স্তন ক্যানসার রোগী বাড়ছে: প্রয়োজন সচেতনতা
দেশে দিনে দিনে ক্যন্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজধানীর ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা নারীর মধ্যে ২৯.৩ শতাংশ রোগী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। দিনকে দিন নারীদের শরীরে এই রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে নারীদের মধ্যে নেই তেমন কোনোই সচেতনতা! বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অডিটোরিয়াম ভবনে সপ্তম ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্যানসার ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের ৫৫ শতাংশই নারী। বাকি ৪৫ শতাংশ পুরুষ। নারী-পুরুষ উভয়ের সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যানসার। তবে নারীদের মধ্যে বর্তমান সময়ে স্তান ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নারীদের সচেতন হতে হবে। যদি নারীরা এখনই নিজেদের সম্পর্কে সচেতন না হন তবে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহতার সম্মুখীন হতে হবে!
বিশ্বে নারীদের ক্যানসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা এক নম্বরে রয়েছে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যানসার। তবে উন্নত বিশ্বে নারীরা সচেতন হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়েদ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। ফলে অধিকাংশই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অসচেতন। এর ফলে শরীরে কোন রোগ দেখা দিলে সে সম্পর্কে তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণই করেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে শতকরা ৬৫ ভাগ স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। এ কারণে সেখানে ব্রেস্ট ক্যানসারজনিত মৃত্যু অনেকটা কমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। এর কারণ অনেক দেরিতে ও শেষপর্যায়ে এসে ক্যানসার ধরা পড়া। বিগত পাঁচ বছরে আমাদের দেশে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া ও রোগ শনাক্ত হওয়ার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের দেশে দেরিতে ডায়াগনোসিস হওয়া আর লাস্ট স্টেজে চিকিৎসা নিতে আসার পেছনে অন্যতম কারণ রোগী ও তার পরিবারের অজ্ঞতা এবং অসচেতনতা।
স্তন ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে নারীদের সচেতন হতে হবে। মূলত স্তন ক্যানসারে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে- পিন্ড অনুভব করা যা ব্যথাহীন ও খুব দ্রুত আকারে বেড়ে যাওয়া ,স্তনের ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন যেমন চামড়া কুঁচকে যাওয়া, কমলার খোসার মত ছোট ছোট ছিদ্র দেখা দেয়া, চামড়ায় টোল পড়া, দীর্ঘস্থায়ী ঘা ইত্যাদি ,নিপল (বোঁটা) দিয়ে রস নিঃসরণ হওয়া বা রক্তপাত হওয়া, নিপল ও তার আশেপাশের কালো অংশা ফুঁসকুড়ি ও চুলকানি হওয়া, স্তনে দীর্ঘদিন ব্যথা অনুভূত হওয়া, স্তনের আকার পরিবর্তন হওয়া, গলার কাছে অথবা বগলে চাকা অনুভব করা, স্তনের বোটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া অথবা বোটা দিয়ে পুঁজ নির্গত হওয়া। প্রভৃতি অস্বাভাবিক কোন লক্ষণ চোখে পড়লে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। মাসান্তে নির্দিষ্ট সময়ে একবার শরীরের এই অংশ পরীক্ষা করতে পারেন নারীরা নিজেই। সবচেয়ে উত্তম সময় পিরিয়ড শুরুর ৫-৭ দিন পর। যখন স্তন নরম ও কম ব্যথা থাকে।
লজ্জা, সংকোচ বা গুটিয়ে থাকলে জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় কিছু জানা থেকেই মানুষ পিছিয়ে থাকে। ফলে যেখানে জীবনের সুরক্ষা জড়িত সেখানে কোনভাবেই নারীদের লুকোচুরি সাজে না। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে তাই সচেতন হতে হবে। সমস্যার সম্মুখীন হলে দ্রুত তা প্রতিরোধে করণীয় কী সে সম্পর্কে অবগত হতে হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল এবং ইসলাম প্রধান দেশগুলোতে নারীকে সববিষয়ে খুব লুকিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। নারীর চিরন্তন বিষয়গুলো নিয়েও সবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন না। এর ফলে প্রতিনিয়ত নারীরা নিজেদের গুটিয়েই রাখতে পছন্দ করেন। এমনকি শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধলেও সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করতেও দ্বিধায় থাকেন। যার ফল হয় ভয়াবহ। তাই সংকোচ নয়, লজ্জা নয়। যেখানে জীবনের প্রশ্ন জড়িয়ে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্ন সেখানে নারীকে জাগতেই হবে। নিজের প্রতি সচেতন হতে হবে। আর সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য করণীয়গুলো পালন করতে হবে।