প্রাক্তন কি প্রতিপক্ষ
‘প্রাক্তন’ শব্দটি শুনলে সবার মাথায় কিছু তিক্ত কথা ভেসে বেড়ায়। অতীতের নানা কথা চেপে ধরে মানুষকে। কিন্তু এসবের মাঝেও কিছু মানুষের কাছে প্রাক্তন স্বস্তিরও নাম। প্রাক্তন প্রতিপক্ষ কি না, তা নিয়ে যদি কথা বলা শুরু করা যায় তাহলে সেটি বিতর্কের সৃষ্টি করবে।
তাহলে একটি গল্প বলা যাক, অর্ণব ও ফারহান দুজন ভালো বন্ধু। শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের থেকে একটু বেশি ছিল। তাদের সম্পর্ক ছিল প্রতিশ্রুতির। ৫ বছরের প্রেম ছিল তাদের কিন্তু সম্পর্কের পরিণতি ছিল বিচ্ছেদ। বিচ্ছেদের কারণ ছিল পরিবার।
ফারহান ও অর্ণবের সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে। বিচ্ছেদটাও হয়েছিল প্রতিশ্রুতির জন্য। পারিবারিক নানা সমস্যা তাদের মধ্যে দূরত্ব এনে দিয়েছিল। একে-অপরের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে প্রায় অনেক বছর তাদের দেখা-সাক্ষাত নেই। কোন যোগাযোগ নেই। দুজনই এগিয়ে গিয়েছে নিজেদের জীবনে। বিচ্ছেদের ছয় মাসের মধ্যে বিয়ে করে ফারহান। আর অর্ণব ব্যস্ত থাকে পড়াশোনাতে। নিজের পড়াশোনায় তাকে ভুলিয়ে যেতে সাহায্য করে ফারহানকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্টগুলো।
অর্ণব আজ নিজের জীবনে অনেকটাই এগিয়ে। এরই মাঝে একদিন নিজের জীবনের গল্প তার চোখের সামনে ভেসে আসলো। তার খুব কাছের একজন প্রিয়জনকে হারিয়ে নিজেকে সামলাতে পারছে না। এমন সময় অর্ণব নিজেকে তার পুরনো জায়গায় বসিয়ে নতুন করে গল্পটা ভাবার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পরে সে তার প্রিয়জনকে বললো ‘সময় সব ক্ষত পূরণ করে দেয়, আজ যে তার প্রিয় কাল সে তার অপরিচিত’ তাই নিজেকে নিজের জন্য তৈরি করা। সেইসঙ্গে নিজেকে তৈরি করা যাতে প্রাক্তন সামনে আসলে তার অতীত তাকে আঁকড়ে ধরতে না পারে। পাঁচ বছর পরে তার প্রাক্তনকে সামনে দেখলে মুখ ফিরিয়ে যেতে হবে নাহ। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতে অন্তত পারবে।
দিনশেষে ছোট্ট একটা শহরে আজ নয়তো কাল প্রাক্তনের মুখোমুখি সবারই হতে হয়। তাই প্রাক্তনের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক না করে একে-অপরের সঙ্গে একটা মিষ্টি সম্পর্ক রাখা ভালো। প্রাক্তনকে প্রতিপক্ষ না ভেবে বন্ধু ভেবে তাকে এগিয়ে যেতে দেওয়া উচিত। অর্ণব ও ফারহান দুজনে আজ নিজেদের জীবনে ভালো আছে, সুখী আছে। তাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হলে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে হয় না। নিজেদের ভালোমন্দ নিয়ে কথা বলতে পারে তারা।
একজন ভালো বন্ধু সারাজীবন পাশে থাকে। একজন প্রাক্তনও একজন মানুষের ভালো বন্ধু হতে পারে। তাই প্রাক্তনকে প্রতিপক্ষ ভেবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি না করে বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতায়ই সম্পর্কে তিক্ততা দূর করতে পারে। এক সময়ের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা মানুষটা তার বিপরীতে থাকা মানুষটাকে যত ভালো করে বুঝবে তা অন্য কেউ বুঝবে না। আমাদের সমাজে প্রাক্তনকে সবসময় প্রতিপক্ষই ভাবা হয় কিন্তু সেটা ঠিক না। প্রাক্তন বন্ধু হয়েও থাকতে পারে জীবনে।