যেভাবে নেবেন বিয়ের প্রস্তুতি
সাধারণত শীতকালকে বলা হয় বিয়ের ঋতু। কারণ এই সময়ে বিয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিয়ের মাধ্যমেই একজন নারী ও একজন পুরুষের ভিন্ন এক যাত্রা শুরু হয়। বিয়ে হচ্ছে এমন কিছু সামাজিক নিয়মনীতি ও আইন-কানুন, যা স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য ও সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মূলত বিয়ে হচ্ছে একটি অনুমোদিত সামাজিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দুজন নারী-পুরুষ একটি পরিবার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এই বিয়ের ঋতুতে প্রস্তুতি হিসেবে কি করা যায় তাই নিয়ে আমাদের আয়োজন।
পরিকল্পনা
কথায় আছে, পরিকল্পনা হলো কাজের অর্ধেক। আর ছোট পরিকল্পনা মানেই বড় কাজের সফলতা। সুতরাং বিয়ের আগে পরিকল্পনা জরুরি। বিয়ে মানেই কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়াসহ নানা আয়োজন। তাই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগে অবশ্যই পরিকল্পনা করাটা জরুরি। আর আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখলে বিয়ের আয়োজন যেমন ঝামেলাবিহীন হবে, তেমনি খরচও কমানো সম্ভব।
বর-কনের পোশাক
বিয়ের আয়োজনে অগ্রাধিকার পাবে বর-কনের পোশাক, গহনা বা প্রসাধনী কেনাকাটা। এসব জিনিস কেনাকাটার আগে তালিকা তৈরি করা উচিত। সেই সঙ্গে কোন জিনিসটা কোন দামের বা কোন ব্র্যান্ডের কিনবেন, তারও একটি তালিকা করে রাখা ভালো। সম্ভব হলে কোন এলাকা বা কোন মার্কেট থেকে কিনবেন, সেটাও লিখে রাখতে হবে। এ ছাড়া সব কেনাকাটার মধ্যে বর-কনের পোশাক একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পোশাকেই বর-কনে হয়ে উঠবেন উজ্জ্বল।
গহনা
বিয়ের মূল আয়োজনে গহনা অন্যতম অনুষঙ্গ। কারণ গহনা ছাড়া কনের সাজই হয় না। এ ছাড়া ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতেও বিয়ের গহনার রয়েছে আলাদা মূল্য। স্বর্ণের বিয়ের সেট পাওয়া যায়। চাইলে আলাদা করে বানিয়ে বা কিনে নেওয়া যায়। আজকাল ডায়মন্ডের ব্যবহারও বেশ চলছে।
বিয়ের খাবার
বিয়ে মানেই খাওয়ার ধুম। খাবার-দাবারে মিশে থাকে আয়োজনের সম্মান বা পারিবারিক ঐতিহ্য বা সামাজিক রীতিনীতি। সেজন্য খাবার বিষয়টি খুবই জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে সবার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হয় খাবারের মেন্যুতে কী কী থাকবে বা রাখবেন। প্রয়োজনে খাবারের মেন্যু নিয়ে দুই পরিবার আগেই পরিকল্পনা করতে পারেন। এতে দুই পরিবারেরই মঙ্গল। বাবুর্চি ও ক্যাটারিং সার্ভিসের কাছে লোক সংখ্যা আর মেন্যুও কথা বললে তারাই আপনাকে খাবারের খরচ সম্পর্কে ধারণা দেবেন।
বিয়ের সাজসজ্জা
বিয়ের আয়োজনে সাজসজ্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় কম টাকায় ভালো সাজ করা যায়। আবার অনেক সময় বেশি টাকা খরচ করেও মনমতো সাজ পাওয়া যায় না। এখন অনেক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বিয়ের আয়োজনের সব রকম ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তাদের কাছ থেকেও সেবা নিতে পারেন। আবার নিজেরাও করতে পারেন। মূলত হলুদের স্টেজই প্রাধান্য পায়। এখানেও অনেক বর-কনে দুই বাড়িতেই একই নকশার হলুদের স্টেজ করে থাকেন। অনেকে আলাদাও করেন।
আমন্ত্রণপত্র
আমন্ত্রণপত্র ছাড়া বিয়ে একটু অসম্পূর্ণই লাগে। বিয়ের আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আমন্ত্রণপত্র। আর বিয়ের আমন্ত্রণপত্র কেনা, সেটা ছাপানো ও বিলি করা কনে বা বর পক্ষের অন্যতম কাজ। এছাড়া শুধু দামি কার্ড কিনলেই হবে না। সেটা সুন্দর ও নির্ভুল করে ছাপাতেও হবে। আর সেজন্য চাই পর্যাপ্ত সময়। অন্যদিকে শীত মৌসুমকে বিয়ের মৌসুম বলা হয় বলে এ মৌসুমে কার্ড বেশি চলে। কার্ড যেটাই কিনুন সময় নিয়ে কিনুন, যেন ছাপানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে। আর ছাপাটা যেন নির্ভুল হয়, সেদিকেও খেলার রাখাটা জরুরি। আমন্ত্রণপত্র বিলি করার আগে অতিথিদের তালিকা তৈরি করুন। কাঠের, কাপড়ের অনন্য ডিজাইনের আমন্ত্রনপত্র পাওয়া যায়।
ছবি বা ভিডিও
বিয়ের দিনের স্মৃতি সবাই চায় স্থিরচিত্রে আবদ্ধ করে রাখতে। আর বিয়ের ছবি তোলা বা ভিডিও করার জন্য অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বা ফটোগ্রাফার পাবেন আশপাশে। আজকাল কেবল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার ছবির সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রি-ওয়েডিংয়ের ছবি। মানে গায়ে হলুদ বা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই বর-কনে পার্ক বা রেস্টুরেন্ট বা পছন্দের জায়গায় ছবি তোলেন। আবার আজকাল তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আলাদা মাত্রা হয়েছে। সবাই এখন হলুদের অনুষ্ঠানে নাচ-গানে বড় আয়োজন করেন।
বিয়ের স্থান
বিয়ের স্থান হিসেবে অনেকেই কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল বা হোটেল বেছে নিচ্ছেন। অন্যদিকে গ্রাম-গঞ্জে এখনো নিজেদের বাড়ির উঠান বা মাঠেই সারছেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। তবে কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল বা হোটেল ভেন্যু হিসেবে নিলে আগে থেকেই ভেন্যু বুক করুন।
ত্বকের যত্ন
সবাই চান তার বিয়ের আয়োজন যেন সুন্দর হয়। আর সে ক্ষেত্রে সব নারী-পুরুষেরই উচিত অন্তত কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। এর মধ্যে নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়াটাও জরুরি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিউটি টিপস ফলো করতে পারেন। চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার।
গুছিয়ে কাজ করুন
বিয়ের আয়োজনে বরের বাড়ির যেমন কিছু নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানিকতা আছে, তেমনি কনের বাড়িরও কিছু নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা আছে। এ কার্যক্রমগুলো আগে থেকেই দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা করে নেওয়া ভালো। গুছিয়ে কাজ করলে তাতে গড়বড় হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
অনন্যা/নুর/