Skip to content

১৮ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিছিয়ে পড়া নারীরা স্বাস্থ্য সচেতন হোক

পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের ফলে সমাজ টিকে আছে। যদিও নারীর অংশগ্রহণের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি সমাজ বা ইতিহাসে দেওয়া হয়নি বললেই চলে। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে বংশপরম্পরা রক্ষায় নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। বরং নারীরা নিজেদের জীবনের সর্বোচ্চ দিয়ে সন্তান, পরিবার, পরিজনদের রক্ষা করে চলেছে। মায়া, মমতা, ভালোবাসার বন্ধনে সংগঠিত করে চলেছে পরিবার প্রথার। তবে যেই নারীরা সমাজকে সজীব রেখেছে, পরিবারিক বন্ধন প্রগাঢ় করেছে, তারাই নিজেদের সম্পর্কে সবচেয়ে অসচেতন।

শারীরিক শক্তির দিক থেকে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশ দুর্বল। এর কারণ হিসেবে দেখলে বলা চলে, আজ অবধি নারীরা পরিবারকে গুরুত্ব দেন বেশি। পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের প্রতি নজর দিতে গিয়ে নারীরা নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুলে যান। এমনকি পুষ্টিকর খাবার যে তার শরীরকে সুস্থ রাখতে সমান প্রয়োজন সেদিকেও নজর দেন না। শুধু তাই নয় বাড়িতে ভালো খাবার রান্না হলে তার বেশিরভাগই পরিবারের সদস্যদের মাঝে বণ্টন করে দেন। নারীদের এই ঔদার্য, ভালোবাসায় কুর্নিশ মিললেও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নারীরা ক্রমাগত ভঙ্গুর হয়ে পড়েন।

শহরাঞ্চলের নারীদের চেয়ে গ্রামাঞ্চালের নারীরা নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। বিশেষ করে গ্রামের অবহেলিত নিপীড়িত নারীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত। দারিদ্র্যের কষাঘাতে যাদের জীবন বিপর্যস্ত তারা স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভাবার অবকাশই পায় না। সংসার-সন্তানের দেখভাল করতে গিয়ে বেশিরভাগ নারীই নিজের প্রতি উদাসীন থাকে। আর পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর গ্রামীণ নারীরা অশিক্ষা, অজ্ঞাতার কারণে বুঝে উঠতেই পারে না তাদের করণীয় কী।

নারীরা অনেক জটিল সমস্যায় ভোগেন শুধু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে। লজ্জা, সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারলে যেগুলো থেকে খুব সহজেই মুক্তি মিলতে পারে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া এসব নারীরা একদিকে নিজেদের প্রতি উদাসীন তারওপর লজ্জা, সংকোচ, সঠিক পরামর্শের অভাবে অসুখ জিইয়ে রাখেন। যার ফল একসময় ভয়াবহ রূপ নেয়।

অনেক রোগ নির্মূল করা সহজ হলেও শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে প্রকট আকার ধারণ করে এসব রোগ। আমাদের দেশে নারীরা বিশেষ করে মেয়েলি রোগ বা স্ত্রী রোগ সম্পর্কে বেশি লজ্জা, সংকোচ ও অসচেতন। অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে লজ্জা, সংকোচ আরও বেশি। শহরাঞ্চলের নারীদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন ঘটলেও গ্রাম পর্যায়ে পিছিয়ে পড়া এসব নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে শরীরে রোগ বাসা বাঁধলে সে সম্পর্কে কোনোই পদক্ষেপ নেন না।

নারীরা যেহেতু গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানে সক্ষম, সেহেতু কিছু স্ত্রী রোগ নারীর শরীরে সহজেই দেখা দিতে পারে। ঋতুস্রাব জনিত সমস্যা, জরায়ুতে টিউমার, জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া, সাদা স্রাব, জরায়ু ও স্তন ক্যানসারের মতো ভয়াবহ কিছু রোগ। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করলে সহজেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। তবে গ্রাম পর্যায়ের পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর নারীরা এসব সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে লজ্জা, সংকোচে ভোগেন। ফলে যতদিন তারা ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন না হন, সহ্য ক্ষমতা থাকে ততদিন এ সম্পর্কে উদাসীন থাকেন। এর ফলে যে পর্যায়ে তারা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন বেশিরভাগেরই দেখা যায় রোগটা দীর্ঘদিনের। তাই আরোগ্য লাভ করার সম্ভাবনাও কমে যায়। যা প্রাথমিক পর্যায়ে সহজ ছিল শুধু অবহেলা এবং অসচেতনতার কারণে জটিল হয়ে পড়ে।

পিছিয়ে পড়া নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব নারীদের সঙ্গে উঠোন বৈঠক, খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। তাদের জড়তা, সংকোচ কাটিয়ে যাতে সমস্যার সম্মুখীন হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করেন সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে। মাসান্তে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা বিষায়ক ক্যম্পেইন করতে হবে।

তাদের পুষ্টিকর খাবার, সুস্থ জীবনযাপন, পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। গ্রামের এসব নারীদের শরীরে পুষ্টিকর খাবার যোগান দেওয়ার চেয়ে পরিশ্রমের মাত্রা বেশি। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। তাই পিছিয়ে পড়া এসব নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানতে হবে। একজন শিক্ষিত, সচেতন, সুস্থ মায়ের দ্বারাই পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ, সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ পেতে এই নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। রোগ নির্ণয়, সময়মতো চিকিৎসা প্রদান, সুস্থ প্রজন্ম, সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে তাই এসব নারীদের স্বাস্থ্য সচেতন করার দায়িত্ব নিতে হবে সবার।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ