পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর স্থান!
পৃথিবীর বিভিন্ন গভীর স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গভীরতম স্থান হলো মারিয়ানা খাত। জায়গাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কি.মি গভীরে। বলা হয়ে থাকে এখানে সূর্যর কোনো আলো পৌঁছায়নি। অবাক এই বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে টেকটনিক প্লেট পরিবর্তন হওয়ার কারণে।
মারিয়ানা খাত প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে অবস্থিত। দ্বীপগুলোর নামানুসারে মারিয়ানা খাত বা ট্রেঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে অবস্থিত। এটি ২,৫৫০ কিমি লম্বা এবং ৬৯ কি.মি. চওড়া। এখানকার গভীরতম অংশকে বলা হয় চ্যালেঞ্জার ডিপ। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি প্রায় ১১ কিলোমিটার গভীর। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো এর সঠিক গভীরতা নির্ণয় করতে সক্ষম হননি। তারা বলে এই জায়গাটা আরও গভীর হতে পারে!
‘এইচএমএস চ্যালেঞ্জার ২’ নামক একটি জাহাজের নাবিকরা ১৯৪৮ সালে পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু আবিষ্কার করেছিলেন। তাই জাহাজটির নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ রাখা হয়েছে। চ্যালেঞ্জার ডিপ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের দক্ষিণে অবস্থিত। এখানে পানির চাপ প্রায় ১০০০ বার! এ কারণে এখানে পানির ঘনত্ব বেশি। এই অংশে জলের তাপমাত্রা ১-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে চ্যালেঞ্জার ডিপ যেকোনো মানুষের জন্যই বিপজ্জনক জায়গা। পানির চাপে এখানে সাধারণ সাবমেরিন চলতে পারে না।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে নিকটবর্তী মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের নামে, যার নামকরণ স্পেনের চতুর্থ ফিলিপের বিধবা রানি মারিয়ানা অব অস্ট্রিয়ার সম্মানে লাস মারিয়ানা করা হয়েছিল। খাদটির পশ্চিম দিকে দ্বীপগুলি একটি দ্বীপের আর্কের অংশ যা একটি টেকটনিক প্লেটের ওপর গঠিত। যাকে বলা হয় মারিয়ানা প্লেট। মারিয়ানা খাতের শেষ সীমায় তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করে ১ ডিগ্রি থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। এই অংশে জলস্তম্ভের চাপও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে এই চাপের পরিমাণ প্রায় ৮ টন। সমুদ্রতলে স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তুলনায় এই পরিমাপ প্রায় হাজার গুণ বেশি। মারিয়ানা খাতে গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এই জলস্তম্ভের চাপ।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে যখন দু’টি টেকটনিক পাতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন একটি পাত দ্বিতীয়টির নিচে ঢুকে গেলে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো গভীর সামুদ্রিক খাতের সৃষ্টি হয়। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের তুলনামূলক অগভীর অংশে অ্যাম্ফিপড এবং হলোথুরিয়ান্সের মতো সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, প্রাণীবিজ্ঞানের আরও অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে মারিয়ানা খাতের নিকষ অন্ধকারে। চরম পরিবেশে কী করে প্রাণীগুলি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, সেই রহস্য জানা গেলে বায়োমেডিসিন ও বায়োটেকনোলজির অনেক বন্ধ দরজা খুলে যাবে।
পৃথিবীর অদ্ভুত এই রহস্য শেষ কোথায় সে উত্তর জানা নেই কারো। বিষদ এই ব্রহ্মাণ্ডে একবিন্দু পরিমাণ জ্ঞানের অধিকারী যেন মানুষ এখনো হয়ে উঠতে পারেনি। মারিয়ানা খাতের অন্ধকার ভবিষ্যতে আলো ফেলতে পারে পৃথিবীতে প্রাণসৃষ্টির রহস্যের ওপরেও। তবে দূষণের হাত থেকে রেহাই পায়নি এই গভীর বিন্দুও। এখানেও পাওয়া গেছে প্লাস্টিক!