ সালের সিআরপির তথ্য অনুযায়ী, ইজিবাইকে ওড়না পেঁচিয়ে ৩৬ জন নারী মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় সবচেয়ে বেশি এমন দুর্ঘটনার হার। দুর্ঘটনায় পড়া বেশির ভাগ নারীর বয়স ২০ বছরের নিচে। পরিসংখ্যান বলে, দুর্ঘটনার শিকার ২৩ জন নারীর বয়স ২০-এর নিচে আর ১৩ জনের বয়স ২০-এর ওপরে। এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। নারীদের এরূপ মৃত্যু বা এভাবে শারীরিক অক্ষমতা কখনোই কাম্য নয়। গত ২০ ডিসেম্বর কান্দি উপজেলার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশিতা আক্তার মামির সঙ্গে নানার বাড়ি যাওয়ার পথে রিক্সার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে যায়। এতে নিশিতা রিক্সা থেকে সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এভাবে নারীর মৃত্যুর সংখ্যা খুব একটা কম নয় তবু নারীরা আজও এ সম্পর্কে সচেতন নয়!
রিকশা বা ইজিবাইকের চাকায় ওড়না জড়িয়ে নারীর মৃত্যু ঘটছে৷ এর জন্য নারীদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। ওড়না সম্ভ্রম রক্ষার নামে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে৷ বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজে নারীর পোশাক জীবনচলার পথে অনেক সময় নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে। সবসময় সচেতন দৃষ্টি রেখে চলা হয়তো কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না তবে সচেতন না হলে এভাবেই জীবন হারাতে হবে। নতুবা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে৷ শুধু রিক্সা বা ইজিবাইকের ক্ষেত্রেই নয় গণপরিবহনগুলো অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নিয়ে কোন স্পপজেই দাঁড়ায় না এমনকি রানিং অবস্থায় খুব দ্রুত পরিবহনে উঠা-নামা করতে হয় ।
সেক্ষেত্রে বোরখা, লং ড্রেস, শাড়িতে নারীরা খুব একটা সুবিধাবোধ করে এমন নয়৷ তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যেহেতু রক্ষণশীল মনোভাবের অধিকারী ফলে নারীর সুবিধা-অসুবিধা তাদের কাছে গ্রহণীয় নয়। সে যাইহোক মোদ্দা কথা হলো, নারীর পোশাক যদি তার জন্য মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয় তবে সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। হয় যেটাকে সামলানো মুশকিল সেটা পরিহার করতে হবে নতুবা এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ এমনকি প্রাণ হারাতেও হতে পারে।
বর্তমান সময়ে নারীরা জীবন সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। তবে সেই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে জীবনের সর্বত্রই। শুধু কিঞ্চিৎ প্রাপ্তির জন্য জীবনকে হুমকির মুখে ফেলা উচিত নয়। ওড়না, শাড়ি বা যেকোনো লং ড্রেস পরিধান করতে হলে আগে নারীকে ব্যালেন্স করতে হবে। সাবধান হতে হবে। যাতে অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনার শিকারে পরিণত না হতে হয়। যেহেতু পরিবহন পরিবর্তন করার সুযোগ নারীর হাতে খুব একটা নেই তাই নারীদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে।
নিজের সেফটি আগে মাথায় রাখতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় নিশিতা আক্তারের মতো অকালে আর কোন নারী প্রাণ না হারাক, পঙ্গুত্ব বরণ না করুক। নারীরা নিজেদের প্রতি সচেতন হোক। চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যেকোনো জিনিস পরিহার করতে শিখুক। নিজের ভালোত্বকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সে মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক। মনে রাখতে হবে, জীবনের মূল্য অনেক। মানবজন্ম একটায়। ফলে নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে, অসতর্ক হয়ে এমন কিছুই করা যাবে না, যার ফলে বিপদে পড়তে হয়! তাই নারীদের অবশ্যই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে৷ সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে এ বিষয়ে নারীদের সচেতন করে তুলতে উদ্যগ গ্রহণ করতে হবে৷ যতই সময়ের স্বল্পতা হোক বা তাড়াহুড়ো হোক যাতায়াতের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। নারীরা সচেতন হোক। সুস্থ, সুন্দর এবং কল্যাণের পথে এগিয়ে যাক। তাদের জয় প্রতিধ্বনিত হোক বিশ্বপরিমণ্ডলে।