নারীর চলার পথের প্রতিবন্ধকতা দূর হোক
ঘটনা-১
ছুটির দিনে কবিতা আবৃত্তির ক্লাস হচ্ছে ৷ হঠাৎ পাশে বসা আপুর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো, সম্ভবত বাসা থেকে ফোন এসেছে ৷ পরে শুনলাম তার স্বামী ঘুম থেকে উঠে কী নাস্তা খাবেন, তাই জানার জন্য ফোন করেছেন। বাসায় তো অনেক কিছুই থাকে। একটা কিছু খেয়ে নিলেই হয়। তার জন্য তো ফোন দেওয়ার দরকার পড়ে না ৷ ফোন করার তো দরকার নেই, কারণ তিনি তো জানেনই তার স্ত্রী কোথায় গেছেন।
ঘটনা-২
নিশি পড়াশুনার পাশাপাশি একটা চাকরি করে পার্টটাইম ৷ ভার্সিটির হলের গেট বন্ধ হয় রাত সাড়ে আটটায় ৷ যানজটের শহরে প্রায়ই তার আসতে দেরি হয় ৷ দারোয়ানের কাছে সব সময় তার অনুরোধ করতে হয়, হলে ঢোকার জন্য ৷ এই টাইমটা একটু বাড়ালে খুব কি ক্ষতি হয়?
ঘটনা-৩
রেখার স্বামী বিদেশে থাকে ৷ ছোটবেলা থেকে সে গান করে ৷ বিয়ের পর থেকে গানের চর্চাটা কমে যায় ৷ তারপর সন্তানের জন্ম ৷ বেশ কিছুদিন পর তার মনে হয় গান আবার শুরু করা দরকার ৷ সে আবার একটি গানের সংগঠনের সাথে যুক্ত হয় ৷ কিন্তু তার স্বামী বিষয়টি পছন্দ করছেন না ৷ অনুষ্ঠানে থাকলে তার মোবাইলফোন বন্ধ রাখতে হয় ৷ যখন রেখাকে তার স্বামী ফোনে পান না, তখন খুবই বিরক্ত হন ৷ বাসায় ফিরে রেখা যখন ফোন করে তখন অনেক নোংরা কথা শুনতে হয় ৷ তবুও মানসিক অশান্তি নিয়েই রেখা এগিয়ে যায় ৷
ঘটনা-৪
ফাহিমা চাকরি করছে একটি এনজিওতে ৷ বাচ্চা কনসিভ করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে তার চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয় ৷ বাচ্চা হওয়ার দুই বছর পর সে আবার চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ কিন্তু তার স্বামী চায় না যে, সে চাকরি করুক ৷ তবুও ফাহিমা নতুন চাকরির খোঁজ করছে ৷
ঘটনা-৫
দিপাবলীর বিয়ের পর থেকে দেখে আসছে তার স্বামী নেশা করে এবং তাকে শারীরিক নির্যাতন করে ৷ তাদের ৫ বছরের একটি পুত্র আছে ৷ অনেকদিন সহ্য করার দিপাবলী সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর এই সংসারে থাকবে না ৷ তাই বাবার বাড়িতে চলে যায় এবং একটি স্কুলে চাকরি নেয় ৷ পরে মহিলা পরিষদে নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে স্বামীর কাছে ভরণপোষণের দাবি করে ৷
ঘটনা-৬
সম্পা অনেকদিন ধরে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছে ৷ বয়সও বেড়ে গেছে, বিয়ে করা হয়নি ৷ ছোট ভাই-বোনরা যার যার পছন্দমতো বিয়ে করে সংসারী হয়েছে ৷ পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধবীরা তার বিয়ে নিয়ে কানাকানি করে ৷ সে মানসিকভাবে হতাশায় ভোগে ৷ কিন্তু কী করবে, ভেবে পায় না ৷ বাবা-মা দুশ্চিন্তায় থাকে ৷ ভবিষতের দিনগুলো একাই কাটাতে হবে ভেবে সঞ্চয় করতে থাকে ৷
ওপরের সব ঘটনা বাস্তব জীবন থেকে নেয়া ৷ এরকম অনেক ঘটনা আছে ৷ নারীদের ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করতে গেলেই পারিবারিকভাবে বাধার সম্মুখীন হয় ৷ কখনো বাবা-মা, কখনো স্বামী, কখনো পরিবারের অন্যরা দ্বিমত পোষণ করে ৷ কখনো পারিবারিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয় ৷ আবার কখনো সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় ৷ নারী ঘরের কাজ করে যদি নিজের যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী কোনো কাজ করতে চায়, তাহলে সমস্যা কোথায়? নারীদের যদি পরিবারের মানুষগুলো সহযোগিতা করে নারী আত্মনির্ভরশীল ও সাংস্কৃতিক চর্চায় এগিয়ে যেতে পারবে ৷